রোযা অবস্থায় হস্ত মৈথুন দ্বারা বীর্যপাত ঘটালে বা গোসলের সময় ডুব দিয়ে পানি পান করলে কাফ্ফারা কি ওয়াজিব :-
প্রশ্নঃ এক ব্যক্তি রমযান মাসে রোযা রাখা অবস্থায় হস্ত মৈথুন বা কোন এক মহিলার অঙ্গে হাত দিয়ে স্পর্শ করেছে। ফলে তার ইনজাল অর্থাৎ, বীর্যপাত হয়ে গিয়েছে, এমতাবস্থায় কি তার রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাফ্ফারা জরুরী হবে?
👉এক ব্যক্তি রোযা রাখা অবস্থায় সাঁতার শিখতে গিয়ে ডুব দিয়ে পানি পান করে ফেলেছে, তার রোযা কি ভেঙ্গে যাবে?
উত্তরঃ হস্ত মৈথুন বা নারী অঙ্গ স্পর্শ করার কারণে বীর্যপাত হওয়ায় রোযা ভেঙ্গে যাবে, তবে কাফ্ফারা জরুরী হবে না, শুধু কাযা করতে হবে।
👉সাঁতার শিখতে গিয়ে নিজের অনিচ্ছায় ডুব দিয়ে পানি পান করে ফেললে রোযা ভেঙ্গে যাবে। কাযা করতে হবে, তবে কাফ্ফারা জরুরী হবে না ।
(ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী: খন্ড-১, পৃষ্ঠা-২০২/২০৫)
রোযার কাফ্ফারার ক্ষেত্রে খুব বেশী বয়স্ক লোককে খাওয়ানো
প্রশ্নঃ বেহেশতী জেওরে রোযার কাফ্ফারার জন্য ষাটজন মিসকীনকে খাওয়ানো সম্পর্কে লেখা হয়েছে যে, এই ষাটজনের মধ্যে কেউ যদি একেবারে ছোট হয়, তাহলে তা জায়েয হবে না। এখন প্রশ্ন হল যে, যদি একেবারে বেশী বৃদ্ধ কিংবা বৃদ্ধা হয়, তাহলে কি জায়েয হবে?
উত্তরঃ বেশী বৃদ্ধ কিংবা বৃদ্ধাকে কাফ্ফারার খানা খাওয়ানো জায়েয আছে।
قُلْتُ وَالْكَبِيرُ وَالْكَبِيرَةُ مِمَّنْ يَسْتَوْفِي الطَّعَامَ عَادَةً وَخِلَافَهُ نَادِرُ .
(ইমদাদুল আহকামঃ খন্ড-২, পৃষ্ঠা-১৩৫-১৩৬)
আরও পড়ুন :- রোজা ও ইফতারের নিয়ত বাংলা ও আরবি।রোজা ফাসেদ হওয়ার ১৭ টি কারণ
রোযা অবস্থায় হায়েয এসে পড়লে বাকী সময় কি মহিলারা পানাহার করতে পারবে ?
প্রশ্নঃ এক মহিলার রোযা রাখা অবস্থায় হায়েয এসে গিয়েছে। এখন বাকী সময় সে কিভাবে কাটাবে? পানাহার করবে, নাকি এমনি রোযাদারের মতই কাটাবে? যদি কিছু পানাহার করে ফেলে, তাহলে কি গুনাহ হবে?
উত্তরঃ হায়েযের অবস্থায় মহিলাদের জন্য রোযাদারের মত থাকা জায়েয নাই; বরং পানাহার করাই তার জন্য সমীচীন। তবে প্রকাশ্য পানাহার করবে না, গোপনে খাওয়া-দাওয়া করবে।
রোযার অবস্থায় তামাক মুখে রাখা
প্রশ্নঃ এক ব্যক্তি রোযা অবস্থায় তামাক মুখে দিয়েছে এবং দুই তিন মিনিট পর কুলি করে ফেলেছে। তবে সে এতটুকু সতর্ক ছিল যে, তামাক তার হলকের নিচে যায় নি। এই অবস্থায় কি তার রোযা ভেঙ্গে যাবে?
উত্তরঃ
তামাক যদি কেউ এমনভাবে ব্যবহার করে যেন তা হলকের নিচে না যায়। তাহলে তার কারণে রোযা ভাঙ্গবে না। যদি সামান্য পরিমাণও হলকের নিচে চলে যায়, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। তবে রোযা রাখা অবস্থায় বিনা প্রয়োজনে তামাক ইত্যাদি ব্যবহার করা মাকরূহ।
(ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী: খন্ড-১, পৃষ্ঠা-২০৩ )
মসজিদে ইফতার করা কি জায়েয?
প্রশ্নঃ মসজিদে ইফতার করলে নামাযের জামাআত পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যাবে। কোন রাকাআত ছুটবে না। উপরন্তু প্রথম কাতারে জায়গা পাওয়া যাবে, এই সমস্ত চিন্তা করে কোন ব্যক্তি যদি মসজিদে ইফতার করে, তাহলে কি কোন অসুবিধা আছে?
উত্তরঃ উপরে বর্ণিত অবস্থায় মসজিদে ইফতার করার অবকাশ আছে । তবে মসজিদের সীমার ভিতর না খেয়ে বাইরে খাওয়া দাওয়া করাটাই সমীচীন হবে। বাইরে যদি উপযুক্ত কোন জায়গা না থাকে, তাহলে মসজিদের ভিতরেও খেতে পারবে এবং খাওয়ার কিছুক্ষণ পূর্ব থেকে ইতিকাফের নিয়ত করে নিবে। ইমাম মুহাম্মদ (রহঃ)-এর নিকট একেবারে অল্প সময়ের জন্যও ইতিকাফ হতে পারে।
(রাদ্দুল মুহতারঃ খন্ড-২, পৃষ্ঠা-১৪৬)
আরও পড়ুন :- কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে - রমজানের ফজিলত সমূহ
রোযার উমরী কাযা
প্রশ্নঃ এক ব্যক্তির যিম্মায় ফরয রোযা বাকী আছে। অর্থাৎ, বালেগ হওয়ার পর সে একাধারে অনেক দিন রমযান মাসে রোযা রাখেনি। তাছাড়া যখন থেকে রাখতে শুরু করেছে, তারপরও কিছু কিছু রোযা ছুটে গিয়েছে। এগুলো কিভাবে কাযা করবে?
উত্তরঃ নামায ও রোযা উভয়টাই বালেগ হওয়া দ্বারা ফরয হয়। যখনই কেউ বালেগ হবে ঐ সময় থেকে প্রত্যেক রমযানের রোযা রাখবে। আর কাযা করার সময় এভাবে নিয়ত করবে যে, প্রথম রমযান মাসের যেই রোযা আমার উপর ফরয হয়েছিল; কিন্তু আমি রাখিনি সেই রোযার কাযা রাখছি ।
এমনিভাবে নিয়ত করে এক মাসের রোযা রাখবে। এক মাসের পর দ্বিতীয় মাস, তারপর আরেক মাস এইভাবে সমস্ত রোযার কাযা করবে। শেষের দিকে এইভাবে নিয়ত করবে যে, আমার উপর যে রোযা ফরয হয়েছিল; কিন্তু আমি রাখিনি সেই রোযার কাযাকরছি
(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়াঃ খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-১৪৬)
লাগাতার রোযা রাখা
প্রশ্নঃ এক ব্যক্তি সারা বৎসর প্রত্যেক দিন রোযা রাখে। এটা কি জায়েয হবে? সর্বদা রোযা রাখার জন্য সে কি সাওয়াব পাবে?
উত্তরঃ কোন ব্যক্তি যদি সারা বৎসর প্রত্যেক দিন রোযা রাখে, এমন কি নিষিদ্ধ দিন গুলোতেও (অর্থাৎ, দুই ঈদের দুইদিন এবং কোরবানীর ঈদের পর তিন দিন মোট পাঁচ দিন) রোযা রাখে, তাহলে তা মাকরূহে তাহরীমী হবে । আর যদি সেই নিষিদ্ধ দিনগুলো বাদ দিয়ে সারা বৎসর রোযা রাখে, তাহলে এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের মতভেদ আছে। অনেকে এই অবস্থাতেও মাকরূহ বলেছেন। কারণ, তখন আর এটা ইবাদত থাকে না অভ্যাস হয়ে যায়। তাছাড়া তার মাধ্যমে দুর্বলতা বৃদ্ধি পায় ।
আবার অনেকেই বলেন, এভাবে রোযা রাখলে কোন অসুবিধা নেই, রাখলে সাওয়াব হবে। তবে উত্তম হল, হযরত দাউদ (আঃ)-এর মত একদিন বাদ দিয়ে একদিন রোযা রাখা ।
গরমের মৌসুমে রোযা রাখলে সাওয়াব কি বেশী হবে?
প্রশ্নঃ রমযান মাস পরিপূর্ণ গরম মৌসুমে পড়েছে। এইজন্য রোযা রাখতে বেশী কষ্ট হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে গরমের মৌসুমে রমযান মাসে রমযানের রোযা রাখার কারণে সাওয়াব কি বেশী হবে?
উত্তরঃ গরমের মৌসুমে রোযা রাখলে বেশী সাওয়াব পাওয়া যাবে। কারণ, নিয়মই হল- اجرك على قدر تعبك [অর্থাৎ, তোমার পরিশ্রমের উপর ভিত্তি করে তুমি পারিশ্রমিক পাবে] তাছাড়া ইফতার সম্পর্কে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদীস থেকেও তা প্রমাণিত। তা হল- রোযার মধ্যে যেই পরিমাণ পিপাসায় কাতর হবে, শরীরের রগ যেই পরিমাণ শুকিয়ে যাবে, সেই পরিমাণ সাওয়াব পাওয়া যাবে।
(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়াঃ খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-১২৭)
আরও পড়ুন :- কাযা রোজা রাখার নিয়ম - মাসআলা সমূহ
চাঁদ দেখা সম্পর্কিত সরকারী ফাতাওয়া
প্রশ্নঃ সরকারের পক্ষ থেকে যদি ঘোষণা করা হয় যে, চাঁদ দেখা গিয়েছে। আগামীকাল বা আজ ঈদ । তাহলে কি রোযা না রাখা বা ভাঙ্গা জায়েয হবে?
উত্তরঃ উপরে বর্ণিত অবস্থায় লক্ষ্য করতে হবে যে, যদি চাঁদ দেখার ব্যাপারটি নির্ভরযোগ্য সাক্ষীর মাধ্যমে সরকার ঘোষণা করে থাকে, তাহলে ঈদ করা আবশ্যক হয়ে যাবে। অন্যথায় সরকারী ঘোষণা গ্রহণযোগ্য হবে না।
(ইমদাদুল আহকামঃ খন্ড-২, পৃষ্ঠা-১২২)
অপারগ ব্যক্তির রোযার হুকুম
প্রশ্নঃ এক ব্যক্তির দাঁতের মারি ফুলে যাওয়ার কারণে অথবা দাঁত নড়ার কারণে মুখের থুথুর সাথে সব সময় রক্ত আসে। এমন কি সজাগ বা ঘুমন্ত অবস্থায় গলার ভিতর রক্ত চলে যায়। এই অবস্থায় কি ঐ ব্যক্তির রোযা সহীহ হবে?
উত্তরঃ যেই ব্যক্তির দাঁত থেকে অধিকাংশ সময় রক্ত আসে এবং সজাগ কিংবা ঘুমন্ত অবস্থায় নিজের অজান্তে রক্ত যদি গলার ভিতর চলে যায়, এই অবস্থার সুস্পষ্ট কোন হুকুম পাওয়া যায় না। কিন্তু আল্লামা শামী (রহঃ) এতটুকু লিখেছেন যে, ঐ ব্যক্তির রোযা সহীহ হওয়ার অবকাশ আছে।
প্রশ্নে উল্লেখিত অবস্থা পরিস্কার যে, পেটে রক্ত গেলে তা রোযা ভঙ্গের কারণ হবে না। কারণ, এর থেকে বেচে থাকা কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয় ।
(ইমদাদুল আহকামঃ খন্ড -২, পৃষ্ঠা- ১৩)