সংজ্ঞা :- জীবজ্ঞিানের যে শাখায় উদ্ভিদের গঠনপ্রকৃতি, জীবনবৃত্তান্ত, জৈবিক ক্রিয়াকলাপ প্রভৃতি দিক সম্পর্কে আলোচনা, পর্যালোচনা ও গবেষণা করা হয়, তাকে উদ্ভিদবিজ্ঞান বা Botany বলে।
উদ্ভিদবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা :
উদ্ভিদবিজ্ঞান হল প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের একটি বিশেষ শাখা। বিজ্ঞানের কোন্ শাখা মানবকল্যাণে কতটুকু অবদান রাখতে পারে তার উপরই নির্ভর করে ঐ শাখার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা। সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে মানব সমাজের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও ওষুধ-পথ্যের মত অত্যাবশ্যকীয় উপাদানগুলোর সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে পারে কেবল উদ্ভিদবিজ্ঞান। ফলে বর্তমান যুগে উদ্ভিদবিজ্ঞানের গুরুত্ব যেমন অপরিসীম তেমনি উদ্ভিদবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তাও অপরিসীম।
নিম্নে উদ্ভিদবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হল :-
১. উদ্ভিদবিজ্ঞান পাঠ করে আমরা পৃথিবীর জলজ ও স্থলজ সকল প্রকার উদ্ভিদ সম্পর্কে জানতে পারি ।
২. কোন ধরনের উদ্ভিদের জন্য কি ধরনের পরিবেশ প্রয়োজন তা উদ্ভিদবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে জানতে পারি।
৩. উদ্ভিদবিজ্ঞান পাঠে আমরা ভেষজ উদ্ভিদের পরিচিতি ও ব্যবহারিক প্রয়োগ জানতে পারি ।
৪. উদ্ভিববিজ্ঞানের জ্ঞানই আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আনতে সহায়তা করতে পারে। কারণ সংকরায়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করেই আমরা অধিক ফলনশীল ধান, গম, ভুট্টা ইত্যাদি উৎপাদনে সক্ষম হয়েছি।
৫. ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি অণুজীবের জীবন বৃত্তান্ত, আক্রমণ পদ্ধতি এবং এদের হাত থেকে রক্ষা পেতে উদ্ভিদবিজ্ঞানের পাঠ আবশ্যক ।
৬. উদ্ভিদবিজ্ঞান তথা উদ্ভিদ পরিবেশবিজ্ঞান পাঠ করে মুক্ত ও নির্মল পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব।
৭. উদ্ভিদবিজ্ঞানের বিস্তারিত জ্ঞান কাগজ শিল্প, চা শিল্প, বস্ত্র শিল্প, তাঁত ও রেয়ন প্রভৃতি শিল্পগুলোর উন্নতির জন্য অপরিহার্য ।
৮. বিনোদনের জন্য উদ্ভিদ উদ্যান অপরিহার্য। উদ্ভিদবিজ্ঞানের পাঠ ব্যতিরেকে উদ্ভিদ-উদ্যান রচনা, উৎকর্ষ সাধন ও রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি সম্ভব নয়।
৯. মাছ চাষ করতে কি ধরনের উৎপাদক উদ্ভিদ যেমন - সবুজ ও নীলাভ সবুজ শৈবাল উৎপাদন করতে হবে তা উদ্ভিদবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে জানা সম্ভব।
১০. কি ধরনের সবুজ উদ্ভিদ পশু-পাখির খাদ্য উপযোগী তা শুধু উদ্ভিদবিজ্ঞান পাঠেই জানা সম্ভব ।
১১. উদ্ভিদবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে আমরা উদ্ভিদকে মহাশূন্য গবেষণায় কাজে লাগাতে পারি।
আরও পড়ুন :- উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং উদ্ভিদ কোষ ও প্রাণী কোষের মধ্যে পার্থক্য
সংজ্ঞা : জীববিজ্ঞানের যে শাখায় প্রাণির গঠনপ্রকৃতি, জীবনবৃত্তান্ত, জৈবিক ক্রিয়াকলাপ প্রভৃতি দিক সম্পর্কে আলোচনা, পর্যালোচনা ও গবেষণা করা হয়, তাকে প্রাণিবিজ্ঞান বা Zoology বলে ।
প্রাণিবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা :-
সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে প্রাণিবিজ্ঞান ক্রমেই পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের এ বিশেষ শাখাটি মানব কল্যাণে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। খাদ্য ও ওষুধ-পথ্যের মত অত্যাবশ্যকীয় উপাদানের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে প্রাণিবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
নিম্নে প্রাণিবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হল :
১. বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীদের সনাক্তকরণ ও প্রাণিজগতে এদের স্থান নিরূপন করতে প্রাণিবিজ্ঞান পাঠের আবশ্যকতা রয়েছে।
২. প্রাণিজগতে মানুষের স্থান, উৎপত্তি ও অন্যান্য প্রাণির সম্পর্ক জানতে হলে প্রাণিবিজ্ঞান পাঠ করতে হবে।
৩. সমগ্র প্রাণিজগত সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে চাইলে প্রাণিবিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
৪. প্রাণিবিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞান পরস্পর ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। যে সকল পরজীবি প্রাণী মানুষের দেহে রোগ সৃষ্টি করে থাকে তাদের জীবনবৃত্তান্ত জানতে প্রাণিবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
৫. প্রাণিবিজ্ঞানের সহায়তা ছাড়া মানুষের পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত সচেতনতা জন্মায় না ।
৬. বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ ও তাদের বৃদ্ধি বিষয়ক জ্ঞানার্জনের জন্য প্রাণিবিজ্ঞান পাঠ আবশ্যক ।
৭. কৃত্রিম উপায়ে উন্নত জাতের মাছ চাষ করে আমিষের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। তাই কেবল প্রাণিবিজ্ঞানের ধারণা দ্বারাই এ সম্পর্কিত জ্ঞানার্জন সম্ভব।
৮. প্রাণিবিজ্ঞানের জ্ঞান ব্যতীত কৃত্রিম উপায়ে মৌমাছি চাষ করা যায় না।
৯. প্রাণিবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে আমরা অতি সহজেই রেশম চাষ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে পারি। রেশম গুটি থেকে সংগৃহীত রেশম সূতা বস্ত্র বুনন থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় অনেক কাজে ব্যবহৃত হয়।