নিয়মানুবর্তিতা- বাংলা রচনা

উপস্থাপনা : 

নিয়মানুবর্তিতা মানুষের উন্নতি লাভের শ্রেষ্ঠ সোপান। মানুষের সফলতা লাভের জন্য যত সিঁড়ি আছে, তাদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সিঁড়ি হচ্ছে নিয়মানুবর্তিতা। “Key to success is regularity” সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ জীবনের প্রধান শর্তই হচ্ছে নিয়মানুবর্তিতা। প্রকৃতপক্ষে, নিয়মানুবর্তিতাই হচ্ছে জগতের মূলধর্ম । 

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন যে, “সমগ্র ধরিত্রী একটি বিশেষ নিয়মের মাধ্যমে চলছে। যেখানেই নিয়মের চাবি ঢিলে হয়ে যায়, সেখানেই বিপর্যয় এসে হাজির হয়।”

প্রকৃতির জগতে নিয়ম :

প্রকৃতির জগতের সর্বত্র নিয়মানুবর্তিতা বিরাজমান। সকালে পূর্ব দিগন্তে দিবাকরের উদয় এবং সন্ধ্যার প্রাক্কালে পশ্চিম গগনে অস্তাচলে গমন, রাতের আকাশে নিশাপতি ও তারকারাজির ঝলমলানি, মহাশূন্যে জানা-অজানা গ্রহ-উপগ্রহ ও নক্ষত্র যথা সময়ে নিজ নিজ কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করা, নদ-নদী, সাগর-মহাসাগরে সময়মত জোয়ার ভাটার প্রাদুর্ভাব, প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে অন্তরীক্ষ হতে বারিবর্ষণ সব কিছুই নিয়মের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

সবকিছুই নিয়মের এক কঠিন শিকলে বাঁধা। প্রকৃতির নির্দিষ্ট নিয়মেই ঘুরছে গ্রহ-নক্ষত্র, ঘুরছে রবি-শশী, ঘুরছে ঋতুরা । প্রকৃতপক্ষে, প্রকৃতি হচ্ছে এক ছন্দময় ঐক্যতান, ছন্দহীন বৈচিত্র্যের বিশৃঙ্খলা নয় ।

আরও পড়ুন :- দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা ১৫ পয়েন্ট-Class 6,7,8,9,10| পিডিএফ

প্রাণী জগতের নিয়ম :

বিশ্ব প্রকৃতির মত প্রাণীদের মধ্যে নিয়ম-শৃংখলা বিরাজমান । পশু পাখী ও জলচর প্রাণীরা দিনের বেলায় খাদ্য ও শিকারের অন্বষণে ঘুরে বেড়ায়, রাতে বিশ্রাম করে এবং সকালে জাগরিত হয়। হরিণ দলবদ্ধভাবে তাদের দলনেতার অধীনে চলাফেরা করে । মৌমাছি রাণীর নির্দেশমত সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করে। 

উইপোকা, পিঁপড়া ঠিক এমনিভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করে। মানুষের শরীরের আভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোও নিয়মের মাধ্যমে নিজ নিজ কর্তব্য কাজ সমাপন করে যাচ্ছে।

মানব জীবনে নিয়ম : 

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে সে একাকী বসবাস করতে পারে না। তাকে অসংখ্য লোকের সাথে চলাফেরা করতে হয়। তাই সর্বত্র তাকে নিয়ম-শৃংখলা মেনে চলতে হবে। অন্যথায় সে সমাজে অন্যের সাথে বসবাস করতে পারবে না। অফিস যদি শুরু হয় ১০টায় তা হলে যে চাকরি করে, তাকে ১০টার মধ্যে অফিসে পৌঁছতে হবে। নিয়ম শৃংখলা না থাকলে সামাজিক জীবন দু’দিনেই অচল হয়ে যাবে ।

ছাত্র-জীবনে নিয়ম : 

ছাত্র-জীবনে নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম । ইহা নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষা করা ও অভ্যাস করার উপযুক্ত সময় । কতকগুলো সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন সুষ্ঠুভাবে পালন করে দেহ ও মনের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন করতে হয় ছাত্র জীবনে। পড়াশুনায় তাদেরকে নিয়ম-শৃংখলা পালন করতে হয়, বিদ্যালয়ের কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হয় । 

উপরন্তু যে কোন বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করার সময় অখণ্ড মনোযোগ-আগ্রহ, শিক্ষণীয় বিষয়কে সম্পূর্ণরূপে বুঝার চেষ্টা, শিক্ষকের নির্দেশ পালনে তৎপরতা প্রভৃতি থাকতেই न হবে। সর্বোপরি শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ না থাকলে কোন ছাত্র সফলতা লাভ করতে পারে না ।

আরও পড়ুন :- ছাত্র জীবন – বাংলা রচনা [ Class – 6, 7, 8 ,9 ,10] 

খেলার মাঠে নিয়ম : 

খেলার মাঠে নিয়ম মেনে চলা অবশ্যই প্রত্যেক খেলোয়াড়ের অপরিহার্য দায়িত্ব। খেলার মাঠে দলনেতা এবং রেফারীর নির্দেশ না মানলে ভাল খেলোয়াড় হওয়া যায় না ।

জীবনের সকলক্ষেত্রে নিয়ম : 

জীবনের সকল ক্ষেত্রে, সমাজ জীবনে, পারিবারিক জীবনে, কল-কারখানায়, দোকানে, রাস্তাঘাটে, চলাচলে, গাড়ী চালাতে নিয়মানুবর্তিতা ও শৃংখলা রক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন। নিয়ম-শৃঙ্খলার অভাবে যেমন কোন প্রতিষ্ঠানই গড়ে উঠতে পারে না, তেমনি এর অভাবে অনেক দিনের সুপ্রতিষ্ঠানও ধ্বংস হয়ে যায় । 

যুদ্ধ ক্ষেত্রে নিয়মের প্রয়োজন তীব্রভাবে অনুভূত হয় । যে সৈন্যদল শৃংখলা রক্ষা করে না তাদের পরাজয় নিশ্চিত। শ্রেণীকক্ষে সকল ছাত্রকে শ্রেণী মনিটরকে মেনে চলতে হয় ।

উপসংহার : 

জীবনের সকল ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তিতা দরকার। বাল্যকাল থেকে নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষা করতে পারলেই জীবন সুন্দর হয়। অন্যথায় জীবন ব্যর্থ হয়ে যায় । তাই আমাদেরও জাতীয় উন্নতির জন্য নিয়মানুবর্তী হওয়া আবশ্যক ।

আমার মূল লক্ষ্য একটাই (Sikkhagar-শিক্ষাগার) ওয়েবসাইটের হাত ধরে “শিক্ষা হবে উন্মুক্ত ও বাণিজ্যমুক্ত”। এই প্লাটফর্মে থাকবে একাডেমিক প্রস্তুতি, ভর্তি প্রস্তুতি, চাকরি প্রস্তুতি, স্পেশাল স্কিল এবং ধর্মীয় শিক্ষাসহ নানাবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।

Leave a Comment