আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস - রচনা [ Class- 6, 7, 8 ,9 ,10, HSC ]

উপস্থাপনা : 

যে দিনটিতে বাংলা ভাষাভাষী জনগণ তাদের মায়ের ভাষার জন্যে নিজেদের রক্ত ঝরিয়েছিল, সে দিনটিই আজ পৃথিবীতে বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস (International Mother Language Day) হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে।

আমাদের মাতৃভাষা : 

জন্মের পর আমাদের মুখ থেকে যে বাক্যটি প্রথম স্পন্দিত হয়, তা হলো মাতৃভাষা। অর্থাৎ, মাতৃভাষায় কথা বলা যেন আমাদের জন্মগত অধিকারকে নির্দেশ করে । বাংলা হচ্ছে আমাদের মাতৃভাষা। শৈশবে আমরা এ ভাষার মাধ্যমেই কথা বলতে শুরু করেছি, এ ভাষার মাধ্যমেই আমাদের প্রথম লেখনী অঙ্কিত হয়েছে ।

পাকিস্তান জন্মের পর থেকেই পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী আমাদের মায়ের ভাষা বাংলাকে উপেক্ষা করে একমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার অশুভ চক্রান্ত চালায় ।

১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করলেন, একমাত্র উর্দূই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা । এমনকি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সরকার কঠোর নীতি অবলম্বন করে। ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। 

আরও পড়ুন :- বাংলা রচনা - মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান   [ Class - 6, 7, 8 ,9 ,10] এবং HSC

ছাত্র-জনতা শাসকগোষ্ঠীর সকল বাধা উপেক্ষা করে নেমে আসে রাজপথে। শাসকগোষ্ঠী রাজপথে শ্লোগানমুখর ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ এবং গুলি -চালায়। পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকে প্রাণ হারায়। ভাষার জন্যে তাদের আত্মত্যাগের এ দৃষ্টান্তকে উপজীব্য করে ২১ ফেব্রুয়ারি পরিণত হয় ‘বিশ্ব মাতৃভাষা দিবসে' ।

২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস হওয়ার কারণ  :

জাতিসংঘ বাংলাদেশের একুশে ফেব্রুয়ারিকে 'বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ স্বীকৃতির ফলে একটি দেশগত উৎসব সমগ্র বিশ্বের উৎসবে পরিণত হল । জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন ইউনেস্কোর এ স্বীকৃতি প্রদানের কারণ হলো— পৃথিবীর কোন জাতি তাদের মাতৃভাষা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য বুকের তাজা রক্ত উৎসর্গ করেছে, এমন নজির পাওয়া ভার । ফলে একুশে ফেব্রুয়ারি পরিণত হয় বিশ্ব মাতৃভাষা দিবসে ।

'৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারি এক ঐতিহাসিক উত্তরণ : 

জাতিসংঘ কর্তৃক একুশে ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' রূপে ঘোষণা বাংলা ভাষার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা । বিগত সহস্রাব্দে সংস্কৃত, ফারসি, ইংরেজি, হিন্দুস্থানি বা উর্দু-হিন্দীর আগ্রাসনে ক্ষত-বিক্ষত বাংলা ভাষা এ ঘোষণার ফলে প্রাপ্য মর্যাদা পেয়েছে।

আরও পড়ুন :- একুশে ফেব্রুয়ারী  - বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বিশ্ব-মাতৃভাষা দিবস ও আমাদের প্রত্যাশা : 

একুশ আমাদের চেতনা। রক্তেমাখা '৫২-এর স্মৃতিঘেরা একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের দুয়ারে দুয়ারে, অনুভবের অগ্নিগিরির মত আসে আর যায় । একুশ স্মরণ করিয়ে দেয় নব জীবনের নকশাকে, পথকে স্থাপত্যকে, ভালবাসার গানকে, আর জীবনের উন্মেষকে; বলে, 'জাগো অনশন বন্দি ওঠরে যতো ।

মোদ্দাকথা, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়াতে আমাদের দায়িত্ব বেড়ে গেছে। দেশে দেশে যখন এ দিবস পালিত হবে, তখন বিশ্ববাসী এ বাংলাদেশকে স্মরণ করবে। এ মূল্যায়নে আমরা হতে চাই আত্মপ্রত্যয়ী ।

উপসংহার :

মায়ের ভাষার মর্যাদা আদায়ের জন্যে এদেশের তরুণদের প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছিল বলে এ দিনটি বেদনার রে রঙিন । মাতৃভাষাকে জাতীয় ভাষায় রূপদানের লক্ষ্যে এতবড় আত্মত্যাগ আর কোন জাতির ইতিহাসে নেই। এ কারণে আমরা গর্বিতও বটে ।

Post a Comment

0 Comments