গাছের পাতা, কাণ্ড, ফুল ইত্যাদি অঙ্গ ক্ষত হয়ে শুকিয়ে যাওয়াকে বলা হয় ব্লাইট (blight)। আলু গাছে দুই ধরনের ব্লাইট রোগ হয়ে থকে; একটি হলো লেট ব্লাইট, অপরটি হলো আর্লি ব্লাইট। (আর্লি ব্লাইট Alternaria solani দিয়ে হয়ে থাকে)।
আলুর লেট ব্লাইট রোগ :-
পোষক – গোলআলু
রোগজীবাণু – Phytophthora infestans
আলুর লেট ব্লাইট রোগের কারণ :-
Phytophthora infestans নামক ছত্রাকের আক্রমণে আলুর বিলম্বিত ধসা রোগ হয় ।
আলুর বিলম্বিত ধ্বসা রোগের লক্ষণ :-
(i) রোগের লক্ষণ হিসেবে প্রথমে পাতার অগ্রভাগে ও কিনারায় ছোট ছোট দাগ দেখা যায় ।
(ii) দাগগুলো প্রথমে বেগুনি, পরে বাদামি ও সবশেষে কালো রং ধারণ করে ।
(iii) পাতার নিম্নতলে দাগের কিনারা বরাবর সাদা মাইসেলিয়াম জন্মায় ।
(iv) কম তাপমাত্রা ও অধিক আর্দ্রতায় রোগ সম্পূর্ণ পাতাকে পচিয়ে বৃন্তে ও কাণ্ডে সংক্রমিত হয়।
(v) মাটির উপরের অংশ অর্থাৎ আক্রান্ত পাতা ও কাণ্ড মরে যায়।
(vi) অধিক আর্দ্র আবহাওয়ায় মাটির নিচে আলুতেও রোগ সংক্রমণ হয়।
(vii) প্রথমে আলুর খোসার নিচে বাদামি দাগ হয় এবং ক্রমে আলুর ভিতরের দিকে বিস্তৃত হতে থাকে । পরিশেষে গোটা আলুটিই কালো বর্ণ ধারণ করে, আকার বিসদৃশ হয় এবং আলু পচে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন :– লাইকেন কাকে বলে? লাইকেনের বৈশিষ্ট্য এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব
রোগ নিয়ন্ত্রণ :-
১। আলু বীজ রোগমুক্ত এলাকা থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
২। ফসল উঠানোর পর গাছের অবশিষ্ট পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৩। খেত থেকে আলু তোলার পর ১% মারকিউরিক ক্লোরাইড দ্রবণে শোধন করে ৪০0 ফা. অথবা আর নিম্ন তাপমাত্রার গুদামে সংরক্ষণ করতে হবে ।
৪। আলু তোলার আগে যদি ঔষধ ছিটিয়ে আলু গাছের পাতা, কাণ্ড নষ্ট করা যায় তবে আলু তোলার সময় রোগজীবাণু সংক্রমিত হয় না।
৫। রোগ প্রতিরোধী আলুর জাত; যেমন- কুফরী, সিন্দুরী, চন্দ্রমুখী, কুফরী চমৎকার প্রভৃতি চাষ করে রোগ দমন করা যায়
৬। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপন্ন রোগজীবাণুমুক্ত আলুবীজ চাষের মাধ্যমেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৭। রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখার সাথে সাথে ছত্রাক নিবারক প্রয়োগ করেও রোগের প্রকোপ কমানো যায়।
দাদ রোগের ছবি :-
দাদ রোগ কি :-
দাদরোগ বা Ring worm একটি ছত্রাকঘটিত ছোঁয়াচে রোগ। এর ফলে চামড়ায় সংক্রমণের সৃষ্টি হয়। ত্বকীয় সংক্রমণের জন্য দায়ী এসব ছত্রাক Dermatophytes হিসেবে পরিচিত। দাদ সব বয়সের মানুষের মধ্যে ঘটে তবে শিশুদের প্রভাবিত করে বেশি। মানুষ ছাড়াও প্রাণী বিশেষ করে কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি দাদ দ্বারা প্রভাবিত হয় ।
দাদ রোগের কারণ :-
দাদ যে সকল ছত্রাকের কারণে হয় তাদের মধ্যে Trichophyton এর বিভিন্ন প্রজাতি, যেমন— Trichophyton rubrum, Trichophyton tonsurans, T. interdigitale, T. mentagrophytes ইত্যাদি এবং Epidermophyton floccosum Microsporum sp. ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ক্রমবর্ধমান দাদ বা ওয়ার্মটির ল্যাটিন নাম হলো Tinea. দাদ আমাদের চামড়া বা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে আক্রান্ত করতে পারে। আক্রান্ত স্থানের উপর ভিত্তি করে এদের বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। যেমন-
* শরীরের অনাবৃত বা উন্মুক্ত অংশে, যেমন– পেট, হাত-পা ইত্যাদি অঙ্গগুলোতে ছত্রাকের সংক্রমণের ফলে লালচে হয়ে যায় এবং রিং-এর মতো গোল দাগ হয়। রিং-এর কিনারাগুলো অনেকটা আঁশের মতো হয়ে যায় এবং মাঝের অংশটুকু পরিষ্কার থাকে । অর্থাৎ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের দাদকে বলে Tinea corporis.
* ছত্রাক এবং ব্যাক্টেরিয়ার মিলিত সংক্রমণের ফলে হাতের তালু, পায়ের পাতায় এবং উভয়ের আঙ্গুলের ফাঁকে ত্বক শুষ্ক, লালচে, খসখসে হয় এবং খোসপাঁচড়ার মতো চুলকানির ফলে যে দাদ সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় Tinea pedis. একে অ্যাথলেট ফুটও বলা হয়ে থাকে ।
* এছাড়া কুঁচকি এলাকার দাদকে Tinea cruris এবং মাথার ত্বকে দাদের আক্রমণ Tinea capitis নামে পরিচিত। মাথার ত্বকে দাদ হলে চুল অকালে পড়ে যায় এবং শুষ্কতার সৃষ্টি হয়। দাদ বা Ring worm রোগটি অত্যন্ত সংক্রামক এবং ছোঁয়াচে । এটি মানুষ থেকে মানুষে, প্রাণী থেকে মানুষে এবং মাটি থেকে মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন :- ছত্রাক কি? কাকে বলে। ছত্রাকের বৈশিষ্ট্য, গঠন এবং শ্রেণীবিন্যাস
দাদ রোগের লক্ষণ :-
- চামড়ায় অসম্ভব চুলকানি এবং জ্বালাপোড়া হয় ।
- গোল চাকা দাগ অর্থাৎ রিং সৃষ্টি হয় এবং বাইরের দিকে চাকাটি বাড়তে থাকে। চাকার ভিতরের দিকে ত্বক স্বাভাবিক থাকে ।
- চাকার পরিধি বরাবর চামড়া শুষ্ক হয়ে ওঠে আসে। পরে লাল হয়ে জ্বালা করে ও রস বের হয়।
- নখ দাদ দ্বারা আক্রান্ত হলে তা বর্ণহীন হয় ও পুরু হয় এমনকি টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে যেতে পারে ।
- পশু-পাখি দাদ দ্বারা আক্রান্ত হলে এদের পালক ঝরে যায় এবং চামড়ায় লালচে ক্ষত সৃষ্টি হয়।
দাদ রোগের প্রতিকার :-
- ত্বক ও হাত-পা পরিষ্কার ও শুকনো রাখা ৷
- নিয়মিত শ্যাম্পু করে চুল ও মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখা ।
- নিজের ব্যবহৃত পোশাক, তোয়ালে, চিরুনি, কাঁথা, কম্বল, বিছানা, বালিশ প্রভৃতি অন্যকে ব্যবহার করতে না দেওয়া। এমনকি নিজে ব্যবহারের পরে তা পরিষ্কার করে শুষ্ক করে রাখা ।
- পালকহীন পোষা প্রাণী স্পর্শ না করা।
- ঢিলাঢালা সুতি পোশাক ও সুতি পরিষ্কার মোজা পরিধান করা।
- ডায়াবেটিক যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখা ।
- ছত্রাক আক্রান্ত ছেলেমেয়েদের অন্য কোনো সুস্থ ছেলেমেয়ের সাথে একত্রে খেলতে ও ঘুমাতে দেওয়া উচিত নয়। ।
- ছত্রাক প্রতিরোধী কিছু ক্রিম বা লোশন, যেমন- Clotrimazole (Cruex ক্রিম, Lotrimin লোশন) miconazole (Monistat-চামড়ার ক্রিম), Ketoconazole (nizoral ক্রিম) ইত্যাদি ব্যবহারে দাদ রোগ চিকিৎসায় ভালো উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া দীর্ঘদিনের দাদ্ উপশমের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ছত্রাক প্রতিরোধী ট্যাবলেট সেবন করা উচিত।
- টিনিয়া ক্রুরিস- কুঁচকির দাদ।
- টিনিয়া ক্যাপাইটিস- মাথার দাদ ।
- টিনিয়া কর্পোরিস- শরীরের বিভিন্ন স্থানে দাদ ।
- টিনিয়া পেডিস- পায়ের পাতার দাদ ।
- টিনিয়া আঞ্চয়াম- নখে দাদ ।