উপস্থাপনা:
এক লক্ষ তেতাল্লিশ হাজার নয়শত আটানব্বই বর্গকিলোমিটার ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত আমাদের বাংলাদেশ। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, এই ছোট্ট দেশটিতে ষোল কোটি লোকের বাস । ভূখন্ডের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। প্রতিদিন মানুষ কাজের সন্ধানে শহরে আসছে।
জনসংখ্যার সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে জীবনমুখী উপকরণ। বাড়ছে যানবাহন, রাস্তাঘাট, ঘর-বাড়ি, স্কুল- কলেজ, অফিস-আদালত । অতিরিক্ত যানবাহন ও জনসংখ্যার ফলে রাস্তাঘাটে যানজট লেগেই থাকছে ।
যানজটের কারণ :
রাস্তায় যানবাহন চলতে চলতে হঠাৎ দেখা যায় গাড়ির চাকা আর ঘুরছে না, চারদিকে নানা প্রকার যানবাহন । চলতে চলতে হঠাৎ পথে যানবাহন আটকে গেলে যে জট হয়, তাকে যানজট বলে ।
আরও পড়ুন :- সড়ক দুর্ঘটনা, কারণ ও তার প্রতিকার - বাংলা প্রবন্ধ রচনা
• যানজটের কারণ সমূহ :
১. লোকসংখ্যার আধিক্য, অপরিকল্পিত যানবাহন বৃদ্ধি পাওয়া।
২. একই রাস্তায় যন্ত্রচালিত দ্রুতগতিসম্পন্ন যানবাহন এবং ধীরগতিসম্পন্ন যানবাহন তথা রিকশা, ঠেলাগাড়ি, ভ্যান ইত্যাদি চলাচল করা।
৩. অপরিকল্পিত আবাসিক এলাকা গড়ে ওঠা ও রাস্তার স্বল্পতা এবং সংকীর্ণতা।
৪. ট্রাফিক আইন অমান্য করে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো, পর্যাপ্ত পরিমাণ ট্রাফিক পুলিশের অভাব ও ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ গ্রহণ।
৫. ফুটপাতে অবৈধ দোকানপাট গড়ে ওঠা।
৬. অসতর্কভাবে রাস্তা পারাপার ও সড়ক দুর্ঘটনা।
৭. গাড়ি পার্কিং-এর সুনির্দিষ্ট নিয়ম পালন না করা ও যেখানে-সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো।
৮. রাজনৈতিক কারণে অথবা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পূরণের উদ্দেশ্যে যত্রতত্র সভা-সমাবেশ ও মিছিল ।
৯. যানবাহনের চালকদের মাঝে আইন-শৃঙ্খলা সম্পর্কে অজ্ঞতা ও আইন না মানার প্রবণতা ।
যানজট নিসরণের উপায় :
১. পরিকল্পিতভাবে গাড়ির লাইসেন্স প্রদান করতে হবে।
২. যানবাহন নিয়ন্ত্রণ আইনের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ সৎভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
৩. যন্ত্রচালিত এবং ধীরগতিসম্পন্ন যানবাহনের জন্যে আলাদা রাস্তা নির্ধারণ করতে হবে।
৪. যথাসম্ভব রাস্তাগুলোকে প্রসারিত করতে হবে।
৫. পরিকল্পিতভাবে আবাসিক ঘর-বাড়ি, অফিস-আদালত তৈরি করতে হবে ।
৬. লাইসেন্সবিহীন ও অনভিজ্ঞ ড্রাইভার দ্বারা যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে।
৭. পর্যাপ্ত পরিমাণে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ করতে হবে।
৮. ফুটপাতের অবৈধ দোকানপাট তুলে দিতে হবে।
৯. প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে রাস্তায় চলাচলের নিয়ম-নীতি সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
১০. সুনির্দিষ্ট নিয়মে গাড়ি পার্কিং করতে হবে, যেখানে-সেখানে স্টপেজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
১১. যানবাহন নিয়ন্ত্রণ আইনগুলো কঠোরভাবে পালন করতে হবে ।
১২. বাইাস রাস্তা নির্মাণ করতে হবে, প্রয়োজনে ভূগর্ভস্থ পরিবহন সার্ভিস চালুর ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন :- বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার : বাংলা প্রবন্ধ রচনা
যানজটের ক্ষতিকর দিকসমূহ :
১. রাস্তাঘাটে দুর্ঘটনা বাড়ছে।
২. অফিস-আদালত, শিল্প-কারখানায় উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।
৩. জ্যামে পড়ে মুমূর্ষু রোগী অকালে প্রাণ হারাচ্ছে।
৪. মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজে শিক্ষার ব্যাঘাত ঘটছে।
৫. যানবাহনগুলো অতিরিক্ত পেট্রোল পোড়াচ্ছে এবং ধোঁয়ায় পরিবেশ নষ্ট করছে।
৬. জ্যামে পড়ে যে মূল্যবান সময় অপচয় হচ্ছে, তাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ১৬০ কোটি টাকা ।
উপসংহার :
যানজট সমস্যা সুষ্ঠু নাগরিক জীবনের জন্যে মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। সরকার এবং জনগণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় যানজট দূর করতে বৈপ্লবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ট্রাফিক জ্যাম দূর হয়ে নাগরিক জীবনে আসুক গতিময়তা, এটাই দেশবাসীর কাম্য ।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা