উচ্চারণরীতি বাংলা ব্যাকরণের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মনের ভাব লিখে বা উচ্চারণ করে- যেভাবেই হোক না কেন, তা প্রকাশ করতে হলে অবশ্যই সঠিক বানান ও বিশুদ্ধ উচ্চারণ অপরিহার্য।
(toc) Table Of Contens
'অ' ধ্বনি উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম :
১। শব্দের প্রথমে যদি 'অ' থাকে এবং তারপর ই-কার, ঈ-কার কিংবা উ-কার বা উ-কার থাকে তবে সেই অ-এর উচ্চারণ ও- কারের মতো হয়। যেমন- অভিধান (ওভিধান্), নদী (নোদি), অনুরোধ (ওনুরোধ), ময়ূর (মোয়ুর) ইত্যাদি।
২। শব্দের আদ্য অ-এর পরে য-ফলাযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে সেক্ষেত্রে অ-এর উচ্চারণ সাধারণত ও-কারের মতো হয়। যেমন- অদ্য (ওদ্-দো), অত্যাচার (ওত্-তাচার্), কন্যা (কোন্-না) ইত্যাদি ।
৩। আদ্য অ-এর পর 'ক্ষ' থাকলে সেই অ-এর উচ্চারণ সাধারণত ও-কারের মতো হয়ে থাকে। যেমন- দক্ষ (দোক্-খো), লক্ষ্মণ (লোক্-খোন্), রক্ষা (রোক্-খা) ইত্যাদি ।
৪। বাংলা ভাষায় বেশকিছু সমাসবদ্ধ তৎসম শব্দের মধ্য 'অ' ও- কারান্ত রূপে উচ্চারিত হয়। যেমন- পথচারী (পথোচারি, বনবাসী (বনোবাশি), রণতূর্য (রনোতুর্-জো) ইত্যাদি ।
৫। শব্দের শেষে যুক্তবর্ণ থাকলে সেই অন্তিম 'অ' সাধারণত ও-কারের মতো উচ্চারিত হয়। যেমন- কর্ম (কর্-মো), প্রাপ্ত (প্রাপ্-তো), শক্ত (শক্-তো) ইত্যাদি ।
আরও পড়ুন : য, ব, ম, র, এবং ল ফলা উচ্চারণের ৫টি নিয়ম - উদাহরণ সহ
'এ' ধ্বনি উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম :
১ । শব্দের অন্ত্যে 'এ' বিবৃত অর্থাৎ অবিকৃত 'এ' হয়। যেমন— পথে, ঘাটে।
২। একাক্ষর সর্বনাম পদের 'এ' বিবৃত হয়। যেমন- কে, সে, যে।
৩। ‘ই' বা 'উ'-কার পরে থাকলে 'এ' সংবৃত হয়। যেমন- দেখি, রেণু।
৪। দুই অক্ষরবিশিষ্ট সর্বনাম বা অব্যয় পদে 'এ' ধ্বনির সংবৃত উচ্চারণ অর্থাৎ 'অ্যা' হয়। যেমন- এত (অ্যাতো), কেন (ক্যানো)।
৫। খাঁটি বাংলা শব্দে 'এ' ধ্বনির বিবৃত উচ্চারণ হয়। যেমন- খেম্-টা (খ্যাম্-টা), তেলাপোকা (ত্যালাপোকা) ।
আদ্য 'অ' ধ্বনি উচ্চারণের ৫টি নিয়ম :
১। শব্দের আদ্য অ-এর পর '্য' (য)-ফলাযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে সেক্ষেত্রে অ-এর উচ্চারণ ও-কারের মতো হয়। যেমন- বন্যা (বোন্-না), গণ্য (গোন্-নো), কথ্য (কোত্-থো) ইত্যাদি।
২। একাক্ষর শব্দের প্রথমে 'অ' এবং পরে দন্ত্য 'ন' থাকলে ও-কারের মতো - উচ্চারণ হয়। যেমন- মন (মোন্), বন (বোন্), 'জন (জোন্) ইত্যাদি ।
৩। আদ্য অ-এর পর 'ক্ষ' থাকলে, অ-এর উচ্চারণ সাধারণত ও- কারের মতো হয়ে থাকে। যেমন- দক্ষ (দোক্-খো), লক্ষ্মণ (লোক্খোন্), রক্ষা (রোক্-খা) ইত্যাদি।
৪। শব্দের প্রথমে 'অ' থাকলে এবং পরে ঋ-কারযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে অ-এর উচ্চারণ ও-কারের মতো হয়। যেমন- মসৃণ (মোস্সৃন, কর্তৃকারক (কোর্-তৃকারোাক্), বক্তৃতা (বোক্-তৃতা) ইত্যাদি ।
৫। শব্দের প্রথমে অ-যুক্ত র-ফলা থাকলে সেক্ষেত্রেও আদ্য অ-এর উচ্চারণ ও-কারের মতো হয়ে থাকে। যেমন- ক্রম (ক্রোম্), গ্রহ (গ্রোহো), গ্রন্থ (গ্রোন্-থো), ব্রত (ব্রোতো), প্রভাত (প্রোভাত্) ইত্যাদি ।
আরও পড়ুন : উচ্চারণ রীতি কাকে বলে?বাংলা উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম hsc - pdf
মধ্য 'অ' ধ্বনি উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম :
১। মধ্য অ-এর পূর্বে যদি অ, আ, এ, ও – এই ৪টি স্বরধ্বনির যেকোনো ১টি থাকে তাহলে সেই 'অ' ও-রূপে উচ্চারিত হয়। যেমন : বেতন (বেতোন্), কানন(কানোন্), কমল (কমোল্) ।
২। মধ্য অ-এর শেষে ই অথবা উ ধ্বনি থাকলে সেই অ-এর উচ্চারণ ও-এর মতো হয়। যেমন : সকরুণ (শকোরুন্ ), জলধি (জলোধি), কাকলি(কাকোলি)।
৩। মধ্য অ-এর পরের ধ্বনিতে যদি ঋ-কার থাকে তাহলে সেই 'অ' ও-রূপে উচ্চারিত হয়। যেমন : উপবৃত্ত (উপোবৃত্-তো), লোকনৃত্য (লোকোনৃত্-তো)।
৪। মধ্য অ-এর পরের ধ্বনিতে যদি য-ফলা থাকে তাহলে সেই অ-এর উচ্চারণ ও-এর মতো হয়। যেমন : আলস্য(আলোশ্-শো), অসভ্য(অশোব্-ভো), অদম্য(অদোম্মো) ।
৫। মধ্য অ-এর পরে যদি ক্ষ, জ্ঞ-এই ২টি যুক্ত ব্যঞ্জনের যেকোনো ১টি থাকলে সেই 'অ' ও-রূপে উচ্চারিত হয়। যেমন : বিশেষজ্ঞ(বিশেশোগ্গোঁ),অদক্ষ(অদোক্-খো)।
অন্ত্য 'অ' ধ্বনি উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম :
১। শব্দের শেষে বা অন্ত্যে 'অ' ধ্বনির আগে 'ং' থাকলে, অ' ধ্বনি 'ও' ধ্বনিতে পরিবর্তিত হয়। যেমন- কংস (কঙ্-শো), ধ্বংস (ধ্বঙ্-শো), অংশ (অঙ্-শো) ইত্যাদি ।
২। শব্দের শেষে ‘অ' ধ্বনির পূর্বে র-ফলা বা ঋ-কার থাকলে শেষের ‘অ' ধ্বনি 'ও' ধ্বনিতে পরিবর্তিত হয়। যেমন- বিকৃত (বিক্-কৃতো), মৃত'(মৃতো), কৃশ (কৃশো) ইত্যাদি।
৩। -ঈয় বা -অনয় প্রত্যয়ান্ত শব্দে সংবৃত হয়ে 'ও' এর মতো উচ্চারিত হয় । যেমন- পানীয় (পানিয়ো), দেশীয় (দেশীয়ো) ইত্যাদি।
৪। বিশেষ্য শব্দের শব্দের অন্তে 'হ' ও বিশেষণ শব্দের অন্তে(শেষে) 'ঢ়' থাকলে অন্ত্য 'অ' বিলুপ্ত না হয়ে ও-কারের মতো উচ্চারিত হয়। যেমন- বিরহ (বিরহো), মোহ (মোহো), বিবাহ (বিবাহো), গাঢ় (গাrho)ইত্যাদি।
৫। শব্দের শেষে যুক্তবর্ণ থাকলে অন্তিম 'অ' ও-কারের মতো উচ্চারিত হয়। যেমন- কর্ম (কর্-মো), প্রাপ্ত (প্রাপ্-তো), শক্ত (শক্-তো) ইত্যাদি ।