কমা,সেমিকোলন,কোলন ও হাইফেনের ব্যবহার বা ব্যবহারের নিয়ম

কমা, সেমিকোলন, কোলন ও হাইফেন এর সঠিক ব্যবহার লেখার গঠন ও অর্থ স্পষ্ট করতে সাহায্য করে। কমা  একটি বাক্যের বিরতি নির্দেশ করে, সেমিকোলন দুটি সংশ্লিষ্ট অংশ যুক্ত করে, কোলন তালিকা বা ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে, আর হাইফেন শব্দ বা ধারণা সংযুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।

কমা বা পাদচ্ছেদ (,) এর ব্যবহার :

নিয়ম-১ : বাক্যে যেখানে সামান্য থামার প্রয়োজন হয়, সেখানে কমা বসে। এক (১) সংখ্যাটি উচ্চারণ করতে যতটা সময় লাগে, কমা চিহ্ন থাকলে ততটা সময় থামতে হয়।

নিয়ম-২ : বাক্য পাঠকালে সুস্পষ্টতা বা অর্থ বিভাগ দেখানোর জন্য, যেখানে অল্প বিরতির প্রয়োজন সেখানে কমা (,) ব্যবহার হয়। যেমন— সুখ চাও, সুখ পাবে পরিশ্রমে ।

নিয়ম-৩ : কোনো বাক্যে এক জাতীয় দু’য়ের বেশি পদ থাকলে শেষ পদ দুটোর মধ্যে ‘এবং’ বা ‘ও’ বসে। এ ছাড়া সব কয়টার আগে কমা বসে। যেমন— রানী, হেনা, আলেয়া ও হাসিনা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। দুঃখ-দৈন্য, রোগ-শোক মানুষের নিত্য সাথি। লোকটি সত্যবাদী, কর্মঠ, চরিত্রবান ও সাহসী। শুধু খাওয়া, পরা ও আমোদ করাই মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য নয় ।

নিয়ম-৪ : বাক্যে একটির বেশি অসমাপিকা ক্রিয়া থাকলে তাদের মাঝেও কমা বসে। যেমন- আমি সেখানে গিয়ে কথাবার্তা বলে, সবকিছু তোমাকে জানাব ।

নিয়ম-৫: জটিল বাক্যে প্রতিটি খণ্ড বাক্যের পরে কমা বসে। যেমন- যে সত্য কথা বলে, তাকে সকলে বিশ্বাস করে । যদি তুমি আস, আমি তোমার সাথে যাব।

নিয়ম-৬ : সম্বোধন পদ, উক্তিবাচক ক্রিয়া এবং বাড়ি বা রাস্তার নাম্বারের পরে কমা বসে। যেমন- আলম, এদিকে আস । তিনি বললেন, “পৃথিবী গোল।” ১২, বংশাল রোড, ঢাকা ।

নিয়ম-৭ : মাসের তারিখ লিখতে দিন ও মাসের পরে কমা বসে। যেমন— ১৩ অক্টোবর, মঙ্গলবার, ২০০২।

নিয়ম-৮ : নামের পর ডিগ্রি সূচক পদবি থাকলে প্রতিটির পরে কমা বসে। যেমন- মি. আলী হোসেন এম, এ, বি, এড ।

আরও পড়ুন : বিরাম চিহ্ন কাকে বলে?বিরাম চিহ্ন কয়টি ও ব্যবহারের নিয়ম: উদাহরণসহ

সেমিকোলন বা অর্ধচ্ছেদ (;) এর ব্যবহার :

নিয়ম-১ : কমার চেয়ে কিছুটা বেশি সময় যেখানে থামার দরকার হয়, সেখানে সেমিকোলন (;) বসে। বাক্যে কোনো যোগসূত্রথাকলে তাদের মধ্যে কিংবা, কিনা, হয়, নইলে প্রভৃতি অব্যয়যুক্ত খণ্ডবাক্যের পরে সেমিকোলন বসে। যেমন- গোলাপের মতো পলাশও দেখতে সুন্দর; কিন্তু তার গন্ধ নেই। সবই অদৃষ্টের দোষ; নইলে এমনটা হবে কেন?

কোলন (:) এর ব্যবহার :

নিয়ম-১ :  উদাহরণ ও দৃষ্টান্ত দিতে কোলন চিহ্ন ব্যবহার করা হয় । যেমন- ভাষা দু'প্রকার : সাধু ভাষা ও চলিত ভাষা । জামান সাহেবের তিন ছেলেঃ আযম, কামাল ও রেজা।

নিয়ম-২ : নাটকের সংলাপে বক্তার নামের পরে, কেউ কেউ দাঁড়ির পরিবর্তে কোলন ব্যবহার করেন। যেমন- রূপবান : রহীম, তুমি কিচ্ছু ভেব না, আমি তোমায় জড়ির জামা আর ঘোড়া কিনে দেব।

নিয়ম-৩ : অন্যের উক্তির অবতারণা করতেও কোন কোন ক্ষেত্রে কোলন ব্যবহার করা হয় । যেমন- আমার মুর্শিদ বললেন : পার্থিব মোহ ত্যাগ কর, তবেই সত্যের সন্ধান পাবে।

নিয়ম-৪ : দ্রব্যের তালিকা দিতে এই চিহ্ন ব্যবহার হয়। যেমন- বিদেশ থেকে বড় ভাই যা এনেছেন, তা হল : হাতঘড়ি ১০টি, টেপ রেকর্ডার ১টি, ক্যামেরা ১টি, সাবান ২ কাটুন, কম্বল ৩টি, স্বর্ণ ৫০০ গ্রাম এবং আরও কত কী।

নিয়ম-৫ : গল্প বা কাহিনীতে দু'জনের সংলাপের পূর্বে অর্থাৎ বাক্য আরম্ভ হওয়ার পূর্বেও কোলন ব্যবহার করা হয়। যেমন- কাজলরেখা কাঁকন দাসীকে বললঃ তুমি মন্দিরে যাও, আমি গোসল করে এসেই মৃত কুমারের সুঁচ দু'টি তুলব ।

হাইফেন(-) এর ব্যবহার :

নিয়ম-১: ‘হাইফেন কথাটির অর্থ সংযোগ বা যোগাযোগ চিহ্ন। দুই বা ততোধিক পদ মিলিত হয়ে সমাস বা সমাসের মত ব্যবহৃত হলে পদগুলোর মধ্যে ‘হাইফেন’ (-) ব্যবহার করা হয়। যথা— তরুন-তরুণী। ভাল-মন্দ। প্রীতি-উপহার। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা। 

Post a Comment

0 Comments