আমরা সাধারণত ধ্বনি, শব্দ বা আওয়াজকে একই অর্থে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু ব্যাকরণে ধ্বনি ও শব্দ একই অর্থ বুঝায় না। শব্দ বিশ্লেষণ করে আমরা কতগুলো ক্ষুদ্রতম অংশ পেয়ে থাকি। যেমন— বই (ব-অ-ই) শব্দটিতে আমরা তিনটি ক্ষুদ্রতম অংশ পাই। শব্দ তথা ভাষার এই ক্ষুদ্রতম অংশকে ধ্বনি বলে। প্রকৃতপক্ষে ভাষার মূলই হচ্ছে ধ্বনি।
ধ্বনি কাকে বলে ? কত প্রকার Class 1, 2, 3, 4 5
ধ্বনির সংজ্ঞা : যে কোন ভাষায় ব্যবহৃত কোন শব্দকে বিশ্লেষণ করলে যে ক্ষুদ্রতম অংশ পাওয়া যায়, তাকে ধ্বনি বলে। যেমন : বই = ব+ অ + ই , কলম = ক + অ + ল + অ + ম ইত্যাদি ধ্বনি।
ধ্বনির প্রকারভেদ :
ধ্বনি দুই প্রকার। যথা—
১. সরধ্বনি।
২. ব্যঞ্জনধ্বনি।
১। স্বরধ্বনি : যে ধ্বনি অন্য কোন ধ্বনির সাহায্য ব্যতীত নিজে নিজেই উচ্চারিত হতে পারে, তাকে স্বরধ্বনি বলে। যেমন— অ, আ, ই, ঈ ইত্যাদি।
২. ব্যঞ্জনধ্বনি : যে ধ্বনি স্বরধ্বনির সাহায্যে উচ্চারিত হয়, তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন— ক = ক + অ; খ = খ + অ ইত্যাদি।
আরও পড়ুন : স্বরধ্বনি: সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, উচ্চারণের ৫টি নিয়ম ও উচ্চারণস্থান
ধ্বনি কাকে বলে কত প্রকার Class 6, 7, 8, 9, 10
ধ্বনির সংজ্ঞা : কথা বলার সময় মানুষ তার বাগ্যন্ত্রের বিভিন্ন অংশের সাহায্যে যে অর্থপূর্ণ আওয়াজ উচ্চারণ করে, তাকে ধ্বনি বলে। যেমন – কলম = ক + অ + ল + অ + ম + অ।
ধ্বনির প্রকারভেদ :
বাংলা ভাষার ধ্বনিসমূহকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায় । যথা-
১. স্বরধ্বনি।
২. ব্যঞ্জন ধ্বনি ।
১। স্বরধ্বনি : যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস তাড়িত বাতাস বেড়িয়ে যেতে মুখ বিবরের কোথাও কোন প্রকার ঘর্ষণ বা বাধা পায় না, সেগুলোকে বলা হয় স্বরধ্বনি। যেমন- অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ ইত্যাদি ।
বাংলা ভাষায় স্বরধ্বনি আবার দুই প্রকার । যথা-
ক. মৌলিক স্বরধ্বনি ও
খ. যৌগিক স্বরধ্বনি।
ক. মৌলিক স্বরধ্বনি : যে সকল স্বরধ্বনি অন্য স্বরধ্বনির সাহায্য ছাড়াই উচ্চারিত হয়, সেগুলোকে মৌলিক স্বরধ্বনি বলে। যেমন- অ, আ, ই, উ, ঊ, এ, ও ।
খ. যৌগিক স্বরধ্বনি : যে সকল স্বরধ্বনি অন্য স্বরধ্বনির সাহায্য ছাড়া উচ্চারিত হতে পারে না, সেগুলোকে যৌগিক স্বরধ্বনি বলে। যেমন – অ + ই = ঐ, ও + উ = ঔ । বাংলা ভাষায় এ দুইটি যৌগিক স্বরধ্বনি আছে।
স্বরধ্বনির উচ্চারণের সময় শ্বাস বায়ুর কিছুটা পার্থক্য দেখা যায় । এই শ্বাস বায়ুর পার্থক্যের উপর ভিত্তি করে স্বরধ্বনিকে আবার দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
ক. হ্রস্বস্বর ও
খ. দীর্ঘস্বর ।
ক. হ্রস্বস্বর : যে স্বরধ্বনিরর উচ্চারণে কম সময় লাগে, তাকে হ্রস্বস্বর বলে। বাংলা ভাষায় হ্রস্বস্বর চারটি। যথা- অ, ই, উ, ঋ ।
খ. দীর্ঘ স্বর : যে স্বরধ্বনিগুলো উচ্চারণ করতে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লাগে, সেগুলোকে দীর্ঘস্বর বলে । বাংলা ভাষায় দীর্ঘস্বর সাতটি। যথা- আ. ঈ, ঊ, এ, ঔ, ও, ঔ ।
আরও পড়ুন : ব্যঞ্জনধ্বনি: সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, উচ্চারণের ৫টি নিয়ম ও উচ্চারণস্থান
২. ব্যঞ্জন ধ্বনি : যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস তাড়িত বাতাস বেড়িয়ে আসতে মুখ বিবরের কোথাও না কোথাও ঘর্ষণ লাগে বা বাধা প্রাপ্ত হয়, সে ধ্বনিগুলোকে ব্যঞ্জন ধ্বনি বলে। যেমন : ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ, ছ, জ, ঝ, ঞ, ট, ঠ, ড, ঢ, ণ, ত, থ, দ, ধ, ন, প, ফ, ব, ভ, ম, য, র, ল, শ, ষ, স, হ, য়, ড়, ঢ়, ৎ, ং, ঃ, ঁ।
ব্যঞ্জনধ্বনির প্রকারভেদ :
ব্যঞ্জন ধ্বনিগুলোকে প্রধানত পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায় । যথা-
১। ঘোষ ধ্বনি : ধ্বনি সৃষ্টির সময় যদি স্বরতন্ত্রীদ্বয়ে বিশেষভাবে কাঁপন সৃষ্টি হয়, তবে ধ্বনিগুলো হয় ষোষ বা নিনাদিত। এসব ধ্বনিকে ঘোষ ধ্বনি বলে। যেমন- গ, ঘ, ঙ, জ, ঝ, ঞ, ড, ঢ, ণ, দ, ধ, ন, ব, ভ, ম ইত্যাদি ।
২। অঘোষ ধ্বনি : ফুসফুস তাড়িত বাতাস যদি স্বরতন্ত্রদ্বয়ে কোন কাঁপন সৃষ্টি না করে, কেবল ছুঁয়ে যায় এবং ধ্বনির সৃষ্টি করে, তবে তাকে অঘোষ ধ্বনি বলে। যেমন- ক, খ, চ, ছ, ট, ঠ, ত, থ, প, ফ ইত্যাদি ।
৩। অল্পপ্রাণ ধ্বনি : যে সব ব্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারণ করতে অল্প পরিমাণ শ্বাস বায়ু নির্গত হয়, সেসব ধ্বনি অল্পপ্রাণ ধ্বনি বলে। যেমন- ক, গ, চ, জ, ট, ড, ত, দ, প, ব ইত্যাদি।
৪। মহাপ্রাণ ধ্বনি : যে সব ব্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারণের সময় বেশি পরিমাণ শ্বাস বায়ু নির্গত হয়, সেসব ব্যঞ্জন ধ্বনিকে মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে । যেমন- খ, ঘ, ছ, ঝ, ঠ, ঢ, থ, ধ, ফ, ভ ই ত্যাদি ।
৫। অনুনাসিক্য ধ্বনি : ঙ, ঞ, ণ, ন, ম উচ্চারণের সময় শ্বাসসহ কিছু বায়ু নাসিকা দিয়ে বের হয় বলে এগুলোকে অনুনাসিক্য ধ্বনি বলে।
ধ্বনি কীভাবে তৈরি হয় ?
ধ্বনি সৃষ্টির মূল কেন্দ্র হচ্ছে মানুষের ফুসফুস। মূলত ফুসফুস কোনো ধ্বনি সৃষ্টি করে না, ফুসফুস থেকে নির্গত বাতাসই বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে ধ্বনি সৃষ্টি করে। ফুসফুস থেকে বাতাস স্বরতন্ত্রী, মুখ বা নাকের ভেতর দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসার সময় জিভ, তালু, মাড়ি, দাঁত, ঠোঁট প্রভৃতি বাগ্যন্ত্রে নানাভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং তাতে বিভিন্ন ধ্বনি উচ্চারিত হয়। সুতরাং বলা যায়, ফুসফুস থেকে নির্গত বাতাসই বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে ধ্বনি সৃষ্টি করে। তবে সে বাতাসকে মুখবিবরের নানা জায়গায় আঘাত করতে হয়। এই আঘাত লাগার স্থানের ভিন্নতার কারণে ধ্বনিও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন-অ, আ, ই, ঈ, ক, খ, ত, প ইত্যাদি।