স্বরধ্বনি: সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, উচ্চারণের ৫টি নিয়ম ও উচ্চারণস্থান

স্বরধ্বনির সংজ্ঞা  : যে ধ্বনি অন্য কোনো ধ্বনির সাহায্য ব্যতীত নিজে নিজেই উচ্চারিত হতে পারে, তাকে স্বরধ্বনি বলে। বাংলা ভাষায় মোট ১১টি স্বরধ্বনি আছে। যেমন : অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ।

স্বরধ্বনির প্রকারভেদ :

বাংলা ভাষায় স্বরধ্বনি আবার দুই প্রকার । যথা- 

১. মৌলিক স্বরধ্বনি

২. যৌগিক স্বরধ্বনি।

১। মৌলিক স্বরধ্বনি : যে স্বরধ্বনিকে আর বিশ্লেষণ করা যায় না তাকে মৌলিক স্বরধ্বনি বলে। চলিত ভাষায় মোট আটটি মৌলিক স্বরধ্বনি আছে। যেমন : অ, আ, ই, উ, ঋ, এ, ঐ, ও ।

২। যৌগিক স্বরধ্বনি : একাধিক স্বরধ্বনি মিলে যে ধ্বনি গঠিত হয় তাকে যৌগিক স্বরধ্বনি বলে। বাংলা ভাষায় যৌগিক স্বরধ্বনি ২৫টি। 

✅যৌগিক স্বরবর্ণ হলো ২টি। আর যৌগিক স্বরধ্বনি রয়েছে ২৩ টি । লিখিত রূপ নেই দের । তাই এরা বর্ণ নয়। যেমন : ইউ, এও, আউ, অউ, অও, আইও ইত্যাদি। সুতরাং মোট যৌগিক স্বরধ্বনির সংখ্যা (২ + ২৩) = ২৫ টি।

👉উচ্চারণের হ্রাস-বৃদ্ধি অনুসারে বাংলা স্বরধ্বনিকে আবার দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা- 

১. হ্রস্বস্বর।  

২. দীর্ঘস্বর। 

১। হ্রস্বস্বর : যে স্বরধ্বনির উচ্চারণে কম সময় লাগে,তাকে হ্রস্বস্বর বলে। বাংলা ভাষায় হ্রস্বস্বর চারটি। যথা- অ, ই, উ, ঋ ।

২। দীর্ঘস্বর : যে স্বরধ্বনিগুলো উচ্চারণ করতে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লাগে, তাকে দীর্ঘস্বর বলে। বাংলা ভাষায় দীর্ঘস্বর সাতটি। যথা- আ. ঈ, ঊ, এ, ঔ, ও, ঔ ।

আরও পড়ুন : ব্যঞ্জনধ্বনি: সংজ্ঞা,প্রকারভেদ,উচ্চারণের ৫টি নিয়ম ও উচ্চারণস্থান

স্বরধ্বনি উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম :

১। না-বোধক শব্দের আদিতে 'অ' ধ্বনি থাকলে সেই অ-ধ্বনির উচ্চারণ বিবৃত হবে। যেমন- অটল (অটল্), অনাচার (অনাচার্) ইত্যাদি। 

২। শব্দের প্রথমে অ-যুক্ত র ফলা থাকলে অ-এর উচ্চারণ সাধারণত ও-কার হয়ে যায়। যেমন- ক্রম (ক্রোম্), গ্রন্থ (গ্রোন্-থো), ব্রত (ব্রোতো) ইত্যাদি। 

৩। শব্দের প্রথমে যদি এ-কার থাকে এবং তার পরে ই, ঈ, উ, ঊ, এ, ও, য়, র, ল, শ কিংবা হ থাকে তাহলে সাধারণত তা অবিকৃতভাবে উচ্চারিত হয়। যেমন- বেশ (বেশ্), বেগুন (বেগুন্), একুশ (একুশ্) ইত্যাদি। 

৪ । শব্দের শেষে 'হ' বা 'ঢ়' থাকলে 'ও' উচ্চারিত হয়। যেমন- দেহ(দেহো), বিবাহ (বিবাহো), দৃঢ় (দৃrho), গাঢ় (গাrho) ইত্যাদি । 

৫। একাক্ষর সর্বনাম পদের 'এ' সাধারণত বিবৃত এ-কার রূপে উচ্চারিত হয়। যেমন- কে, সে, এ, যে  ইত্যাদি।

স্বরধ্বনির বৈশিষ্ট্য :

১। জিভকে সামনে বাড়িয়ে পেছনে টেনে উচ্চারণ করতে হয়।

২। জিভ উপরে তুলে না নিচে নামিয়ে উচ্চারণ করতে হয় । 

৩। ওষ্ঠ ও অধরকে কুঁচকে বা মেলে দিয়ে উচ্চারণ করতে হয় ।

আরও পড়ুন : ধ্বনি কাকে বলে?কত প্রকার Class(1-10)উদাহরণ সহ।কিভাবে তৈরি হয়

স্বরধ্বনির উচ্চারণ স্থান : 

উচ্চারণস্থান অনুসারে স্বরধ্বনিগুলোকে ছয় ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—

১। কণ্ঠ্য বর্ণ

২। তালব্য বর্ণ

৩। মূর্ধন্য বর্ণ

৪। ওষ্ঠ্য বর্ণ

৫। কণ্ঠ তালব্য বর্ণ

৬। কণ্ঠৌষ্ঠ্য বর্ণ।

উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী স্বরধ্বনির শ্রেণীবিভাগ :

নিচের ছকে স্বরধ্বনির উচ্চারণ স্থানগুলো দেখানো হলো :

উচ্চারণ স্বরধ্বনির বর্ণ উচ্চারণস্থান অনুযায়ী নাম
কণ্ঠ + জিহ্বার মূল অ, আ কণ্ঠ বৰ্ণ
তালু + জিহ্বার মধ্য ই, ঈ তালব্য বর্ণ
মূর্ধা + জিহ্বাগ্র মূর্ধন্য বর্ণ
ওষ্ঠ্য বা ঠোঁট উ. উ ওষ্ঠ্য বর্ণ
কণ্ঠ + তালু এ, ঐ কণ্ঠতালব্য বর্ণ
কণ্ঠ + ওষ্ঠ্য ও, ঔ কণ্ঠৌষ্ঠ্য বর্ণ

Post a Comment

0 Comments