যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় প্রথমে নিউক্লিয়াস ও পরে সাইটোপ্লাজম মাত্র একবার বিভাজিত হয়ে একটি মাতৃকোষ থেকে সংখ্যক ক্রোমোজোম বিশিষ্ট এবং সমগুণসম্পন্ন দুটি অপত্য কোষের সৃষ্টি হয় তাকে মাইটোসিস বলে।
মাইটোসিস কোষ বিভাজনের পর্যায়:-
প্রোফেজ
- নিউক্লিয়াস আকারে বড় ।
- ক্রোমোজোমগুলোর জলবিয়োজন ঘটে এবং ক্রমাগত খাটো ও মোটা হয় ।
- ক্রোমোজোম সেন্ট্রোমিয়ার ব্যতীত অনুদৈর্ঘ্য বিভক্ত হয়ে ক্রোমোটিড তৈরি করে ।
- কোষের দিকে নিউক্লিয়াস ও নিউক্লিয়ার মেমব্রেনের অবলুপ্তি ঘটে ।
প্রো-মেটাফেজ
১. দুই মেরুযুক্ত স্পিন্ডলযন্ত্রের সৃষ্টি হয় ।
২. স্পিন্ডলযন্ত্রের দুই মেরুর মধ্যবর্তী স্থানকে ইকুয়েটর বা বিষুবীয় অঞ্চল বলে । এক মেরু হতে অন্য মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত তন্তুগুলোকে স্পিন্ডলতন্তু বলে । সেন্ট্রোমিয়ার সংযুক্তকারী তন্তুগুলোকে আকর্ষণ তন্তু বা ক্রোমোজোমাল তন্তু বলে ।
মেটাফেজ
১. ক্রোমোজোমগুলি বিষুবীয় অঞ্চলে বিন্যস্ত হয় বা মেটাকাইনেসিস ঘটে ।
২. প্রতিটি সেন্ট্রোমিয়ার বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য সেন্ট্রোমিয়ার তৈরি করে ।
আরও পড়ুন :- মাইটোসিস কোষ বিভাজন এর ধাপ এবং মাইটোসিস কোষ বিভাজনের তাৎপর্য
অ্যানাফেজ
- সেন্ট্রোমিয়ারের পূর্ণ বিভক্তির ফলে প্রতিটি ক্রোমাটিড একটি অপত্য ক্রোমোসোম তৈরি করে এবং মেরু অভিমুখে ধাবিত হয় ।
- মেরু অভিমুখী চলনে সেন্ট্রোমিয়ার অগ্রগামী ও বাহুদ্বয় অনুগামী হয় ।
- শেষ পর্যায়ে ক্রোমোজোমগুলি মেরুর কাছাকাছি পৌঁছে ।
টেলোফেজ
- ক্রোমোজোমগুলোর জলযোজন শুরু হয় ।
- ক্রোমোজোমগুলো ক্রমশ সরু ও লম্বা হতে থাকে এবং অদৃশ্য হতে থাকে ।
- নিউক্লিয়ার মেমব্রেন এবং নিউক্লিওলাসের আবির্ভাব ঘটে ।
- ফলে দু’মেরুতে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি হয় ।
মাইটোসিস ও মিয়োসিসের পার্থক্য :
মাইটোসিস | মিয়োসিস |
---|---|
১। সাধারণত জীবের দৈহিক কোষে হয়ে থাকে । |
১। সাধারণত জীবের জনন মাতৃকোষে হয়ে থাকে । |
২। হ্যাপ্লয়েড, ডিপ্লয়েড এবং পলিপ্লয়েড এর যে কোন কোষেই হতে পারে । |
২। কখনও হ্যাপ্লয়েড কোষে হয় না । |
৩। নিউক্লিয়াসের পর্যায় মধ্যক দশা দীর্ঘস্থায়ী । | ৩। নিউক্লিয়াসের পর্যায় মধ্যক দশা স্বল্পস্থায়ী। |
৪। ক্রোমোসোমের. দ্বিত্বন ঘটে ইন্টারফেজের অনুলিপন অংশে এবং এটি কখনও প্রোফেজ পর্যন্ত পৌছায় না । |
৪। ক্রোমোসোমের দ্বিত্বন আরম্ভ হয় – অনুরূপভাবে কিন্তু এটি প্রোফেজের প্যাকাইটিন পর্যন্ত চলতে পারে । |
৫.সাধারণত প্রোফেজ ক্রোমোসোমে ক্রোমোমিয়ার দেখা যায় না । |
৫। সাধারণত প্রোফেজ ক্রোমোসোমে ক্রোমোমিয়ার দেখা যায় । |
৬। প্রোফেজ স্বল্পস্থায়ী ও তুলনামূলকভাবে সরল, কাজেই একে কোন উপ-পর্যায়ে বিভক্ত করা হয় না। কখনও অদ্য, মধ্য ও প্রান্ত উপ-পর্যায়ের মধ্যে কোন গুণগত পার্থক্য নেই । |
৬। প্রোফেজ-১ অত্যন্ত জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী, কাজেই একে পাঁচটি উপ-পর্যায়ে বিভক্ত করা হয় এবং উপ-পর্যায়গুলোতে গুণগত পার্থক্য আছে । |
৭। সাধারণত হোমোলোগাস ক্রোমোসোম কখনো জোড়ার সৃষ্টি করে না ।
|
৭। হোমোলোগের পরস্পর আকর্ষণের ফলে জাইগোটিন উপ-পর্যায়ে হোমোলোগাস ক্রোমোসোম জোড়ার সৃষ্টি করে ।
|
৮। সাধারণত কোন কায়াজমা সৃষ্টি ও ক্রসিং ওভার হয় না, তাই ক্রোমোসোম অনুদৈর্ঘ্য বিভক্ত হয়। | ৮। সাধারণত কায়াজমা সৃষ্টি ও ক্রসিং ওভার হয়, তাই হোমোলোগাস ক্রোমোসোমের মধ্যে জিন বিনিময় ঘটে। |
৯। মেটাফেজ-এ সেন্ট্রোমিয়ারসহ ক্রোমোসোম অনুদৈর্ঘ্যে বিভক্ত হয় । | ৯। মেটাফেজ-১ এ সেন্ট্রোমিয়ার অবিভক্ত থাকে । |
১০। অ্যানাফেজে প্রতিটি ক্রোমোসোম দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে দুই মেরুতে যায়, তাই প্রতি মেরুতে ক্রোমোসোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার সমান । | ১০। অ্যানাফেজ-১ এ অবিভক্তপূর্ণ ক্রোমোসোম মেরুতে পৌঁছায়, তাই মেরুতে ক্রোমোসোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার অর্ধেক হয় । |
১১। নিউক্লিয়াস ও ক্রোমোসোম একবার বিভক্ত হয়। | ১১। নিউক্লিয়াস দু’বার এবং ক্রোমোসোম একবার বিভক্ত হয় । |
১২। এ বিভাজনে দুটি অপত্য কোষের সৃষ্টি হয়। | ১২। এ বিভাজনে চারটি অপত্য কোষের সৃষ্টি হয় । |
১৩। অপত্য কোষের ক্রোমোসোমের গুণাগুণ মাতৃকোষের ক্রোমোসোমের সম গুণসম্পন্ন হয়। | ১৩। অপত্য কোষের ক্রোমোসোমের গুণাগুণ মাতৃকোষের ক্রোমোসোম হতে ভিন্নতর গুণসম্পন্ন হয় । |