যমুনা সেতু - বাংলা প্রবন্ধ রচনা

উপস্থাপনা : 

সুষ্ঠু যোগাযোগ যে কোন দেশের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । বিশেষ করে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য যোগাযোগ নেটওয়ার্কের গুরুত্ব অপরিসীম তাই বহু বছর প্রচেষ্টার পর অবশেষে যমুনা নদীর উপর এই যমুনা সেতুটি নির্মিত হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সূচিত হয়েছে নতুন দিগন্ত ।

যমুনা সেতুর স্থান নির্বাচন : 

সেতুর স্থান নির্দিষ্টকরণের জন্য প্রথমে সাতটি করিডোর নির্বাচন করা হয় । অতঃপর বিভিন্ন পরীক্ষা- নিরীক্ষা শেষে নদীর পশ্চিম পাড়ে সিরাজগঞ্জের সদর থানার সায়দাবাদ ইউনিয়নের বড় শিমুলিয়া পঞ্চসোনা গ্রাম আর পূর্ব তীরে টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী থানার দূর্গাপুর ইউনিয়নের ডুরিয়া গ্রাম এলাকায় সেতুর স্থান নির্ধারণ করা হয় ।

যমুনা সেতুর প্রয়োজনীয়তা : 

যমুনা নদী গোটা উত্তর বঙ্গকে রাজধানী ও দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। ফলে দেশের এক-তৃতীয়াংশ জনগণের যোগাযোগ 'ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড অবরুদ্ধ অবস্থায় পড়েছিল। যমুনা সেতু নির্মাণের ফলে যুগ যুগ ধরে উত্তরাঞ্চলের বিপুল জনগোষ্ঠীর মনে যমুনা নদীর উপর একটি সেতুর স্বপ্ন আঁকা ছিল ।

আরও পড়ুন :- সংবাদপত্র - বাংলা রচনা [ Class - 6, 7, 8 ,9 ,10] - PDF  ৩টি

সেতু নির্মাণের পদক্ষেপ : 

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পর যমুনা সেতু নির্মাণের চিন্তাভাবনা শুরু হয়। ১৯৬৪, ১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদে সেতু নির্মাণের প্রস্তাবটি গৃহীত হয় । স্বাধীনতার পর শেখ মজিবুর রহমান জাপান সরকারের কাছে সেতু নির্মাণের ব্যাপারে সাহায্য কামনা করেন পরে প্রেসিডেন্ট মেজর জিয়াউর রহমান এই ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করেন। পরে ১৯৮২ সালে এরশাদ এই ব্যাপারে নতুন করে চিন্তা ভাবনা করেন এবং ১৯৮৬ সালে তিনি সেতুর একটি ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন ।

সেতু নির্মাণের কাজ : 

১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জাপান ও (এডিবি) সহযোগিতায় এই সেতুর বাস্তবায়নে আরো সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন । পরে ১৯৯৪ সালের ১০ই আগষ্ট পুরপুরী যমুনা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় নির্মাণ কাজ। পরে বর্তমান সরকারের আমলে এই সেতুর কাজ শেষ হয় ।

সেতুর বিবরণ :

সেতুটি ৪৯ টি স্প্যানের উপর নির্মিত। এটি ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, ১৮.৫০ মিটার প্রস্থ। সেতুর প্রতি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ৯৯.২৭৫ মিটার। সেতুর সাথে উত্তর বঙ্গের রেল লাইন, বিদ্যুৎ লাইন, গ্যাস লাইন, টেলিফোন লাইন, সড়ক যোগাযোগের সাথে সব কিছুর যোগাযোগ শুরু হয় । এই সেতু নির্মাণ করতে ৬৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়েছে। এই টাকার মধ্যে বিশ্বব্যাংক ২০০ মি. মা. ডা. এডিবি ২০০ মি. মা. ড. জাপান ২০০ মি. মা. ড. বাংলাদেশ ৯৬ মি. মা. ডলার দিয়েছে।

আরও পড়ুন :- বাংলাদেশের ফল - বাংলা রচনা | Sikkhagar

সেতুর বিভিন্ন অংশ : 

যমুনা সেতু একটি জটিল প্রকল্প অর্থনৈতিক, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে এটি দেশের একক বৃহত্তম কারিগরি প্রকল্প । সেতুর আটটি অংশ আছে । যথা-১। কন্ট্রাক্ট : মূল সেতু ২। নদী শাসন ৩। পূর্ব তীরের সংযোগ সড়ক ৪ । পশ্চিম তীরের সংযোগ সড়ক ৫। পূর্ব তীরের সংযোগ রেলপথ ৬। পশ্চিম তীরের সংযোগ রেলপথ ৭। পূর্ব তীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ৮। পশ্চিম তীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এছাড়াও রয়েছে প্রকল্প এলাকায় পুনর্বাসন প্রক্রিয়া।

সেতুর উদ্বোধন : 

২৩শে জুন ১৯৯৮ প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর উদ্বোধন করেন, তখন উত্তর বঙ্গের মানুষ সহ সারাদেশের মানুষের মন আনন্দে উৎপুল্ল ছিল ।

সেতু থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও যমুনা সেতু স্থাপনের পর দেশের অর্থনীতিতে এক নব যুগান্তের দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো । যার কারণে বর্তমানে দেশের সকল স্থানের যোগাযোগ ও উত্তর বঙ্গের মালামাল এখন আমরা সহজে ভোগ করতে পারি। আগে উত্তর বঙ্গের মালামাল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সেখানে পঁচে যেতো। কিন্তু এখন আর তা হয় না। যার ফলে দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন হয়েছে।

উপসংহার : 

যমুনা সেতু পৃথিবীর একাদশতম বৃহত্তম সেতু। বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এ সেতু এনে দিয়েছে সাফল্যের সোনালী দিগন্ত । তবে এ সেতু রক্ষণাবেক্ষণ যথাযথ না হলে এবং এর স্থায়িত্বনিশ্চিত না করে গেলে তা হবে জাতির জন্য দুঃখ জনক । কাজেই আমাদের দরিদ্র দেশের প্রেক্ষাপটে যমুনা সেতুর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। 

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট-এর অভিমত হল, "The Jamuna Multifarious Bridge must go a long way to develop communication system in Bangladesh which benefits the whole world."

Post a Comment

0 Comments