Ads Area

কৃষিকাজে বিজ্ঞান - বাংলা রচনা ২০ পয়েন্ট

(toc) Table Of Contens

উপস্থাপনা :

আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ। মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে নিত্য নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে সভ্যতার চরম উন্নয়ন সাধন করেছে। সভ্যতার ঊষালগ্নে মানুষ যেদিন মাটিতে বীজ বুনে ফল ও ফসল ফলাতে শুরু করল, সেদিন থেকেই ফসল উৎপাদনের কাজে নতুন পন্থার উদ্ভাবন হলো। শুরু হলো কৃষি কাজে বিজ্ঞানের প্রয়োগ। ফলে বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি ফসল উৎপাদনের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে।

কৃষি ও সভ্যতা : 

কৃষি মানুষের আদিম পেশা। কৃষি কাজের মধ্য দিয়েই যাত্রা শুরু মানব সভ্যতার। সভ্যতার অগ্রযাত্রায় বিভিন্ন স্তরে মানুষ বিভিন্ন পেশা গ্রহণ করলেও খাদ্যের উৎস হিসেবে কৃষির ভুমিকা আজও গৌরবময় । দার্শনিক রুশো বলেন, “সবচেয়ে বড় এবং সর্বাধিক গৌরবমণ্ডিত শিল্প হচ্ছে কৃষি। "

কৃষির তাৎপর্য ঃ 

কৃষি ও মানব জীবন ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার শ্রেষ্ঠ চাবিকাঠি হচ্ছে কৃষি । মানুষের হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত সঞ্চারিত হয়ে যেমন দেহ যন্ত্রকে সবল ও সচল রাখে, কৃষিও তেমনি মানুষকে যোগান দিয়ে থাকে বেঁচে থাকার অপরিহার্য উপকরণ সামগ্রী ।

বিজ্ঞানের জয়যাত্রা : 

যেদিন থেকে মানুষ আগুন জ্বালাতে শেখে, যেদিন সে পাথরের অস্ত্র নিয়ে বন্য পশুর সঙ্গে যুদ্ধ আরম্ভ করেছে, যেদিন সে চাকা গড়তে পেরেছে, সেদিন থেকেই বিজ্ঞানের জয়যাত্রা শুরু হয়েছে। সেদিন মানুষ আবিষ্কার করল অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় তার ক্ষুদ্র অবয়বে সূক্ষ্ম অথচ প্রবল বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন মস্তিষ্ক। 

সে প্রকৃতির রহস্য ভেদ করার জন্য নব নব তত্ত্ব আবিষ্কার করল। প্রকৃতিকে আবিষ্কার করার নেশায় অস্থির হয়ে উঠল। কিছুতেই তার তৃপ্তি নেই। তাই প্রকৃতির দেয়া শস্য সম্পদে সে সন্তুষ্ট থাকতে পারে নি। আধুনিক কৃষিবিদ্যা রপ্ত করে নিজের রুচির পরিতৃপ্তি পরিপুষ্টি সাধন করছে।

আরও পড়ুন :-  কৃষি কাজে বিজ্ঞান - রচনা [ Class - 6, 7, 8, 9 ,10 ] 

কৃষি ও কৃষিকাজ :

মাটি কর্ষণ করে ফসলের সম্ভার ফলানোর প্রক্রিয়াটিই কৃষিকাজ নামে পরিচিত। আদিকালে মানুষ অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে কৃষিকাজের উদ্ভাবন করে। প্রকৃতির দানকে নিজের শক্তি ও সৃষ্টিক্ষমতায় রূপান্তর ঘটিয়ে সে গড়ে তুলেছে কৃষি ব্যবস্থা। কৃষির প্রথম উদ্দেশ্য মুখের আহার জুটানো হলেও পরবর্তীতে মানুষ শিল্প কাঁচামাল থেকে শুরু করে জীবনের সকল প্রকার উপকরণ কৃষি থেকে সংগ্রহ করতে শিখেছে। 

শিল্পযুগে এসে কৃষিক্ষেত্রেও মানুষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও উপকরণের ব্যবহার করেছে। ফলে আজ ভোঁতা কর্ষণ সামগ্রী ও পশুশক্তির পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি । ফলে আদিম এই পেশাটিতে আজ এসেছে বৈচিত্র্য ও গতির ছোঁয়া ।

কৃষিকাজের গুরুত্ব : 

কৃষিকাজ দিয়েই মানুষ পৃথিবীতে স্বপোষিত অর্থনৈতিক জীবনের সূত্রপাত করেছিল এই পৃথিবীতে এবং এখনো কৃষির ওপর নির্ভর করে মানবজীবনের ধারা বয়ে চলেছে। সারা বিশ্বের মানুষের খাদ্য, শিক্ষা উপকরণ, গৃহ ও অবকাঠামোগত উপকরণের মুখ্য যোগানদাতা কৃষি। বিশ্বের মোট আয়ের ২৭ ভাগ আসে কৃষি থেকে। 

মানুষের প্রয়োজন বিবেচনা করে কৃষিক্ষেত্রে অনবরত গবেষণা চলছে এবং এর পরিণামে উন্নত দেশগুলো তাদের কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। বেশি করে ফলন বাড়িয়ে উন্নত দেশ একদিকে যেমন নিজেদের অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য আনছে, তেমনি ঘাটতি দেশের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করে মানবজাতিকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করছে।

কৃষিখাতে বিজ্ঞানের প্রভাব : 

একবিংশ শতাব্দীর এই ঊষালগ্নে বিশ্ববাসীর জীবনে বিজ্ঞান এতটাই প্রভাব ফেলেছে যে, বিজ্ঞান ছাড়া আজ সভ্য মানবজীবনই কল্পনা করা যায় না। কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়োগে ফসল উৎপাদনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। উন্নত বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি প্রয়োগে আজ মরুভূমিও হয়ে উঠছে শস্যশ্যামল। 

মানুষ আজ উদ্দাম উচ্ছৃঙ্খল নদীস্রোতকে বশীভূত করে উষ্ণ মরুপ্রান্তরকে করছে পানিসিক্ত। অনুর্বর কঠিন ভূমিকে উর্বর করে তাকে করা হচ্ছে শস্যবর্তী। এতে শস্য উৎপাদনে সূচিত হয়েছে যুগান্তকারী বিপ্লব  

কৃষি কাজে বিজ্ঞানের প্রয়োজন : 

পৃথিবীতে জনসংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, অথচ কৃষি জমি বাড়ছে না; বরং অধিক হারে বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে বলে কৃষি জমি ক্রমশ কমছে। অপরদিকে উৎপাদনও বাড়ছে না। বিশেষত আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রাচীন পদ্ধতির চাষাবাদের ফলে উৎপাদিত ফসল বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। 

অথচ উন্নত দেশগুলোতে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারে উৎপাদন বাড়ছে। আমাদের দেশেও মানুষের খাদ্যাভাব পূরণের জন্য কৃষিকাজে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন :-  দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা ১৫ পয়েন্ট-Class 6,7,8,9,10| পিডিএফ

বাংলাদেশের কৃষি : 

সর্বক্ষেত্রে আমাদের পশ্চাৎপদতার পটভূমিতে কৃষিক্ষেত্রেও আমাদের প্রত্যাশিত অগ্রগতি আসেনি। কৃষি ও কৃষক বলতেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে জীর্ণ-দীর্ণ কৃষকের মুখ, কংকালসার বলদ আর প্রকৃতিনির্ভর উৎপাদন প্রক্রিয়া । কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য কৃষকের ছবি অঙ্কন করেছেন এভাবেই—

“বহুদিন উপবাসী নিঃস্ব জনপদে, মাঠে মাঠে আমাদের ছড়ানো সম্পদ; কাস্তে দাও আমার এ হাতে।”

আমাদের আজ থেকে অর্ধশত বছর আগে। আজও যে অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে তা জোর দিয়ে আমরা বলতে পারি না। অথচ আমাদের কৃষক সম্প্রদায় জমি চাষের জন্য গবাদি পশুচালিত সনাতন লাঙল ব্যবহার করে। কৃষি প্রযুক্তি এখনো আমাদের দেশে সুলভ নয়। প্রযুক্তি জ্ঞানও আমাদের সীমিত। ফলে আমাদের কৃষি আজও পিছিয়ে রয়েছে।

কৃষিকাজে বিজ্ঞানের ব্যবহার : 

উৎপাদনের সকল স্তরে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে চাষাবাদ পদ্ধতিতে বিজ্ঞানের প্রয়োগ করা যেতে পারে । এ পদ্ধতিতে প্রাচীন আমলের কাঠের লাঙল, বলদ, মই, নিড়ানি, কোদাল, কাস্তে ইত্যাদির পরিবর্তে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি, যেমন- জমি চাষের জন্য ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, বীজ বোনার জন্য সিডলিং, মই দেয়ার জন্য লেভেলার, পানি সেচের জন্য গভীর অগভীর নলকূপ, পাওয়ার পাম্প, আগাছা পরিষ্কারের জন্য উইডার, ফসল সংগ্রহের জন্য হারভেস্টার, ফসল মাড়াইয়ের জন্য থ্রেসার ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়।

কৃষি গবেষণায় বিজ্ঞান : 

কৃষি গবেষণায় বিজ্ঞানের প্রয়োগ অপরিহার্য। যেমন-

ক. কৃষিজাত দ্রব্য বা পণ্যের ব্যবহার, সংরক্ষণ ও নতুন ধরনের বীজ উদ্ভাবন ৷

খ. অপ্রচলিত কৃষিজাত দ্রব্য বা পণ্যের ব্যবহার এবং চাষাবাদ সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্য সংগ্রহ।

গ. পরিবেশ ও আবহাওয়া দূষণের সাথে সম্পর্ক বিধান করে কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহারোপযোগী সার ও কীটনাশক প্রভৃতির প্রয়োগ নিশ্চিত করা।

বাংলাদেশে বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষিকাজের গুরুত্ব : 

বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ। এ দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদার বলতে গেলে সবটাই যোগান দেয় কৃষি। অথচ ক্ষুদ্রায়তন বাংলাদেশের জনসংখ্যার বিপুলতা অপেক্ষা কৃষি জমির পরিমাণ খুবই অপ্রতুল । আমাদের দেশের প্রচলিত প্রাচীন চাষাবাদ পদ্ধতি জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সমতা বজায় রেখে কৃষিক্ষেত্রে ফসল উৎপাদন করতে পারছে না। 

আমাদের মাটির তুলনায় জাপানের মাটির স্বাভাবিক উৎপাদন ক্ষমতা একচতুর্থাংশ। অথচ তারা কৃষিক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে আমাদের চেয়ে কম জমিতে সর্বাধিক ফসল ফলিয়ে খাদ্য সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে। তাই আমাদের দেশে উন্নত বীজ ও কৃষিক্ষেত্রের মান অনুযায়ী রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রয়োগ ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে।

আরও পড়ুন :-  মানব কল্যাণে বিজ্ঞান - বাংলা  রচনা ২০ পয়েন্ট - PDF

কৃষক ও কৃষি : 

কালের স্রোতধারায় গোটা বিশ্ব আজ অপ্রতিহত গতিতে ছুটে চলেছে উন্নয়নের স্বর্ণশিখরের দিকে । অথচ বাংলাদেশের কৃষক আর কৃষি আজও সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। মানুষের জীবনকে নিরাপত্তা দানের ব্যাপারে কৃষির বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তার সাথে বিজ্ঞানের সংযোগ ঘটেছে ঠিকই, কিন্তু ব্যাপক সম্পর্ক গড়ে ওঠে নি। উন্নত দেশগুলোতে কৃষিকাজে বিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠলেও আমাদের দেশে তেমন অগ্রগতি সাধিত হয় নি। 

কৃষিব্যবস্থা এখনো প্রাচীন পদ্ধতিতেই চলছে। উন্নত কৃষি পদ্ধতির সঙ্গে এদেশের নিরক্ষর কৃষক সমাজ এখনো পরিচিত হয়ে ওঠতে পারে নি। আধুনিক কৃষিব্যবস্থা প্রয়োগের মতো জ্ঞান ও অর্থ তাদের নেই। তাই ফসলের উৎপাদন বাড়ছে না। ফলে অনেকটা ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশের কৃষকসমাজ প্রকৃতির খেয়ালখুশির খেলনা হয়ে ধুকে ধুকে মরছে।

বিজ্ঞানের দান : 

কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের দান বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যাটি সমগ্র বিশ্বে বিদ্যমান থাকায় কৃষির উৎপাদন বাড়িয়ে তা মোকাবিলা করার উদ্যোগ উন্নত বিশ্বে দেখা দেয়। ফলে, কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগ হওয়ায় কৃষির অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছে। চাষাবাদ পদ্ধতি এখন যান্ত্রিককরণ করা হয়েছে। কৃষি উৎপাদনের সামগ্রিক ব্যবস্থায় বিজ্ঞান অবদান রেখেছে। 

বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণে বিজ্ঞানের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। সার, সেচ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যবহার হচ্ছে। বিভিন্ন কৃষিজ ফসল নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে উন্নতমানের এবং বেশি পরিমাণে ফসল ফলনের উপায় উদ্ভাবন করা হয়েছে। এসব অগ্রগতির ফলে বিশ্বের বহু দেশে কৃষির উৎপাদন প্রচুর বেড়েছে এবং উদ্বৃত্ত ফসল বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।

বিভিন্ন দেশে কৃষিকাজে বিজ্ঞান : 

উন্নত দেশসমূহে আজ কৃষিকাজ সম্পূর্ণভাবে বিজ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল। জমি কর্ষণ, বীজ বপন, সেচকার্য, ফসল কাটা, মাড়াই, বাছাই ইত্যাদি সব কাজ আজ যন্ত্রের সাহায্যে সম্পাদন করা হয়। ট্রাক্টরের সাহায্যে জমি চাষ করে মেশিন দিয়ে জমিতে বীজ বপন করা হয়। বপনের জন্য সংরক্ষিত বীজ বাছাই কাজও যন্ত্রের সাহায্যে করা হয়। 

জমিতে প্রয়োজনমত সার দেয়া কিংবা ফসলে পোকা লাগলে পোকা দমনের জন্য ওষুধ ছিটানোর কাজও যন্ত্রের সাহায্যে করা হয়। আজকের যুগে ফসলের জমিতে সেচের জন্য মানুষ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে না। অনাবৃষ্টি বা অতিবৃষ্টি শস্য জন্মানোর অন্তরায় হয় না। আজ মানুষ গভীর নলকূপ এবং পাম্পের সাহায্যে জমিতে সেচ দেয়। ফসল কাটা যন্ত্রের সাহায্যে একদিকে ফসল কাটছে, অন্যদিকে মাড়াই হয়ে শস্য ও খড় আলাদা হয়ে যাচ্ছে। 

উন্নত দেশের লোকেরা কৃষিকাজকে যান্ত্রিক করে ফেলেছে। শীতপ্রধান দেশে ‘শীত নিয়ন্ত্রণ’ ঘর বানিয়ে শাকসবজি এবং ফলমূল সংরক্ষণ করছে। বিজ্ঞানের সাহায্যে বর্তমানে শুষ্ক মরুভূমির মতো জায়গাতে সেচ, সার ও অন্যান্য বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় চাষাবাদ করে সোনার ফসল ফলাচ্ছে। যার ফলে, বিজ্ঞান কৃষিকাজে এক যুগান্তকারী বিপ্লব সৃষ্টি করেছে।

আরও পড়ুন :-  কম্পিউটার - প্রবন্ধ রচনা : ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণী | PDF

বাংলাদেশে কৃষিকাজে বিজ্ঞান : 

আমাদের দেশেও এখন কৃষিকাজে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। খণ্ডবিখণ্ডতার কারণে জমি কর্ষণে অবশ্য ব্যাপকভাবে ট্রাক্টর ব্যবহার করা যাচ্ছে না। মানুষ এখন আর চাতকের ন্যায় বৃষ্টিধারার জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে না। এখন সেচের জন্য ব্যবহার করা হয় গভীর নলকূপ এবং মেশিনচালিত পাম্প। বপনের জন্য ব্যবহার করা হয় উন্নত ধরনের বীজ। 

বীজ সংরক্ষণে সাহায্য নেয়া হয় বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির। রাসায়নিক সার ব্যবহার করে ফসল উৎপাদনের মাত্রা বাড়নো হচ্ছে। আগে যে জমিতে এক ধরনের ফসল হত, বিজ্ঞানের সাহায্যে এখন সেখানে তিন ধরনের ফসল হয়। তবে আমাদের দেশের কৃষিকাজ এখনও সম্পূর্ণ যান্ত্রিক করা সম্ভব হয়নি। চাষাবাদে বিজ্ঞানকে কাজে লাগাতে পারলে আমাদের খাদ্য সমস্যা সমাধান করা যাবে, এটা নিশ্চিত
বলা যায়।

কৃষিতে বিজ্ঞানের অবদান : 

অন্যান্য ক্ষেত্রের মত কৃষি কাজেও বিজ্ঞানের অবদান রয়েছে। বর্তমানে কৃষি কাজে বিজ্ঞানের প্রয়োগ হওয়ায় কৃষির যথেষ্ট উন্নতি সাধিত হয়েছে। চাষাবাদ পদ্ধতি এখন যান্ত্রিকীকরণ করা হয়েছে। আদিম লাঙ্গল-মই প্রযুক্তি পরিহার করে বর্তমানে ট্রাক্টরের সাহায্যে অতি স্বল্প সময়ে, স্বল্প পরিশ্রমে অধিক পরিমাণ জমি চাষাবাদ করা হচ্ছে। কৃষি উৎপাদনের সামগ্রিক ব্যবস্থায় বিজ্ঞান অবদান রেখেছে।

কৃষিকার্যে বিজ্ঞানের সফল প্রয়োগের উপায় : 

কৃষিভিত্তিক দেশ হিসেবে কৃষির উন্নতির ওপরই আমাদের দেশের সামগ্রিক উন্নতি নির্ভরশীল । কিন্তু কৃষকদের অজ্ঞতার জন্য বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতি আমরা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে পারছি না। তাই প্রথমেই দেশে শিক্ষার হার বাড়াতে হবে। কৃষকদের আধুনিক কৃষি পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় করাতে হবে। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি কৃষি সংস্থা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং প্রযুক্তিতে কৃষির ওপর গবেষণা চালাচ্ছে। 

দেশের কৃষকদের এ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল জানিয়ে দেবার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তারা যাতে বিজ্ঞানসম্মতভাবে কৃষিকাজ করতে পারে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। কৃষিবিদ্যায় শিক্ষাপ্রাপ্ত কৃষি কর্মীদের গ্রামে গ্রামে কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। হাতে-কলমে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রতিটি কৃষককে সচেতন ও দক্ষভাবে গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশের কৃষি কাজে বিজ্ঞানের সর্বাঙ্গীন প্রয়োগ ত্বরান্বিত হবে এবং এদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি অধিকতর নিশ্চিত হবে।

দৃষ্টান্ত : 

বিস্ফোরণোন্মুখ জনসংখ্যার ভারে বাংলাদেশ আজ ন্যুব্জ। জনসংখ্যার গুরুভার সৃষ্টি করেছে প্রকট খাদ্য সংকট। আমাদের দেশের প্রচলিত প্রাচীন পদ্ধতি জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সমতা বজায় রেখে কৃষিক্ষেত্রে ফসল উৎপাদন করতে পারছে না। আমাদের মাটির তুলনায় জাপানের মাটির স্বাভাবিক উৎপাদন ক্ষমতা এক-চতুর্থাংশ। 

অথচ তারা কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের চেয়ে কম জমিতে সর্বাধিক ফসল ফলিয়ে খাদ্য সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন, চীন, কোরিয়া প্রভৃতি দেশের কৃষিবিজ্ঞানকে আমরা ব্যবহার করে উপকৃত হতে পারি ।

উপসংহার : 

বিজ্ঞান জীবনের সকল দিকেই উন্নতির স্বাক্ষর রেখেছে। কৃষিকাজে বিজ্ঞানের অবদান অনন্য। আমাদের জাতীয় উন্নয়ন সম্পূর্ণরূপে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাই একমাত্র আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে আমরা আমাদের খাদ্য সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি পরনির্ভরশীলতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পারি।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad