উপস্থাপনা :
মানুষ তথা জীবজগতের বাসযোগ্য এলাকাই হলো তার পরিবেশ। জীবজগৎ ও তার পরিবেশের মধ্যে প্রতিনিয়ত জীবন রক্ষাকারী উপকরণের আদান-প্রদান চলে। এ আদান-প্রদানের ভারসাম্যের ওপর জীবের অস্তিত্ব সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। পরিবেশের এ ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে পরিবেশ দূষণ ঘটে। আর পরিবেশ দূষণের কারণে মানব সভ্যতা আজ চরম হুমকির সম্মুখীন।
পরিবেশ দূষণ :
আমাদের চারপাশের অবস্থাকেই বলা হয় পরিবেশ। অর্থাৎ আমাদের বাসস্থান দালানকোঠা, ঘরবাড়ি, গাছপালা, মাটি, বায়ু, জলাশয় সবকিছু নিয়েই তৈরি হয় পরিবেশ। আর কোনো কারণে যখন এই পরিবেশ তার স্বাভাবিকতা হারায় বা পরিবেশে বিভিন্ন উপাদানের কাঙ্ক্ষিত মাত্রা বিনষ্ট হয় তখন সেই পরিবেশ জীবজগতের জন্য অস্বস্তিকর ও অসহনীয় হয়ে ওঠে। এ অস্বাভাবিক বা অসুস্থ পরিবেশই হলো দূষিত পরিবেশ, যাকে আমরা পরিবেশ দূষণও বলে থাকি।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা ( ২০ পয়েন্ট ) – pdf
পরিবেশ দূষণের স্বরূপ :
আমাদের চারপাশের আলো, বাতাস, মাটি, পানি, পাহাড়-পর্বত, নদীনালা, সাগর, উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের সমন্বয়ে সৃষ্ট সুনিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনাই হলো পরিবেশ। কিন্তু আধুনিক সভ্যতা এ পরিবেশের রূপ পাল্টে দিয়েছে। মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে পরিবেশ দূষণ প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। তবে বর্তমান শতকেই এটি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
মানুষের ধ্যানধারণা, চিন্তাচেতনা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারের ফলে মানুষ প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে, নতুন সভ্যতার দ্বারপ্রান্তে। এর ফলে আরম্ভ হয়েছে নগরায়ণ, গড়ে উঠেছে শিল্প কলকারখানা। যাতায়াতের সুবিধার্থে পথে নেমেছে ইঞ্জিনচালিত যানবাহন । ফলে পরিবেশ দূষণও বেড়ে চলছে এবং তা ক্রমে অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
পরিবেশ দূষণের সূত্রপাত :
মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে পরিবেশ দূষণের সূত্রপাত ঘটে। আদিম যুগের পৃথিবীতে যখন থেকে আগুনের ব্যবহার শুরু হয় তখন থেকেই প্রাণ প্রদায়ী অক্সিজেনের ধ্বংস শুরু হয়। আর এই অক্সিজেন ধ্বংসের সাথে সাথে এর ধোঁয়া ও ভস্মকণায় পরিবেশ দূষিত হয়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের পাশাপাশি অসংখ্য শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে। নগরজীবনের প্রাচুর্যে যানবাহনের আধিক্য দেখা দেয় রাজপথে, সবুজ বিপ্লব ঘটাতে আসে কীটনাশক। আণবিক ও পারমাণবিক বোমার তেজষ্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে আকাশে-বাতাসে। ফলে পরিবেশ দূষণ বেড়ে যায় ব্যাপকভাবে।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশের বন্যা ও তার প্রতিকার রচনা (২০ পয়েন্ট)
পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্টের কারণ ও প্রতিক্রিয়া :
পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট তথা পরিবেশ দূষণের নানাবিধ কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে- ১. জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ২. বনজ সম্পদের বিনষ্ট, ৩. বায়ু দূষণ, ৪. পানি দূষণ, ৫. শব্দ দূষণ এবং ৬. গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়ার বিরূপ প্রভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য আজ হুমকির সম্মুখীন।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি :
ব্যাপকহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পরিবেশের জন্য এক মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপে লোকালয়ের প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হয়।
বনজ সম্পদের বিনষ্ট :
বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি দেশের মোট আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন । সে তুলনায় আমাদের দেশে বনভূমি অপ্রতুল। আমাদের দেশে বনভূমির পরিমাণ মোট আয়তনের শতকরা ১৬ ভাগ। তদুপরি নির্বিচারে বৃক্ষ কর্তনের ফলে বনভূমির পরিমাণ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এ নিয়ে দেশবাসী আজ শঙ্কিত।
এভাবে আর ক’বছর চলতে থাকলে দেশে বনভূমির পরিমাণ শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়াবে, যার পরিণাম হবে ভয়াবহ। মানুষ, গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, পশু, পাখিসহ কোনো প্রাণীই বেঁচে থাকবে না, দেখা দেবে মহাবিপর্যয়, বিধ্বস্ত হবে সভ্যতা, ধ্বংস হবে দেশ ও জাতির অস্তিত্ব ।
বায়ু দূষণ ও প্রতিক্রিয়া :
বাতাসে জীবের অস্তিত্বের ক্ষতিকর পদার্থের মাত্রা বেশি হলে তাকে বায়ু দূষণ বলে । প্রাচীনকালে যখন আগুন আবিষ্কৃত হলো তখন থেকেই অক্সিজেনের ধ্বংসলীলা সূচিত হয়। আগুন বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের অনুপাত হ্রাস করে জীবনের অনুকূল পরিবেশের ভারসাম্যই শুধু নষ্ট করেনি, ধোঁয়া এবং ভস্মকণায় তাকে কলুষিত করেছে। ধোঁয়া, ধুলাবালি, কীটনাশক, তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রভৃতি বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ।
আরও পড়ুন : প্রবন্ধ রচনা : মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার – ২০ পয়েন্ট
তেলের দহনজাত ধোঁয়া থেকে সালফার ডাই-অক্সাইড, যানবাহনের ধোঁয়া থেকে বেঞ্জোপাইরিন নির্গত হয়, যা হাঁপানি ও ফুসফুসের রোগের কারণ। ধুলাবালি বিভিন্ন রোগের বাহন, কীটনাশক হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে । আণবিক ও পারমাণবিক তেজস্ক্রিয় পদার্থ ক্যান্সার রোগের কারণ । তা থেকে অঙ্গ বিকৃতিও হতে পারে ।
পানি দূষণ ও প্রতিক্রিয়া :
বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন। সে পানি যদি কোনো কারণে দূষিত হয়ে পড়ে, তাহলে আমাদের জীবন সংকটময় হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের বিভিন্ন নদীর তীরে অজস্র কলকারখানা গড়ে ওঠেছে। শিল্প উৎপাদনে নিয়োজিত বিভিন্ন ধরনের কারখানায় নানারকম রাসায়নিক বর্জ্য বস্তু নিয়মিতভাবে নদী গর্ভে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদী গর্ভে নিক্ষিপ্ত বর্জ্য পদার্থের প্রভাবে শুকনো মৌসুমে নদীর পানি দুর্গন্ধময় বিষে পরিণত হয়।
নদী তীরবর্তী অঞ্চলে বসতীদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না । শুধু কলকারখানার বর্জ্যই নয় বসত বাড়ির বিভিন্ন উচ্ছিষ্ট এবং ময়লা আবর্জনার ড্রেন সংযোগ নদীর সাথে । যা পানিকে করে তোলে আরো ভয়ানক । শুধু নদীর পানিই নয়, গ্রামের খাল বিল, পুকুর, জলাশয়ের পানিও বিভিন্ন কারণে দূষিত হয়। ফলে জলাশয়ের পানি যেখানে পানীয় জলের অবলম্বন সেখানে জনস্বাস্থ্যের অবনতি ঘটার আশঙ্কা আছে ।
শব্দ দূষণ ও প্রতিক্রিয়া :
যানবাহনের শব্দ থেকে শব্দ দূষণ হয়। কলকারখানার শব্দ, গাড়ির হর্ণ, মাইকের আওয়াজ, বোমাবাজির আওয়াজ প্রভৃতি শব্দদূষণ সৃষ্টি করে যা মানুষের স্নায়বিক বৈকল্য, নিদ্রাহীনতা, শিরঃপীড়া, মানসিক রোগ ইত্যাদির কারণ হয়ে দাঁড়ায় ।
গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া :
বায়ুমণ্ডলে গ্রীন হাউজ গ্যাসের (কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন ইত্যাদি) মাত্রার পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট প্রকৃতিগত এবং পরিবেশগত বিরূপ প্রতিক্রিয়াকে বলা হয় গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া।
আরও পড়ুন : রচনা: জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন(২০ পয়েন্ট)
গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়ার প্রভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিরাট হুমকির সম্মুখীন গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়ার দরুন পৃথিবীতে তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে বরফগলার পরিমাণ বাড়বে। ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উপকূলবর্তী ও নিম্নাঞ্চল বা সাগরের দ্বীপাঞ্চলগুলো তলিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে পৃথিবী থেকে ৭৬ রকমের প্রাণী ও কয়েক হাজার রকমের গাছপালা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
১৩২ রকমের স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ২৬ প্রজাতির পাখির বংশ বিলুপ্তির পথে। বহু জমি মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। প্রতি বছর কলকারখানা ও যানবাহন থেকে ২০ কোটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়ে বাতাসে জমা হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সুন্দর এ পৃথিবী সত্যিই একদিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
পারমাণবিক বোমা ও পরিবেশ দূষণ :
বিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়েছে পারমাণবিক যুগ। কাঠ, কয়লা এবং তেল দহনের ফলে বায়ুমণ্ডল যে পরিমাণে দূষিত হয়, পারমাণবিক দহনে দূষণের পরিমাণ তারচেয়ে কয়েক লাখ গুণ বেশি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তিম বর্ষে পারমাণবিক বোমাবর্ষণের ফলে শুধু জাপানের হিরোশিমা নাগাসাকিই ধ্বংস হয় নি, তার প্রবল প্রতিক্রিয়ায় সন্নিহিত ভূখণ্ডের মানুষ, জীবজন্তু এবং উদ্ভিদের সুস্থ অস্তিত্বও বিপন্ন হয়ে পড়ে।
পরীক্ষামূলকভাবে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের ফলে বায়ুমণ্ডলকে যে পরিমাণে বিষাক্ত করে তোলা হয়, বায়ুমণ্ডলকে সেই পরিমাণে বিষমুক্ত করে তার পরিশোধনের বিন্দুমাত্র প্রয়াস নেই। তাছাড়া, প্রচণ্ড শক্তিশালী রকেটের সাহায্যে মহাকাশ অভিযানেও উপগ্রহ উৎক্ষেপণে যে পরিমাণ বিষাক্ত গ্যাস পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে নিক্ষেপ করা হয়, তাতেও আবহাওয়া দূষিত করে চলেছে পৃথিবীর বৃহৎ রাষ্ট্রগুলো।
মৃত্তিকা দূষণ :
অধিক ফসল ফলানোর জন্য এবং কীট-পতঙ্গের হাত থেকে ফসলকে রক্ষার জন্য কৃষকেরা অপরিকল্পিতভাবে জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছে। এতে মৃত্তিকা দূষণের সাথে সাথে জীবজগতে বিপন্ন অবস্থা দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন : দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও তার প্রতিকার : রচনা (২০ পয়েন্ট)
তেজস্ক্রিয় দূষণ :
পারমাণবিক যুদ্ধ এবং পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে তেজস্ক্রিয় দূষণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। ইরান- ইসরাইল, ইরাক-কুয়েত, ভারত-পাকিস্তান, আরব-ইসরাইল, যুগোশ্লাভিয়ার যুদ্ধসমূহের ফলে নির্গত তেজস্ক্রিয়তা প্রাকৃতিক পরিবেশে ছড়িয়ে বাতাসকে ভারী করে তুলেছে।
এখানে উল্লেখ্য, ১৯৩২ সালে ব্রিটেনের নিকেল কারখানায়, ১৯৩৭ সালে ওয়েলস নিকেল কারখানায় কর্মীদের দেহে ক্যানসার দেখা দেয়। ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি ও সারা জীবনের পঙ্গুত্বের কারণ, ১৯৫৩ ও ১৯৬৫ সালে জাপানের সিনামাটি ও নিগাটা উপসাগরে মাছের মাধ্যমে স্নায়ুবিক রোগের উৎপত্তি হয়। এছাড়া ১৯৬৩ সালে মার্কিন নিউক্লীয় সাবমেরিনের চিরকালের নিমজ্জিত অবস্থা অসংখ্য লোকের প্রাণহানির কারণ ।
যুদ্ধ সংঘর্ষ :
জান-মালের ক্ষতির পাশাপাশি যুদ্ধ পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে। কারণ যুদ্ধে ব্যবহৃত নানা রসায়নিক অস্ত্রের জীবাণু মানবজীবন ও পরিবেশকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে, ফলে পরিবেশ দূষিত হয়।
ভারসাম্য রক্ষার উপায় :
পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার প্রভাবে মানুষের স্বাস্থ্যহানি, রোগশোক, অর্থ ও সম্পদের অপচয় ইত্যাদি যেসব ক্ষতি সাধিত হয় তা থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের অবশ্যই প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার পথ বের করতে হবে। এর জন্য নানা পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
বায়ুদূষণের বেলায় কীট নিধনে জৈব নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ, নিবিড় বনায়ন, রাসায়নিক পদার্থের শোধন, ধোঁয়ার পরিশ্রুতিকরণ, বসতি ও শিল্পাঞ্চলের মধ্যে দূরত্ব রাখা ইত্যাদি ব্যবস্থা গৃহীত হতে পারে। পানি দূষণ দূর করার জন্য বাসায়নিক পদার্থ ও ময়লার বিশোধন দরকার। শব্দ দূষণ দূর করতে হলে শব্দ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং সুনাগরিকতার বিকাশ ঘটাতে হবে।
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকারে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ :
সরকার পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে এবং আগামী প্রজন্মকে পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষা করতে কতিপয় যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যথা—
ক. পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ :
দেশের পরিবেশ রক্ষার জন্য বাংলাদেশ সরকার বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বিগত ২০ বছরে পলিথিন শপিং ব্যাগ মাটি, পানি ও বায়ু দূষিত করে তুলছিল। প্রায় অচল করে তুলছিল রাজধানীসহ শহরগুলোর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। এ অসহনীয় অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য এবং সারা দেশে পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ১ মার্চ ২০০২ থেকে সারা দেশে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে।
খ. পরিবেশ আদালত স্থাপন :
দেশকে অধিকতর বাসযোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে সরকার আরো যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তন্মধ্যে রয়েছে পরিবেশ আদালত। এ আদালতে পরিবেশ দূষণজনিত সকল অপরাধের দ্রুত বিচার সম্পন্ন হবে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীসহ ৬টি বিভাগীয় শহরে পরিবেশ আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরিবেশ অপরাধের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রত্যেক জেলায় একজন করে বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
গ. পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) বিল ২০০২ :
তৎকালীন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী শাহজাহান সিরাজ ১ এপ্রিল ২০০২ জাতীয় সংসদে গাড়ির ধোঁয়া, পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহারের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা রেখে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) বিল ২০০২ উত্থাপন করেন। বিলটি জাতীয় সংসদে পাস হয়।
ঘ. টু-স্ট্রোক যানবাহন নিষিদ্ধকরণ :
বায়ুদূষণসহ নানা রকম দূষণে ঢাকা এখন পৃথিবীর একটি পতিত এবং সবচেয়ে দূষিত নগরী হিসেবে বিবেচ্য । তাই সরকার ১৯ মে ২০০২ ঢাকা মহানগরীতে পর্যায়ক্রমে টু-স্ট্রোক ইঞ্জিনচালিত থ্রি হুইলার মোটরযান চলাচল নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
১ সেপ্টেম্বর ২০০২ থেকে টু-স্ট্রোক থ্রি হুইলারের চলাচল সীমিতকরণ করা হয়েছে। ২০০২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এগুলোর লাইসেন্সও বাতিল করার মাধ্যমে রাজধানীকে টু-স্ট্রোক যানবাহনমুক্ত করা সম্পন্ন হয়। ঢাকার রাস্তাকে টু-স্ট্রোক মুক্ত করার পদক্ষেপ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে কার্যকরী হয়।
ঙ. বায়ুদূষণ পরিমাপক যন্ত্র :
পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঢাকায় ‘কন্টিনিউয়াস এয়ার মনিটরিং স্টেশন’ (সিএএমএস) নামক বায়ুদূষণ পরিমাপক যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। এ যন্ত্রের মাধ্যমে বায়ুদূষণের মাত্রা জানা যাবে।
চ. মেয়াদ উত্তীর্ণ যানবাহন নিষিদ্ধ :
পরিবেশ দূষণমুক্ত করা ও যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২৫ বছরের বেশি পুরনো ৩৭০০ ট্রাক, ২০ বছরের বেশি পুরনো ৩৭০টি বাস-মিনিবাস এবং ১৯৯৩ সালের আগে রেজিস্ট্রেশন করা ১৪ হাজার বেবিট্যাক্সি, ৫৫০টি টেম্পো ও ৭০০ অটোভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব মেয়াদ উত্তীর্ণ যানবাহনের কারণে মারাত্মক বায়ুদূষণ ঘটছিল।
ছ. পরিবেশ উপযোগী সিএনজি জ্বালানি :
সরকার ২০০৪ সালের মধ্যে সব সরকারি, আধাসরকারি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যানবাহনগুলোকে পরিবেশ উপযোগী জ্বালানি সিএনজিতে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ পরিকল্পনার আওতায় ইতোমধ্যে রাজধানীসহ সারাদেশে সিএনজি স্টেশনও স্থাপন করা হয়েছে।
পরিবেশ দূষণ ও বাংলাদেশ :
পাশ্চাত্য সভ্যতার হাত ধরে প্রকৃতির স্বর্গপুরী চির-শ্যামল- সবুজ বাংলাদেশেও শিল্পায়নের দৈত্য নিয়ে এসেছে চির নিঃশ্বাসের মহামারী। এদেশে আজ স্থাপিত হচ্ছে অজস্র ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ ভারী-শিল্প কারখানা। আমাদের বৈষয়িক অগ্রগতির স্বার্থে এসব করা হলেও পরিবেশ দূষণ চরম আকার ধারণ করেছে। অন্যদিকে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণের প্রকোপ থেকে বাংলাদেশও আজ মুক্ত নয়। সর্বোপরি, মারাত্মক আকার ধারণ করেছে বাংলাদেশের পরিবেশ দূষণ।
উপসংহার :
পরিবেশ দূষণ পরিবেশের ভারসাম্য তথা মানবজাতির জন্য এক মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এ ব্যাপারে সারা বিশ্বের মানুষের সচেতনতা প্রয়োজন। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে এ সমস্যা আরো প্রকট। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে তথা অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা একান্ত অপরিহার্য ।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য – বাংলা প্রবন্ধ রচনা : ২০ পয়েন্ট