ভূমিকা :
গ্রামবহুল বাংলাদেশের শতকরা প্রায় আশি জন লোক গ্রামে বাস করে। গ্রামের বিপুল মানুষের আনন্দ-উচ্ছ্বাস ও বিনোদনের জন্যে গ্রাম বাংলার সর্বত্রই এ মেলা অনুষ্ঠিত হয় । বিভিন্ন কারুকার্যপূর্ণ পণ্যদ্রব্য গ্রাম্যমেলায় কেনাবেচা হয়। গ্রামের শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সব বয়সি মানুষ এতে যোগ দেয় । তাই গ্রাম্যমেলা মিলনের এক তীর্থক্ষেত্র ।
মেলার স্থান :
গ্রাম্যমেলা এমন একটি স্থানে হয় যেখানে গ্রামের লোকেরা সহজে যাতায়াত করতে পারে। বিস্তৃত মাঠে, কোনো বট গাছের নিচে, নদীর তীরে অথবা কোনো খোলা জায়গায় গ্রাম্যমেলার আয়োজন হয় ।
মেলার প্রস্তুতি :
দূর-দূরান্ত থেকে আগত বিক্রেতারা মেলা বসার একদিন আগেই তাদের মালপত্র নির্ধারিত ক্ষণস্থায়ী ঘরে বা খোলা জায়গায় নির্দিষ্ট স্থানে সাজিয়ে রাখে। মেলায় সব ধরনের দোকান বসে। দোকানের মধ্যে বিভিন্ন খেলনার দোকান, মনিহারি দোকান, কাপড়ের দোকান, মাটির ও বেতের খেলনার দোকান, মুড়ি, চিড়া, খই ও মিষ্টির দোকানই প্রধান । ম্যাজিক, নাগরদোলা ও সার্কাসের জায়গায়ই লোকের ভিড় বেশি থাকে।
আরও পড়ুন :- বইমেলা বা একুশে বইমেলা - বাংলা প্রবন্ধ রচনা
মেলার সামগ্রী :
মেলার দিন সকাল থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন দলে দলে আসতে থাকে। তারা সারা দিন মেলায় এসে বিভিন্ন আনন্দ উপভোগ করে। তারা নিজেদের জমানো টাকায় ছোট ছেলেমেয়ে ও বাড়ির বৌ-ঝির জন্যে মেলা থেকে নানা শৌখিন জিনিস কিনে নেয়।
মেলায় মাটির তৈজসপত্র, পুতুলসহ নানা ধরনের খেলনা, কাচের চুড়ি, রঙিন ফিতা, আলতা, সাবান, স্নো, পাউডার, বেলুন, ঘুড়ি, লাটাই ইত্যাদি জিনিসই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই দরকষাকষি করে।
মেলার অপকারি দিক :
গ্রামের মানুষের বিনোদনের ক্ষেত্র অত্যন্ত সীমাবদ্ধ। মেলার মাধ্যমে তাদের বিনোদনের শখটি মিটে থাকে। কোনো কোনো মেলায় এসব সুস্থ বিনোদনের পাশাপাশি জুয়া ও মাদকদ্রব্যের ব্যবসাও দেখা যায়। এতে সরলপ্রাণ গ্রাম্য মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়। নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে অথবা জুয়ার ফাঁদে পড়ে তারা সর্বস্বান্ত হয়ে ঘরে ফেরে।
আমার দেখা মেলা :
আমি গত বছর মেলায় গিয়েছিলাম। মেলায় প্রবেশের সাথে সাথেই দুটি জিনিস আমার মনকে আকৃষ্ট করে। তার একটি ম্যাজিসিয়ানের ম্যাজিক খেলা, অন্যটি নাগোরদোলা। ম্যাজিকের কাছে দাঁড়িয়ে দেখলাম ম্যাজিসিয়ান বিভিন্ন তাসের খেলা দেখাচ্ছে। তা ছাড়া দশ ও এক শ টাকার নোট উৎসুক মানুষের কাছ থেকে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে উক্ত টাকার ছাই একটি পানির বালতিতে রেখে জ্যান্ত কৈ মাছ তৈরি করছে।
আরও পড়ুন :- আমার পড়া একটি বইয়ের গল্প - বাংলা প্রবন্ধ রচনা
আবার কিছুক্ষণ পরই আগের পোড়ানো শনাক্ত করা টাকাই মালিকদের ফিরিয়ে দিচ্ছে । তারপর গেলাম নাগরদোলার কাছে। গিয়ে দেখি ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কেউ কেউ নাগরদোলায় উঠে দোল খাচ্ছে। কেউ থামাও থামাও বলে চিৎকার করছে। নাগরদোলা দেখে আমি গেলাম গ্রাম্য শিল্পীদের তৈরি জিনিসপত্রের নিকট। তাদের কারুকার্যপূর্ণ বাঁশ, বেত ও পাটের তৈরি বিভিন্ন জিনিস দেখে আমি খুবই আনন্দ পেলাম।
মেলার কুটির শিল্প :
গ্রাম্যমেলা বাঙালির এক প্রাণপ্রিয় উৎসব। এ মেলা গ্রামের মানুষদের যথেষ্ট আনন্দ দেয় এবং তাদের একঘেয়ে জীবনে নতুন কর্মপ্রেরণা সৃষ্টি করে। গ্রাম্যমেলায় কুটিরশিল্পের বিভিন্ন পণ্যের বিক্রয়সুবিধা থাকে। এতে গ্রামের মানুষ কুটিরশিল্পজাত পণ্যের উৎপাদনে উৎসাহ বোধ করে। তা ছাড়া গ্রাম্যমেলা বহু লোকের মিলনকেন্দ্রে পরিণত হয় এবং তাদের মধ্যে সদ্ভাবও জেগে ওঠে।
উপসংহার :
মেলা আমাদের গ্রামবাংলার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। গ্রাম্যমেলায় সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে যে এখানে দেশীয় পণ্য ব্যতীত বিদেশি পণ্যসামগ্রীর সমাগম হয় না। এতে দেশীয় সামগ্রীর সাথে জনগণের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়। এককথায় বলা যায়, একঘেয়ে গ্রামীণ জীবনে অনাবিল আনন্দের শিহরণ জাগায় এ মেলা ।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা