ঈমান কাকে বলে? ঈমান অর্থ কি? ঈমানের মূল বিষয় কয়টি ও কি কি

উপস্থাপনা :- ইমান হচ্ছে ইসলামের অপরিহার্য বিষয়। মুসলিম হওয়ার প্রথম শর্তই হচ্ছে ঈমান আনয়ন করা। মূলত ঈমানই হল মুসলমানদের প্রধান মূলধন। তাই এটিকে অন্তরে বদ্ধমূল রাখাই মুমিনের দায়িত্ব। 

ঈমান (ايمان) শব্দের আভিধানিক অর্থ : 

ايمان শব্দটি বাবে افعال-এর মাসদার । এটি أمن শব্দ থেকে উদ্ভূত যা خوف -এর বিপরীত। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে-

  • ১. التصديق তথা বিশ্বাস করা। 
  • ২. الانقياد তথা আনুগত্য করা।
  • ৩. الاذعان তথা স্বীকৃতি দেয়া।
  • ৪. الوثوق  তথা নির্ভর করা।
  • ৫. الخضوع তথা অবনত হওয়া।
  • ৬. ألا طمينا ن  তথা প্রশান্তি লাভ করা ।

সংজ্ঞা :- মহান আল্লাহ তা'আলার যাবতীয় আদেশ এবং নিষেধসমূহের উপর ও আল্লাহর প্রেরিত নবী, রাসূল, ফেরেশতা, আখেরাত ইত্যাদির উপর বিশ্বাস রেখে কাজে পরিণত করাকে ঈমান বলে । 

ঈমানের মূল বা মৌলিক বিষয় সমূহ :-

ঈমানের মূল বা মৌলিক বিষয় হচ্ছে ৭টি। যথাঃ 

১। আল্লাহর প্রতি ঈমান : 

আল্লাহর প্রতি ঈমানের অর্থ হলো- আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করা এবং তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত না করা। যেমন আল্লাহ তায়ালার বাণী-

والهكم اله واحد-  لا اله ألا هو الرحمن الرحيم(البقرة  - ١٦٣ )

👉আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নের তিনটি মাধ্যম রয়েছে। যথা-

ক. ألا قران باللسان  তথা মৌখিক স্বীকারোক্তি ।

খ. التصديق بالجنان তথা অন্তরের বিশ্বাস ।

গ. العمل بالاركان তথা আরকানসমূহ কাজে বাস্তবায়ন ।

সুতরাং আল্লাহর প্রতি ঈমান বা বিশ্বাসের অর্থ হচ্ছে, এ কথায় পূর্ণ আস্থা স্থাপন করা যে, আল্লাহ এক, অদ্বিতীয় ও অতুলনীয়। প্রতিপালনে, কর্মে ও ইবাদতে তাঁর কোনো শরীক তথা অংশীদার নেই।

২। ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান : 

ফেরেশতাকে আরবিতে বলা হয় ملك ; এটি একবচন। এর বহুবচন হচ্ছে ملائكة ।

আরও পড়ুন :- কুফর কাকে বলে? কুফর শব্দের অর্থ কি।কুফর কত প্রকার ও কি কি

👉ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান বা বিশ্বাসের কয়েকটি দিক রয়েছে। আর তা হচ্ছে- 

ক. ফেরেশতাদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করা।

খ. তাঁদের নামে বিশ্বাস করা।

গ. তাঁদের আকৃতি প্রকৃতিতে বিশ্বাস করা।

ঘ. তাঁদের কর্মে বিশ্বাস করা।

৩। আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান : 

আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান আনা বা বিশ্বাস করা প্রতিটি মুমিনের ওপর ফরয। আসমানী কিতাব সর্বমোট ১০৪ খানা। এর মধ্যে ১০০ খানা সহীফা আর অবশিষ্ট ৪ খানা প্রধান। এ চারখানা হচ্ছে- তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল এবং কুরআন। 

৪। রাসূলগণের প্রতি ঈমান : 

ঈমানের অন্যতম রোকন হলো এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, মহান আল্লাহ যুগে যুগে মানবজাতিকে সঠিক পথের দিশাদানের জন্য অসংখ্য নবী রাসূল পাঠিয়েছেন। তাঁরা সকলেই মহৎ চরিত্রের অধিকারী সৎ ও কল্যাণকর মানুষ ছিলেন। 

তাদের মধ্যে যাদের নাম পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে এবং যাদের নাম উল্লেখ নেই, সকলকে নবী রাসূল বলে বিশ্বাস করা, শ্রদ্ধা করা এবং ভালোবাসা আর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (স)-এর অনুসরণ করা এবং তাঁর আনীত শরীয়ত অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা।

৫। আখিরাতের প্রতি ঈমান : 

আখিরাতে বিশ্বাসের মানে হলো পৃথিবীর জীবনই শেষ নয়, আখিরাত বা পরকাল নামে আরও একটি জীবন রয়েছে। সে জীবনে প্রত্যেককে এ পৃথিবীর ভালোমন্দ কাজের জবাবদিহি করতে হবে।

৬। তাকদিরের প্রতি ঈমান: 

তাকদির বা ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাসের মানে আল্লাহই তাকদির বা ভাগ্যের নিয়ন্ত্রণকারী। তিনিই ভাগ্যের ভালোমন্দ নির্ধারণ করেন। মানুষের কাজ হলো চেষ্টা সাধনা করা আর আল্লাহর ওপর নির্ভর করা। চেষ্টায় সফল হলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং বিফল হলে ধৈর্যধারণ করা। 

৭। মৃত্যুর পর পুনরুত্থানে বিশ্বাস : 

মৃত্যুর পর পুনরুত্থানে বিশ্বাসের মানে এ পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর মানুষকে আবার হাশরের ময়দানে পুনর্জীবিত করা হবে। সেখানে সকল কাজের বিচার হবে। বিচারে যারা কৃতকার্য হবে তাদেরকে জান্নাত দেওয়া হবে আর যারা অকৃতকার্য হবে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad