ভূমিকা :
মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী। এ জগতে একমাত্র মানুষেরই রয়েছে জ্ঞান, বিবেক এবং বিস্ময়কর সৃজনশীল ক্ষমতা। এরই বলে মানুষ আজকের বিস্ময়কর সভ্যতা নির্মাণ করতে পেরেছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের অত্যাশ্চর্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। অতীত জীবনের অসংখ্য অন্ধবিশ্বাস ও জড়তা পরিত্যাগ করে সত্যসন্ধানী মানুষের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে, তবু আজও মানব সমাজে নানা ধরনের কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে।
সংস্কার ও কুসংস্কার :
‘সংস্কার’ শব্দের দ্বিবিধ অর্থ হয়। কোনো বস্তুর জীর্ণতা, কোনো মতবাদের অপূর্ণতা দূর করে তাকে যুগোপযোগী করে তোলাকে বলা হয় ‘সংস্কার’। যেমন-বাড়ি সংস্কার, রাস্তা সংস্কার, রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংস্কার ইত্যাদি। সংস্কার শব্দের অন্য অর্থ হল ‘শুদ্ধি’। শাস্ত্রীয় বিধান অনুসরণ করে বিশেষ কোনো সংস্কার যদি মানুষের কল্যাণের স্থলে ক্ষতিসাধন করে, তবে তা ‘কুসংস্কার’। কুসংস্কারের পেছনে রয়েছে আবেগ ও অন্ধবিশ্বাস। কুসংস্কারের কোনোরূপ বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
[adinserter block=”2″]
বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার :
আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার চালু রয়েছে। ধর্মীয় কুসংস্কার, সামাজিক কুসংস্কার প্রভৃতি কুসংস্কারের সাথে আমরা কমবেশি পরিচিত। যেমন-যাত্রার শুভাশুভ বিচার, তিথি, নক্ষত্রের ওপর নির্ভরশীলতা, ভাগ্য গণনা ইত্যাদি ধর্মীয় কুসংস্কার। এছাড়াও রয়েছে পেঁচার ডাক, কুকুরের কান্না, গরুর হাঁচি ইত্যাদিকে অমঙ্গলসূচক মনে করা।
বাসনপত্র হাত থেকে পড়ে গেলে মেহমান আসার সম্ভাবনা, খেতে বসে বিষম খেলে স্বজন স্মরণ করছে ভাবা, ঘর থেকে বের হবার সময় হোঁচট খাওয়াকে অশুভ চিন্তা করা ইত্যাদি সবই কুসংস্কার। এসবের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এমনকি আধ্যাত্মিক কোনো ব্যাখ্যাও কেউ দিতে পারেনি। এর সত্যতা কখনো পরিলক্ষিত হয়নি।
আরও পড়ুন :- বাংলা প্রবন্ধ রচনা : বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার
কুসংস্কার যুগে যুগে, দেশে দেশে :
কুসংস্কার শুধু আমাদের দেশে নয়, সর্বকালে সবদেশেই কমবেশি প্রচলিত ছিল এবং এখনো আছে। আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত দেশ তো বটেই, পৃথিবীর উন্নত শিক্ষিত দেশেও নানা ধরনের কুসংস্কার চালু রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মানুষের প্রকৃতির মধ্যেই রয়েছে অন্ধবিশ্বাস এবং আবেগ–নির্ভর হওয়ার উপাদান। তাই দেখা যায়, পাড়াগাঁয়ের নিরক্ষর লোকটি যেমন নানা ধরনের কুসংস্কারে বিশ্বাসী, তেমনি উচ্চ শিক্ষার সার্টিফিকেটধারী শহুরে ব্যক্তিত্বও কুসংস্কারে আস্থাশীল।
[adinserter block=”2″]
কুসংস্কারের পরিণাম :
কুসংস্কারের পেছনে কোনো যুক্তি নেই, কোনো সত্য নেই। অন্ধবিশ্বাস ও অশিক্ষা থেকেই কুসংস্কারের জন্ম। এজন্য কুসংস্কার মানুষের মঙ্গল করতে পারে না। কুসংস্কার মানব সমাজের প্রগতির পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে, মানুষের জীবনে দুঃখ-কষ্ট ডেকে আনে। কিছুদিন আগেও হিন্দু সমাজে ধর্মের নামে জঘন্য বর্বরোচিত সতীদাহ প্রথা চালু ছিল। আজও মানুষ ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে নানা ধরনের কুসংস্কারে বিশ্বাস করে প্রতারিত হচ্ছে, জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে।
উপসংহার :
যেহেতু কুসংস্কার মানুষের ক্ষতিসাধন করে। তাই ব্যক্তি ও সমাজ জীবন থেকে যাবতীয় কুসংস্কার দূরীকরণ অত্যাবশ্যক। এজন্য চাই শিক্ষার ব্যাপক প্রসার। আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা মানুষের মন থেকে নানা রকমের জঘন্য কুসংস্কার অপসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এটা ঠিক যে, শিক্ষিত সমাজেও কুসংস্কার রয়েছে, তবে তা অপেক্ষাকৃত অনেক কম। অশিক্ষিত সমাজই নানা ধরনের কুসংস্কারের উর্বর ক্ষেত্র।
[adinserter block=”2″]
তাই সমাজ থেকে নিরক্ষরতা দূর করতে হবে এবং চারপাশের জগৎ ও জীবনকে সুশিক্ষার আলোকে সঠিকভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে। তবেই কুসংস্কারের অকল্যাণ থেকে ব্যক্তি ও সমাজ রক্ষা পেতে পারে। অন্ধ বিশ্বাসের স্থলে জীবনাচরণে বিজ্ঞান ভাবনাকে ঠাঁই দিতে হবে। তা হলেই আমাদের জীবন আরো সুন্দর এবং সুখময় হবে।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও