রচনা : উয়ারী বটেশ্বর / মাটির নিচে যে শহর (২টি)

উয়ারী বটেশ্বর/মাটির নিচে যে শহর রচনা - ১

ভূমিকা : 

বাংলাদেশে অনেক পুরাকীর্তি রয়েছে। পুরাকীর্তি একটা দেশের অতীতকালের ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। এ দেশের রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শনাবলি। তেমনি একটি স্থান বা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হলো উয়ারী-বটেশ্বর ও তার মাটির নিচের নগর।

অবস্থান :

নরসিংদী জেলার বেলাব ও শিবপুর উপজেলায় উয়ারী-বটেশ্বরের অবস্থান। এ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি ঢাকা থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত।

মাটির নিচে হওয়ার কারণ :

ভূমিকম্প, বন্যা, প্লাবন আর নদী ভাঙনের কারণে কোনো সময় এসব অঞ্চলে ভূ-প্রকৃতির বড় রকমের ওলটপালট ঘটে। এসবের ফল এ মাটির নিচের সভ্যতা। এখানেও হয়তো তাই ঘটেছে। বহুবছর পর মাটি খুঁড়ে আজ পাওয়া গেছে এ নগর জনপদের সন্ধান ।

আরও পড়ুন :- নায়াগ্রা জলপ্রপাত বা দেখে এলাম নায়াগ্রা - রচনা

উয়ারী-বটেশ্বরে প্রাপ্ত নিদর্শন : 

উয়ারী-বটেশ্বর নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে এবং এর ফলে এখানকার অনেক মূল্যবান ইতিহাস জানা সম্ভব হয়েছে। এখানকার মাটি খনন করে যেসব ঐতিহাসিক নিদর্শন পাওয়া গেছে তা নিম্নরূপ -

ক. প্রাচীন মুদ্রা : ১৯৩৩ সালে উয়ারী গ্রামে শ্রমিকেরা মাটি খনন করার সময় পাত্রে জমানো কিছু মুদ্ৰা পায়। স্থানীয় স্কুল শিক্ষক হানিফ পাঠান সেখান থেকে ২০-৩০টি মুদ্রা সংগ্রহ করেন। এগুলো ছিল বঙ্গদেশ ও ভারতের প্রাচীনতম রৌপ্যমুদ্রা। ১৯৫৬ সালে এখানে পাওয়া যায় ছাপাঙ্কিত মুদ্রার ভান্ডার। তাতে প্রায় চার হাজারের মতো মুদ্রা ছিল ।

খ. দূর্গ নগরী : উয়ারী-বটেশ্বর এলাকায় মাটির নিচে রয়েছে প্রাচীন দূর্গ নগরী। এই দূর্গ নগরীটির আয়তন দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে প্রায় ৬০০ মিটারের মতো। সম্ভবত এটি ঐ সময়ের রাজধানী হয়ে থাকতে পারে।

গ. বৌদ্ধবিহার : উয়ারী-বটেশ্বরে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ছাড়াও ধর্মীয় নিদর্শন রয়েছে। শিবপুর উপজেলার মন্দিরভিটায় একটি বৌদ্ধ পদ্মমন্দির আবিষ্কৃত হয়েছে। এছাড়া জানখারটেকে আরো একটি বৌদ্ধবিহার পাওয়া গেছে।

ঘ. অন্যান্য নিদর্শন : এখানে ২০০০ সালে খনন করে আরো বেশ কিছু প্রত্ন নিদর্শন পাওয়া যায়। এগুলো হলো-ইটের স্থাপত্য, বন্দর, রাস্তা, গলি, পোড়ামাটির ফলক, মূল্যবান পাথর, পাথরের বাটখারা, কাঁচের পুতি ও মুদ্রাভান্ডার। উয়ারী-বটেশ্বরের আশে পাশে প্রায় ৫টি স্থানে প্রাচীন বসতির চিহ্ন পাওয়া গেছে। 

আরও পড়ুন :- দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান : রচনা [ Class 3, 4, 5 ]

উপসংহার :

অতীতের স্থাপত্য নিদর্শন বুকে ধারণ করে আছে উয়ারী-বটেশ্বর। অনুসন্ধিৎসু মানুষ খুঁজে বের করেছে মাটির নিচের এ নগরকে। দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যকে লালন করছে মাটির নিচের এ নগরটি। তাই গবেষণা করে এর পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস প্রকাশ করা একান্ত প্রয়োজন।

উয়ারী বটেশ্বর/মাটির নিচে যে শহর রচনা - ২

ভূমিকা: 

আজকের বাংলাদেশের রয়েছে এক সমৃদ্ধ অতীত। এদেশের নানা স্থানে থাকা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো সেই সমৃদ্ধ অতীতের পরিচয় বহন করে। এগুলোর মধ্যে উয়ারী-বটেশ্বর বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ।

অবস্থান ও ইতিহাস : 

উয়ারী-বটেশ্বর রাজধানী ঢাকা থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে নরসিংদী জেলার বেলাবো ও শিবপুর উপজেলায় অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে উয়ারী ও বটেশ্বর পাশাপাশি দুটি গ্রামের নাম। এখানে মাটি খুঁড়ে প্রাচীন একটি নগর-জনপদের সন্ধান পাওয়া গেছে। মৃত্তিকা বিজ্ঞানীদের মতে, উয়ারী-বটেশ্বর অঞ্চলের মাটি কয়েক হাজার বছরের পুরোনো।

খ্রিষ্টপূর্ব সাত থেকে ছয় শতকে এখানে সভ্য জনমানুষের বসতি ছিল। এখানে ছিল সুন্দর নগরী। এরপর সম্ভবত বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে এই এলাকার ভূপ্রকৃতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়। হাজার বছর ধরে চলা প্রকৃতির ভাঙা-গড়ার খেলায় মাটিচাপা পড়ে যায় এই নগর-জনপদ।

উয়ারী-বটেশ্বরের আবিষ্কারের কথা : 

উয়ারী ও বটেশ্বর গ্রামে প্রায়ই বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান পাওয়া যেত। ১৯৩৩ সালে স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মোহাম্মদ হানিফ পাঠান উয়ারী গ্রাম থেকে প্রাপ্ত বেশ কিছু প্রাচীন রৌপ্যমুদ্রা সংগ্রহ করেন।

আরও পড়ুন :- মহাস্থানগড় - বাংলা রচনা 

পরে মোহাম্মদ হানিফ পাঠানের ছেলে হাবিবুল্লাহ পাঠান এ প্রত্নস্থান থেকে প্রচুর নিদর্শন সংগ্রহ করে জাদুঘরে জমা দেন। ২০০০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে এখানে খনন কাজ শুরু হয় ।

প্রাপ্ত নিদর্শনসমূহ : 

উয়ারী-বটেশ্বরে খনন কাজ করে এ পর্যন্ত অনেক ধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে আড়াই হাজার বছর পুরোনো একটি প্রাচীন দুর্গ-নগরের ধ্বংসাবশেষ। 

প্রাপ্ত দ্রব্যাদির মধ্যে রয়েছে পোড়ামাটির ফলক, মূল্যবান পাথর, মুদ্রাভান্ডার, গহনা, অস্ত্র, পাথরের বাটখারা, কাচের পুঁতি ইত্যাদি। এ সব নিদর্শন থেকে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এককালে এখানে সমৃদ্ধ এক সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল 1

উপসংহার : 

উয়ারী-বটেশ্বর আমাদের দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এখান থেকে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলো বাংলায় প্রাচীন জনপদের বয়স সম্পর্কে অমূল্য তথ্য জোগাবে। তাই নিদর্শনগুলো যত্নের সাথে সংরক্ষণ এবং এ নিয়ে বড় ধরনের অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রয়োজন ।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad