ভূমিকা :
মে দিবস বিশ্বের সকল শ্রমিক মজুরের অধিকার স্বীকৃতির দিবস। শ্রম আন্দোলনের ইতিহাসে এ দিনটি বিশেষ তৎপর্য ও গুরুত্ব বহন করে।
পূর্বকালে শ্রমিক মালিক সম্পর্ক :
চিরদিনই শ্রমিক মালিকের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত । একটি ছাড়া অপরটি অচল। একটি বাদ দিয়ে অপরটির অস্তিত্ব কল্পনাতীত। কিন্তু স্বল্পসংখ্যক ব্যতিক্রম মালিক বাদে মালিকশ্রেণি শ্রমিকদের স্বার্থ ও সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে সর্বদাই উদাসীন ।
তারা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে অধিক মুনাফা অর্জন করতে আকাঙ্ক্ষী। মে দিবসের পূর্বে সমস্ত দিবা-রাতের মধ্যে কোথাও ১৮ঘণ্টা আবার কোথাও ২০ ঘণ্টা শ্রমিক সমাজকে শ্রম দিতে হতো।
অথচ এ অমানবিক আচরণের বিপক্ষে তারা কোনো প্রতিবাদ করতে পারত না। কোথাও যদি কোনো শ্রমিক ভুলক্রমে ক্ষীণতম প্রতিবাদ জানাত তা হলে তার ওপর শুরু হতো অকথ্য নির্যাতন । ছাঁটাই তো অতি তুচ্ছ ব্যাপার, প্রহারে তার শরীর ক্ষতবিক্ষত করে পরিশেষে অকর্মণ্য করে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলা হতো ।
আরও পড়ুন :- বিজয় দিবস - রচনা [ class 6, 7, 8, 9 ] এবং HSC
শ্রমিকবৃন্দের প্রতিবাদ :
আমেরিকার শিকাগো শহরের শ্রমিকবৃন্দ এ অমানবিক আচরণ ও অকথ্য নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। ১৮৮৬ সালের ১মে শিকাগোর নিপীড়িত অত্যাচারিত শ্রমিকবৃন্দ রাজপথে প্রতিবাদ মিছিল বের করে।
মিছিল ও গুলি :
মালিকশ্রেণির প্ররোচনায় পুলিশ বাহিনী নিরস্ত্র শ্রমিকদের মিছিলের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। ফলে কয়েকজন শ্রমিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তাদের বুকের তাজা রক্তে শিকাগোর রাজপথ রাঙা হয়ে যায় কিন্তু এতেও আন্দোলন স্তব্ধ হয়ে যায়নি বরং উত্তরোত্তর আন্দোলনের তীব্রতা বাড়তে থাকে।
শ্রমিকদের দাবির স্বীকৃতি :
অবশেষে ১৮৯০ সালে সারাবিশ্বে শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের ন্যায্য দাবি স্বীকৃতি লাভ করে। সে বছর থেকেই সমগ্র পৃথিবীর মেহনতি শ্রমিক সমাজ প্রতিবছর এ দিনটিকে শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে স্মরণ এবং পালন করে আসছে।
আরও পড়ুন :- স্বাধীনতা দিবস রচনা ১০০ শব্দ , ২০০ শব্দ এবং ৫০০ শব্দ
মে দিবসের লক্ষ্য :
সারাবিশ্বে শ্রমিক সমাজ ও মেহনতি মানুষের ঐক্য সংহতি তুলে ধরার উদ্দেশেই পহেলা মে তারিখ মে দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হয়ে থাকে। ধনীকশ্রেণি ও বিত্তবানদের দ্বারা গরিব মেহনতিশ্রেণি ও বিত্তবানদের দ্বারা গরিব মেহনতি শ্রমিক সমাজের ওপর এতদিন শোষণ নিপীড়ন করার যে মারাত্মক ব্যবস্থা চলে আসছিল, সে সমাজব্যবস্থা চিরদিনের জন্য অবলুপ্ত করে বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় শ্রমিকশ্রেণির ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠাই মে দিবস পালনের মূল লক্ষ্য।
বর্তমান শ্রমিক সমাজে অনৈক্য :
১৮৮৬ সালে শিকাগোর শ্রমিক সমাজে যে মন মানসিকতা ছিল, বর্তমান বিশ্বে শ্রমিক সমাজের মধ্যে হয়তো সে মন মানসিকতা নেই। তবুও একথা সত্য এখনো তারা হাজারো সমস্যায় জর্জরিত নিপীড়িত। বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিনোদন ইত্যাদি জীবনের মৌলিক চাহিদা থেকে এখনো বহুলাংশে বঞ্চিত।
আজ আমাদের দেশের শ্রমিক সমাজ বিভিন্ন সংগঠনের নামে শতধা বিভক্ত। দেশের সমগ্র শ্রমিক সমাজ ও মেহনতি মানুষ বলিষ্ঠ নেতৃত্বে একই পতাকাতলে সমবেত হতে না পারলে তাদের কোনো ন্যায্য অধিকারই আদায় করা সম্ভব হবে না।
উপসংহার :
মে দিবসের তাৎপর্য অনুযায়ী মালিক পক্ষের উচিত শ্রমিকদের প্রতি মানবিক আচার ব্যবহার প্রদর্শন করে তাদের জীবনের ন্যূনতম চাহিদা ও প্রয়োজনীয় আরাম আয়েশের প্রতি সদা দৃষ্টি রাখা। যাতে তারা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় এবং নিজেদের শ্রমের যথার্থ ন্যায্য মর্যাদা পায়।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা