সোনালী আঁশ : পাট – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

উপস্থাপনা : 

আমাদের অর্থকরী ফসলগুলোর মধ্যে পাট সবচেয়ে মূল্যবান । সমগ্র বিশ্বের চার ভাগের তিন ভাগ পাট বাংলাদেশে জন্মে বা উৎপাদিত হয় । এ ফসলের ওপর এদেশের অর্থনীতি দণ্ডায়মান বলে পাটকে সোনালি আঁশ বলা হয় । পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও যে পাট উৎপাদনের চেষ্টা করা হয় নি তা নয়। তবে ফসল হয় নি। এ পাট দ্বারা আমরা সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করি, সে জন্য এ দিকে সকলের মনোযোগ ।

পাটের বর্ণনা : 

বছরে একবারই পাট হয়। তাই এ ফসলকে মৌসুমী উদ্ভিদ বলা চলে। চিকন গাছ, নয়-দশ হাত লম্বা হয় । লম্বা দণ্ড হয়ে ওপরে ওঠে। ছোট ছোট ডাল । সবুজ পাতা। পাট পাতা শাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পাট গাছের ভিতরে পাটকাঠি থাকে।

চাষের সময় ও স্থান : 

পাট সাধারণত ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বপন করা হয়। বীজ ছিটিয়ে বোনা হয়। তবে রোপণও করা যায় । উঁচু জমি যেখানে পানি জমে না সেখানে পাট ভালো হয় । পাটের জন্যে এঁটেল ও দোঁআশ মাটি অধিক উপযোগী। জমি ভাল করে চাষ করে মাটি গুড়া করে দিতে হয়। তারপর বীজ বুনে মই দিয়ে ঢেকে দিতে হয় । 

আরও পড়ুন :- ধান – বাংলা রচনা  [ ক্লাস ৬, ৭, ৮, ৯, ১০] 

পাঁচ ছয় ইঞ্চি লম্বা চারা হলে ঘর চারা তুলে পাতলা করে দিতে হয় । আগাছা তুলে ফেলতে হয় । এভাবে দুই তিন হাত লম্বা হলে আর পরিচর্যার দরকার হয় না। শুধু গরু-ছাগল থেকে রক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে। বাংলাদেশের টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, রংপুর, নোয়াখালী প্রভৃতি জেলায় পাট ভাল হয় ।

প্রস্তুত প্রণালি : 

পাটের গাছে ফল ও ফুল আসলে পাট কেটে ফেলতে হয়। তারপর আঁটি বেঁধে কিছুদিন পাতা ধরানোর জন্য রাখা ভালো। এরপর পুকুর, নদী, নর্দমা, নালা বা ডোবায় রাখতে হয় । দশ-পনের দিন পর পাট পচে । গাছ থেকে যদি আঁশ আলাদা করা সম্ভব হয়, তবে তাড়াতাড়ি আঁশ আলাদা করে পানিতে ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকানো দরকার । ভালো করে শুকালে গাঁটি বেঁধে বাজারে বিক্রির উপযোগী হয়।

পাটের প্রয়োজনীয়তা : 

পাট আমাদের খুব দরকারি জিনিস । পাট দিয়ে আমরা দড়ি বা রশি তৈরি করি । দড়ি বা রশি ছাড়া আমাদের সাংসারিক কাজকর্ম একেবারে চলে না। ঘর বানাতে দড়ি। গাট বাঁধতে দড়ি। গৃহস্থালী সকল কাজে দড়ি অপরিহার্য। পাট থেকে ছালা, চট প্রভৃতি তৈরি হয় । পাটের থলি সবার কাজে লাগে। আজকাল পাটের আঁশ দিয়ে মূল্যবান রেশমের মতো কাপড় তৈরি হচ্ছে। 

আরও পড়ুন :- চা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

পাট দ্বারা অপূর্ব কারুকাজ করা কার্পেট তৈরি হচ্ছে। বিদেশীরা এসব কার্পেট দেখে মুগ্ধ হয়। চড়া মূল্য দিয়ে ক্রয় করে । পাটকাঠি দিয়ে গ্রামবাসীরা ঘরের বেড়া দেয় । সবজির জাংলা বানায় । পাটকাঠি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাটের কচি পাতা শাক হিসেবে সবাই খায়। সুতরাং পাটের কোন কিছুই ফোলানো হয় না। সব কিছুই প্রয়োজনীয় ।

পাটের ব্যবসা : 

পৃথিবীর তিন-চতুর্থাংশ পাট বাংলাদেশে জন্মে । কিন্তু দুঃখের বিষয় উৎপাদন অনুযায়ী এদেশে পাট শিল্প গড়ে ওঠেনি। যেসব পাটকল স্থাপিত হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম। ফলে আমরা পাটজাত দ্রব্য বিদেশে রপ্তানি করে যে অর্থ উপার্জন করতে পারতাম, তবে বিদেশিরা আমাদের শোষণ করতে পারতো না ।

Advertisement Advertisement

বাংলাদেশের পাটশিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা : 

পাটের লাভজনক ব্যবসা সারা পৃথিবী জুড়ে রয়েছে। কাজেই পাটের চাহিদাও আছে। এর ব্যবসাও লাভজনক। বিদেশিরা কৃত্রিম আঁশ তৈরি করে আমাদের পাটের চাহিদা কমাতে চেয়েছে। তা আজও পারেনি। বিদেশিদের শোষণ থেকে বাঁচার জন্যে আমাদের আরোও পাটকল ও পাট শিল্প গড়ে তোলা দরকার। এতে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা আসবে, তেমনি বেকার জনসাধারণের কর্মসংস্থানও হবে।

উপসংহার : 

পাট আমাদের দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল হলেও আমাদের কৃষকরা পাটের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। সরকারকে তাদের পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। ফড়িয়ারা যাতে সরল প্রাণ কৃষকদের ঠকাতে না পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। নিত্যনতুন পাট কল ও পাট শিল্প গড়ে তুলতে হবে । উন্নতজাতের ও মানের পাট উৎপাদনের জন্যে প্রযুক্তি উদ্ভাবন প্রয়োজন ।

আমার মূল লক্ষ্য একটাই (Sikkhagar-শিক্ষাগার) ওয়েবসাইটের হাত ধরে “শিক্ষা হবে উন্মুক্ত ও বাণিজ্যমুক্ত”। এই প্লাটফর্মে থাকবে একাডেমিক প্রস্তুতি, ভর্তি প্রস্তুতি, চাকরি প্রস্তুতি, স্পেশাল স্কিল এবং ধর্মীয় শিক্ষাসহ নানাবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।

Leave a Comment

Advertisement Advertisement
error: Content is protected !!