পাট রচনা - ২য় ও ৩য় শ্রেণি
সূচনা :
পাট বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল। সমস্ত পৃথিবীতে উৎপন্ন পাটের পাঁচ ভাগের চার ভাগ বাংলাদেশে জন্মে। বিদেশে পাট রপ্তানি করে আমাদের দেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। পাটকে বাংলাদেশের ‘স্বর্ণসূত্র' বা সোনালি আঁশ বলে।
উৎপত্তিস্থান :
বাংলাদেশের সর্বত্র, পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের কোন কোন অংশে পাট জন্মে। ময়মনসিংহ, ঢাকা, কুমিল্লা, পাবনা, রাজশাহী ও রংপুর জেলায় প্রচুর পরিমাণে পাট জন্মে।
উৎপাদন প্রণালী :
দো-আঁশ পলিমাটি পাট চাষের পক্ষে বিশেষ উপযোগী। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে জমি ভালরূপে চাষ করে পাটের বীজ ফেলা হয়। চারাগুলো একটু বড় হলে আঁচড়া দিতে হয়। গাছগুলো শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। পাট কেটে পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হয়।
১৫/২০ দিন পর পাটকাঠি হতে আঁশ আলগা করে নিতে হয়। আঁশ ভালরূপে ধুয়ে রৌদ্রে শুকিয়ে কেউ বিক্রি করে আবার কেউ গুদামজাত করে রাখে। আঁশ তোলার পরে যে দণ্ডটি থাকে তাকে পাটকাঠি বলে।
আরও পড়ুন :- চা - বাংলা প্রবন্ধ রচনা
উপকারিতা :
পাট বিক্রয়ের পর চাষীদের হাতে টাকা আসে। তখন তারা আনন্দে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করে। পাট দ্বারা চট, থলে, ছালা, ব্যাগ, দড়ি ও ভাল কাপড় তৈরি হয়। পাটকাঠি জ্বালানীরূপে ব্যবহৃত হয়। পাট চাষ করে এবং জুট মিলে কাজ করে বহুলোক জীবিকা নির্বাহ করে।
উপসংহার :
পাটের চাষ কিছু কমিয়ে আমাদের চাষীদের ধানের চাষ বাড়ানো উচিত। তাহলে খাদ্যশস্যের দিক দিয়ে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারব। বিগত কয়েক বছর যাবৎ বাংলাদেশের কৃষকরা পাট উৎপাদন করে আশানুরূপ দাম পাচ্ছে না। ফলে পাট চাষের প্রতি কৃষকের আগ্রহও কমে যাচ্ছে।
পাট রচনা - ৪র্থ শ্রেণি
সূচনা :
পাট একটি অর্থকরী ফসল। বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের মধ্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে পাটকে আমরা সোনালি আঁশ বলে থাকি ।
পাটের বৈশিষ্ট্য :
পাটগাছ একটি তৃণজাতীয় উদ্ভিদ। এটি দেখতে লম্বা কাঠির মতো । এগুলো প্রায় পাঁচ থেকে দশ হাত পর্যন্ত লম্বা হয় । বাংলাদেশে খুব উৎকৃষ্ট মানের পাট জন্মে। ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, পাবনা, রংপুর ও রাজশাহীতে পাটের উৎপাদন বেশি হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও মিশরে এর চাষ হয় ।
প্রকারভেদ ও চাষপ্রণালি :
দেশি, তোষা ও মেস্তা এই তিন ধরনের পার্ট আমাদের দেশে হয়ে থাকে। দেশি পাটের আঁশ সাদা, তোষা পাটের আঁশ লালচে এবং মেস্তা পাটের আঁশ অপেক্ষাকৃত মোটা হয়ে থাকে। পাট চাষের জন্য উষ্ণ জলবায়ু ও প্রচুর বৃষ্টিপাত দরকার হয়। ফাল্গুন ও চৈত্র মাস পাট বোনার উপযুক্ত সময়।
শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে পাটগাছ কেটে ছোট ছোট আঁটি বাঁধা হয়। আঁটিগুলো খালবিল বা পুকুরের পানির নিচে কিছুদিন ভিজিয়ে রাখতে হয়। পাটগাছ পচে নরম হলে শরীর থেকে আঁশগুলো ছাড়ানো হয়। এরপর তা ধুয়ে রোদে শুকাতে হয়। সেই পরিষ্কার শুকনো আঁশকে পাট এবং পাটের ভেতরের কাঠিকে পাটকাঠি বলে ।
আরও পড়ুন :- ধান - বাংলা রচনা [ class 3, 4, 5 ]
ব্যবহার :
পাট থেকে দড়ি, সুতা, বস্তা, থলে, চট, কাপড়, কার্পেটসহ অনেক জিনিস বানানো হয়। পাটকাঠি জ্বালানি হিসেবে এবং বেড়া ও কাগজ তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। পাটের পণ্য পরিবেশ অনুকূল ।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব :
পাট বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। পাট ও পাটজাত দ্রব্য বিদেশে রপ্তানি করে আমরা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকি। পাটকলসমূহের মূল চালিকাশক্তি পাট। পাটের পণ্য পরিবেশবান্ধব বলে বিশ্বজুড়ে এর বিশাল বাজার রয়েছে।
উপসংহার :
বাংলাদেশের জন্য পাট একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্য । সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে আমাদের পাট খাতকে শক্তিশালী করে অর্থনৈতিকভাবে আরও উপকৃত হওয়া সম্ভব ।
পাট রচনা - ৫ম শ্রেণি
ভূমিকা :
পাট এক প্রকার আঁশ। আমরা পাট গাছ থেকে এটি পেয়ে থাকি। বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে পাট জন্মে। এটি বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। পাটকে বাংলাদেশের সোনালি আঁশ বলা হয়। -
বর্ণনা :
পাট এক ধরনের তৃণ বা আঁশ জাতীয় উদ্ভিদ। পাট গাছ দেখতে সোজা সরু লাঠির মতো। পাট গাছ ৮/৯ ফুট লম্বা ও আধা ইঞ্চি মোটা হয়ে থাকে। গাছের কোনো ডালপালা থাকে না। এর মাথায় শুধু সবুজ পাতা থাকে। পাট গাছের রং সবুজ হলেও পাটের রং সাদা কিংবা সামান্য লালচে হয় ।
প্রকারভেদ :
আঁশের দিক থেকে পাটকে দু শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা : তোষা বা বগীপাট এবং মেস্তা বা দেশি পাট। তোষা পাট উন্নতমানের।
উৎপত্তিস্থান :
বাংলাদেশের জলবায়ু ও মাটি পাট চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। পৃথিবীর শতকরা ৮০% ভাগ পাট বাংলাদেশেই উৎপন্ন হয়। ভারত, চীন, মিয়ানমার, মিসর, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশেও কিছু পাটের চাষ হয়। বাংলাদেশের মধ্যে-ঢাকা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, ফরিদপুর, পাবনা, রংপুর ও রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি পাট উৎপন্ন হয় ।
আরও পড়ুন :- মাছ - বাংলা প্রবন্ধ রচনা
চাষ পদ্ধতি :
পাট চাষের জন্য দরকার উষ্ণ জলবায়ু ও প্রচুর বৃষ্টিপাত। আর পলিময় উর্বর দোআঁশ মাটি। চৈত্র-বৈশাখ মাসে পাটের বীজ বপনের সময়। বীজ বপনের আগে জমিকে বারবার চাষ করে মই দিয়ে তারপর বীজ বপন করতে হয়। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে বীজ থেকে চারাগাছ বেরিয়ে আসে। চারাগাছগুলো একটু বড় হলেই বারবার নিড়ানি দিয়ে আগাছা তুলে ফেলতে হয়।
পাটগাছ ঘন হলে কিছু গাছ ফেলে দিয়ে পাতলা করে দিতে হয়। এতে গাছ মোটা ও লম্বা হয়। শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে পাট কেটে ছোট ছোট আঁটি বেঁধে পানির নিচে ডুবিয়ে রাখা হয়। বিশ-পঁচিশ দিনের মধ্যে সেগুলো পচে ওঠে। তখন পানি থেকে তুলে আঁশ থেকে পাটকাঠি আলাদা করে পানিতে ধুয়ে শুকানো হয়। এই শুকনো আঁশই পাট।
উপকারিতা :
পাট আমাদের বিশেষ উপকারী বস্তু। দড়ি, বস্তা, গালিচা, কাপড়, কাগজ ইত্যাদি পাট দিয়ে তৈরি করা হয়। পাটকাঠি ঘরের বেড়া ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া পারটেক্স বা অন্যান্য বোর্ড তৈরিতেও পাটকাঠি ব্যবহার করা হয়। পাটের পাতা শাক হিসেবে মানুষ খেয়ে থাকে।
উপসংহার :
পাট বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল। পাট ও পাটজাত দ্রব্য আমাদের জন্য প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা বহন করে আনে। তাই পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য আমাদের চেষ্টা করা উচিত।