রচনা : মৃৎশিল্প/ শখের মৃৎশিল্প/ বাংলাদেশের মৃৎশিল্প (৩টি)

রচনা – ১

ভূমিকা : 

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মৃৎশিল্প। এটি শুধু শিল্প নয়। আবহমান গ্রাম-বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম উপাদান। কুমার সম্প্রদায়ের লোকেরা নানারকম মৃৎশিল্প সামগ্রী তৈরি করে ।

মৃৎশিল্পের প্রকৃতি : 

মৃৎশিল্প হলো বিশেষ মাটির সাহায্যে হাঁড়ি-পাতিল ও বিভিন্ন আসবাব তৈরি করার শিল্প। এ শিল্পের প্রধান উপকরণ হলো পরিষ্কার এঁটেল মাটি। এঁটেল মাটি নরম করে বিভিন্ন আকৃতির বিভিন্ন জিনিস বানানো হয়। 

যেমন— মাটির পুতুল, কলস, হাঁড়ি, সরা, বাসনকোসন, পেয়ালা, মটকা ইত্যাদি। এ কাজে চাকার মতো একটি বস্তু ব্যবহার করা হয়। মাটি দিয়ে ঘর সাজানোর অনেক জিনিসও তৈরি করেন কুমাররা ।

মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য : 

বাংলাদেশের মৃৎশিল্পের এক গৌরবময় ঐতিহ্য রয়েছে। প্রাচীনকালে তৈজসপত্রসহ অনেক গৃহসামগ্রী শুধু মাটি দিয়েই তৈরি হতো। প্রাচীন মসজিদ, মন্দির এবং অট্টালিকার দেয়ালেও সেকালের মৃৎশিল্পীদের দক্ষতার অনেক নমুনা দেখতে পাওয়া যায় । 

আরও পড়ুন :- গাছ আমাদের বন্ধু – বাংলা রচনা

মৃৎশিল্পের বর্তমান দুর্দশা : 

আমাদের মৃৎশিল্পের অবস্থা বর্তমানে খুবই দুর্দশাগ্রস্ত। হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্পের জৌলুস, ঐতিহ্য। অনেক আগেই অ্যালুমিনিয়াম, লোহা ও চীনামাটির পাত্রের ব্যবহার চালু হয়। আধুনিকায়নের প্রভাবে মেলামাইন ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র ও অন্যান্য সামগ্রীর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। 

এগুলো মাটির জিনিসের তুলনায় অনেক টেকসই। অন্যদিকে মৃৎশিল্পের কাঁচামালের দাম অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণে দরিদ্র কুমার তথা মৃৎশিল্পীরা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছেন না।

উপসংহার : 

মৃৎশিল্প আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রাচীন শিল্প । এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। এ জন্য সরকারসহ সকল মহলকে এগিয়ে আসতে হবে।

রচনা – ২

ভূমিকা :

বাংলাদেশের শিল্পকলার ইতিহাসে মৃৎশিল্প আমাদের অতীত ঐতিহ্য ও গর্বের এক সমৃদ্ধ ভাণ্ডার। এগুলো আমাদের অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা বলে। সেই আদিকাল হতেই মৃৎশিল্প বাঙালির ঐতিহ্যের স্বর্ণোজ্জ্বল স্বাক্ষর। বাংলার মাটিকে ব্যবহার করে কুমোর সম্প্রদায়ের লোকেরা নিপুণভাবে গড়ে তোলে এ মৃৎশিল্প। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ ধারা।

মৃৎশিল্পের উপকরণ :

এ শিল্পের প্রধান উপকরণ হলো মাটি। তবে সব মাটি দিয়ে এ কাজ হয় না। দরকার পরিষ্কার এঁটেল মাটি। এ ধরনের মাটি বেশ আঠালো। এঁটেল মাটি হলেই যে তা দিয়ে শিল্পের কাজ করা যাবে তাও নয়। এর জন্য অনেক যত্ন দরকার। 

দরকার হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি জ্ঞান। কুমোরদের কাছে এসব খুব সহজ। কারণ তারা বংশপরম্পরায় এ কাজ করে আসছে। আর এ কাজের জন্য প্রয়োজন কিছু ছোটখাটো যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম।

আরও পড়ুন :- ঐতিহাসিক স্থান : সোনারগাঁও – রচনা Class 3, 4, 5 

বাংলাদেশের মৃৎশিল্প :

আমাদের দেশে সবচেয়ে প্রাচীন শিল্প হচ্ছে মৃৎশিল্প। এ দেশের কুমোর সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে তৈরি করে আসছে মাটির কলস, হাঁড়ি, সরা, বাসন-কোসন, পেয়ালা, সুরাই, মটকা, জালা পিঠে তৈরির নানা ছাঁচ ইত্যাদি। 

নিত্যদিনের দরকারি এসব জিনিসের সঙ্গে তারা তৈরি করে আসছে উৎসব-পার্বণের জন্য নানা রঙের বাহারি মাটির জিনিস ও তৈজসপত্র। এছাড়া রয়েছে পোড়ামাটির বিভিন্ন কারুকার্য খচিত ফুলের টব, মাটির ব্যাংক, শখের হাঁড়ি, টেপা পুতুল ও নানা ধরনের খেলনা।

টেপা পুতুল :

বাংলাদেশের মৃৎশিল্পের অন্যতম হলো টেপা পুতুল। কুমোররা নরম এঁটেল মাটির চাক হাতে নিয়ে টিপে টিপে তৈরি করে বলে এর নাম টেপা পুতুল। এসব পুতুলের অঙ্গগুলো একটু ভিজা মাটি দিয়ে জোড়া লাগাতে হয়।

টেরাকোটা :

আমাদের মৃৎশিল্পের আর একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে পোড়া মাটির ফলক বা টেরাকোটা। বাংলার অনেক পুরনো শিল্প এই টেরাকোটা। নকশা করা মাটির ফলক ইটের মতো পুড়িয়ে তৈরি করা হতো এই টেরাকোটা। 

আরও পড়ুন :- বাংলাদেশের কৃষক – রচনা [ class 3, 4, 5 ]

ময়নামতির শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, পাহাড়পুরের বৌদ্ধ স্তূপ, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ এবং সাম্প্রতিক আবিষ্কৃত নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বরে টেরাকোটার কাজ রয়েছে টেরাকোটা বা পোড়ামাটির এসব কাজ আমাদের দেশে শুরু হয়েছে হাজার বছর আগে।

মৃৎশিল্পের বর্তমান অবস্থা :

আজকাল ওরকম টেরাকোটা হচ্ছে না বটে, পোড়া মাটির নকশার কদর বেড়েছে। বড় বড় সরকারি-বেসরকারি ভবনে আজকাল সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য নানা রকম নকশা করা মাটির ফলক ব্যবহৃত হচ্ছে। আমাদের দেশের কুমোররা এসব তৈরি করছে। বৈশাখী মেলায় ও নানা পার্বণে যেসব মেলা বসে, সেসব মেলায় বিক্রি হয় মাটির তৈরি নানা রকম পুতুল, নকশা করা হাঁড়ি, মাটির ফল, তৈজসপত্র। 

গ্রামের প্রতিটি হাটবাজারে এখনো মাটির তৈরি হাঁড়িপাতিল, কলস ও অন্যান্য জিনিসপত্রের দোকান দেখা যায়। ঢাকার নিউমার্কেট ও শিশু একাডেমির সামনে মাটির তৈরি বিভিন্ন নকশা করা ফুলের টপ, মাটির ব্যাংক, পুতুল এমনকি মাটির গহনা পর্যন্ত পাওয়া যায়। বর্তমানে এগুলোর কদর বাড়ছে।

উপসংহার :

পরিরশেষে বলা যায়, মৃৎশিল্প আমাদের অতীত ঐতিহ্য ও গর্ব। কিন্তু এর প্রতি আমাদের হীন মনমানসিকতা ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অতীতের এই গৌরবময় শিল্প আজ অনেকটাই বিলীন হতে বসেছে। তাই এর সাথে যারা জড়িত তাদের প্রতি সদয় দৃষ্টিভঙ্গি ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আবশ্যক। তাহলে একদিন এ মৃৎশিল্পই আমাদের নতুন পরিচয় তুলে ধরবে বিশ্ব দরবারে।

আরও পড়ুন :- নায়াগ্রা জলপ্রপাত বা দেখে এলাম নায়াগ্রা – রচনা

রচনা – ৩

ভূমিকা :

প্রাচীনকাল থেকে বাংলাদেশে মৃৎশিল্পের চর্চা হচ্ছে। এদেশের প্রাচীন শিল্পকলার পরিচয় পাওয়া যায় মৃৎশিল্পে। এটা এদেশের নিজস্ব শিল্প। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় মৃৎশিল্পের নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। তাই মৃৎশিল্প আমাদের ঐতিহ্য ও গর্বের বিষয়।

মৃৎশিল্প কী :

মৃৎশিল্প শব্দটি ‘মৃৎ’ ও ‘শিল্প’ এ দুটি শব্দ দ্বারা গঠিত। ‘মৃৎ’ শব্দের অর্থ মাটি, আর ‘শিল্প’ শব্দের অর্থ নির্মাণ কৌশল বা চারুকলা। অর্থাৎ যখন কোনো কিছু সুন্দর করে আঁকি, সুন্দর করে বানাই, সুন্দর করে গাই তখন তা হয় শিল্প। শিল্পের এ কাজকে বলা হয় শিল্পকলা। আর মাটির তৈরি শিল্পকর্মকে আমরা বলি মাটির শিল্প বা মৃৎশিল্প। 

বাংলাদেশে মৃৎশিল্পের বিকাশ :

মৃৎশিল্পের প্রধান উপকরণ মাটি। তবে সব মাটি দিয়ে এ কাজ হয় না। এজন্য দরকার পরিষ্কার এঁটেল মাটি। এ ধরনের মাটি বেশ আঠালো, তাই মৃৎশিল্প তৈরির জন্য এটি উপযোগী। তবে এর সঙ্গে দরকার অনেক শ্রম আর যত্ন। 

দরকার হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি জ্ঞান। আমাদের দেশের কুমোর সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে বংশপরম্পরায় মৃৎশিল্প নির্মাণ করে আসছে। তাদের এ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম রয়েছে। তাই তারা খুব সহজেই এ কাজ করে আসছে।

আরও পড়ুন :-বাংলা নববর্ষ/ পহেলা বৈশাখ- রচনা ২০০শব্দ (৩টি ) Class 3, 4, 5

মৃৎশিল্পের প্রয়োগ ও ব্যবহার :

আমাদের দেশে মাটি দিয়ে অনেক প্রকার শিল্পসামগ্রী তৈরি হয়। গ্রামাঞ্চলে মৃৎশিল্পের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে বেশি। এর মধ্যে রয়েছে মাটির কলস, হাঁড়ি, পাতিল, সরা, বাসন- কোসন, পেয়ালা, মটকা, জালা, পিঠে তৈরির নানা ছাঁচ, ছেলেমেয়েদের নানা ধরনের খেলাসামগ্রী। এছাড়া রয়েছে উৎসব-পার্বণের জন্য নানা রঙের বাহারি মাটির জিনিস, তৈজসপত্র।

মৃৎশিল্পের উপকরণ :

মৃৎশিল্পের প্রধান উপকরণ পরিষ্কার এঁটেল মাটি। এরপর আবশ্যক হলো যথাযথ শ্রম, হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি জ্ঞান। মৃৎশিল্পে ছোটখাটো যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের ব্যবহার হয়ে থাকে। কাঠের চাকার আবশ্যিকতাও কোনো অংশে কম নয়।

মৃৎসামগ্রি :

মৃৎসামগ্রির মধ্যে রয়েছে কলস, হাঁড়ি, সরা, বাসনকোসন, পেয়ালা, সুরাই, মটকা, জালা, পিঠে তৈরির নানা ছাঁচ। এসব ছাড়াও প্রয়োজনীয় অন্যান্য মৃৎসামগ্রী তৈরি করা হয়।

টেরাকোটা/ঐতিহ্যময় মৃৎশিল্প :

ল্যাটিন শব্দ টেরা অর্থ মাটি এবং কোটা অর্থ পোড়ানো। অর্থাৎ টেরাকোটা অর্থ পোড়ানো মাটির জিনিস। আমাদের দেশে এক সময় গড়ে উঠেছিল পোড়ামাটির সুন্দর ফলকের কাজ। বাংলার অনেক পুরনো শিল্প এই টেরাকোটা। শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধ স্তূপ ও দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরে এই টেরাকোটা দেখা যায়।

মৃৎশিল্পী :

এদেশের কুমার সম্প্রদায় বংশ পরম্পরায় এ শিল্প তৈরি করে আসছে। তারা তাদের জীবন ও জীবিকার অবলম্বন হিসেবে যুগ যুগ ধরে মৃৎসামগ্রী তৈরি করছেন। তাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও এ কাজ করে থাকে।

আরও পড়ুন :কুটির শিল্প – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

আর্থিক উন্নয়নে মৃৎশিল্প :

মৃৎশিল্প যেমন আমাদের ঐতিহ্যকে বহন করে, তেমনি কুমারের সাংসারিক অবস্থার উন্নয়নে ভূমিকা রাখে । কুমারেরা মৃৎশিল্প মেলায় বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে ।

বাংলাদেশে মৃৎশিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা :

মৃৎশিল্প বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্য। বিশ্বে এই শিল্পের কদর আকাশছোঁয়া। মৃৎশিল্প সরকারের যথাযথ সহায়তা থেকে বঞ্চিত। তাই সরকারের সহায়তা পেলে এটি রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

মৃৎশিল্পের অতীত :

মৃৎশিল্পের অতীত অনেক সমৃদ্ধ। অতীতে মৃৎশিল্প মানুষের জীবনযাপনকে সহজতর করে তোলে। মৃৎশিল্প ছিল অনেক মানুষের জীবিকা নির্বাহের কেন্দ্রবিন্দু। মূলত মৃৎশিল্পের অতীত বিস্ময় সৃষ্টি করে এবং মানুষের গ্রহণযোগ্য শিল্প হিসেবে মর্যাদা লাভ করে। 

বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ :

মৃৎশিল্পের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অবস্থা খুব একটা সুখকর নয়। বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কারের ফলে কারখানায় তৈরি দ্রব্যসামগ্রী ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ফলে মৃৎশিল্পের ব্যবহার অনেকাংশে কমে গেছে। আধুনিকতার ভিড়ে ভবিষ্যতে মৃৎশিল্পের টিকে থাকা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

উপসংহার :

মৃৎশিল্প আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের গর্ব। এদেশের মানুষের মন যে শিল্পীর মন, মৃৎশিল্প তার পরিচয় বহন করে। আমাদের উচিত প্রাচীন এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।

আমার মূল লক্ষ্য একটাই (Sikkhagar-শিক্ষাগার) ওয়েবসাইটের হাত ধরে “শিক্ষা হবে উন্মুক্ত ও বাণিজ্যমুক্ত”। এই প্লাটফর্মে থাকবে একাডেমিক প্রস্তুতি, ভর্তি প্রস্তুতি, চাকরি প্রস্তুতি, স্পেশাল স্কিল এবং ধর্মীয় শিক্ষাসহ নানাবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!