সূচনা :
দশম হিজরিতে হজের সময় মহানবি (স) মুসলিমদের উদ্দেশে তার জীবনের শেষ ভাষণ দেন। এতে তিনি খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিকনির্দেশনা দেন। এটিই নবিজির ‘শেষ ভাষণ' বা 'বিদায় হজর ভাষণ' নামে খ্যাত।
ভাষণের ঘটনা :
আরবি যিলকাদ মাসের শেষ দিকে মহানবি (স) কয়েক হাজার অনুসারী নিয়ে হজের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। একসময় আরাফাতের ময়দানে প্রায় দুই লক্ষ লোক সমবেত হলেন। সেখানেই 'জাবালে রহমত' নামের পাহাড়ে দাঁড়িয়ে মহানবি (স) তার উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন ।
বিদায় হজের ভাষণ :
আল্লাহর প্রশংসা করে মহানবি (স) সেদিন যে কথাগুলো বলেছিলেন তা সংক্ষেপে নিচে তুলে ধরা হলো—
ক. মনে রেখো, একদিন তোমরা আল্লাহর কাছে হাজির হবে এবং নিজ নিজ কাজের হিসাব দিতে হবে।
খ. তোমাদের দাস-দাসীরাও আল্লাহর বান্দা। তাদের প্রতি সদয় থাকবে এবং নিজেদের সমান খেতে পরতে দেবে।
গ. অন্যায়, অবিচার ও পাপ থেকে দূরে থাকবে ।
ঘ. ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। অন্য ধর্মাবলম্বীদের ওপর নিজের ধর্ম চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে না।
আরও পড়ুন : মহানবী সাঃ এর জীবনী - রচনা ১০০, ২০০ ও ৩০০ শব্দ - PDF
এ ছাড়া তিনি আরও কয়েকটি কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে বলেন-
১. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও উপাসনা করো না।
২. পরের সম্পদ হরণ করো না ।
৩. কারও ওপর অত্যাচার করো না।
মহানবি হযরত মুহম্মদ (স) আরও বললেন— তোমাদের কাছে আমি দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। আল্লাহর বাণী আল-কুরআন ও আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ রাসুলের জীবনের আদর্শ। এ দুটি তোমাদের সঠিক পথ দেখাবে ।
উক্ত ভাষণের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো হলো -
- অবশ্যই একদিন সকলকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে। সেদিন সকলকে নিজ নিজ কাজের হিসাব দিতে হবে।
- স্ত্রীদের সাথে সদয় ব্যবহার করতে হবে। কারণ তাদের ওপর পুরুষদের যেমন অধিকার আছে তেমনি পুরুষদের ওপরও তাদের অধিকার আছে।
- আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা যাবে না। আর অন্যায়ভাবে একে অন্যকে হত্যা করা যাবে না।
- সর্বদা অন্যের আমানত রক্ষা করতে হবে এবং পাপকাজ হতে বিরত থাকতে হবে ।
- দেশ, বর্ণ, গোত্র, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল মুসলমান সমান। বংশগত শ্রেষ্ঠত্ব ভিত্তিহীন, শ্রেষ্ঠত্বের একমাত্র মাপকাঠি হলো তাকওয়া ও সৎকর্ম। সে ব্যক্তিই সবচাইতে সেরা যে নিজের সৎকর্ম দ্বারা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে।
- ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না, কেননা পূর্বের অনেক জাতিই এ কারণে ধ্বংস হয়েছে।
- মহানবি (স.)-এর মাধ্যমে নবুয়তের ধারা সমাপ্ত হয়েছে।
উপসংহার:
ইসলামের প্রবর্তক, মানবতার মুক্তির অগ্রদূত মহানবি হযরত মুহম্মদ (স)-এর বিদায় হজের ভাষণ মানবজাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর এ ভাষণে রয়েছে মানবতা ও ন্যায়বিচারের অমর বাণী
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা