Ads Area

রচনা : গ্রামোন্নয়নের ছাত্রদের কর্তব্য

ভূমিকা : 

বাংলাদেশ একটি গ্রামপ্রধান উন্নয়নশীল দেশ। প্রায় ৮৫ হাজার গ্রাম নিয়ে আমাদের দেশটি গঠিত। আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারা গ্রামকেন্দ্রিক। গ্রামকে কেন্দ্র করেই একদিন এ দেশের সভ্যতা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। আজ জ্ঞান-বিজ্ঞান ও আধুনিক জীবনধারার প্রভাবে আমাদের দেশে বিভিন্ন শহর গড়ে উঠেছে, কিন্তু তবুও শতকরা নব্বই ভাগ মানুষ এখনও দূর—গ্রামাঞ্চলে বাস করে।

গ্রামবাংলার দুরবস্থা : 

একদিন যে গ্রামকে কেন্দ্র করে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের জীবন আবর্তিত হতো, আজ আমরা সে গ্রামকে ভুলে যেতে বসেছি। একদিন গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে ছিল গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু, পুকুরভরা মাছ; গ্রামবাসীদের কণ্ঠে ছিল গান আর মুখে ছিল হাসি। বাংলার গ্রামগুলোর উৎসব আনন্দমুখর সে অবস্থা এখন আর নেই; নেই গ্রামের সে সৌম্য শান্ত শ্রী। আজ গ্রামবাংলার জনগণের মুখে অভাব-অনটন ও বিভিন্ন কারণে দুঃখ-দৈন্যজনিত বিষাদ গভীরভাবে ছায়াপাত করেছে। দারিদ্র্য, অশিক্ষা-কুশিক্ষা, সংকীর্ণতা ও কুসংস্কার গ্রামবাংলার জীবনকে একরূপ পঙ্গু করে দিয়েছে। এর ওপর প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো লেগেই আছে।

আরও পড়ুন : রচনা: দেশ / জাতি গঠনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা- ২০ পয়েন্ট

জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন : 

জাতির উন্নতি সাধন করতে হলে গ্রামবাংলার জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে হবে। গ্রামবাসীর মনে আশা দিতে হবে, মুখে হাসি ফোটাতে হবে। জনশিক্ষা, জনস্বাস্থ্য ও জনগণের আর্থিক অবস্থা যাতে ধীরে ধীরে উন্নতির পথে অগ্রসর হতে পারে সেজন্য পরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হতে হবে।

সরকারি কর্মসূচি : 

বর্তমানে সরকার গ্রাম উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গ্রামের লোকজনকে যাতে নিজেদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে দূরবর্তী কোথাও যেতে না হয়, সে লক্ষ্যেই সরকারের বিভিন্ন গ্রামোন্নয়ন কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। তাই প্রতি মুহূর্তে, প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমস্যায় সরকারের শরণাপন্ন না হয়ে জনগণকে আজ নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সময় এসেছে এবং এতে ছাত্রসমাজ অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারে।

গ্রামোন্নয়নে ছাত্র সমাজের ভূমিকা : 

আজকের ছাত্রসমাজ আগামীদিনে জাতির কর্ণধার। আর তাই এখন থেকেই তাদেরকে পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সঙ্গে পরিচিত হয়ে তা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। ছাত্রসমাজের প্রধান কাজ শিক্ষার্জন। অবসর সময়টা অযথা না কাটিয়ে সমাজসেবামূলক তথা গ্রামোন্নয়মূলক কাজে লাগাতে হবে।

আরও পড়ুন : প্রতিবেশীর প্রতি কর্তব্য - বাংলা প্রবন্ধ রচনা

নিরক্ষরতা দূরীকরণ : 

গ্রামবাংলার অধিকাংশ লোক আজ শিক্ষার অভাবে সংকীর্ণতা ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে জীবন কাটাচ্ছে। গ্রামবাসীকে শিক্ষার আলো দিতে হবে। নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযানই হবে গ্রামোন্নয়নের প্রথম কথা। ছাত্রসমাজকে নিরক্ষরতা দূরীকরণের কাজে এগিয়ে আসতে হবে। তারা গ্রামের গণশিক্ষা কেন্দ্রে এ কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারে। এ ছাড়া প্রত্যেকেই নিজ নিজ বাড়ির নিরক্ষর লোকদের অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন করে তোলার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে নিরক্ষরতা দূরীকরণ সহজ হবে।

কৃষি উন্নয়ন, মাছ চাষ এবং হাঁস মুরগির খামার স্থাপন : 

ছাত্ররা কৃষি উন্নয়ন কাজেও সাহায্য করবে। তারা আধুনিক কৃষি পদ্ধতি ও উপকরণ ব্যবহারে তাদের অভিভাবকদের সাহায্য করতে পারে। সংঘবদ্ধভাবে পতিত আবর্জনাপূর্ণ পুকুর সংস্কার করে মাছের চাষ করতে পারে। পতিত জমি আবাদ করে গাছপালা লাগাতে পারে। ফলমূল ও শাক-সবজি উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করতে পারে। হাঁস-মুরগির খামার গড়ে তুলতে পারে। গ্রামের রাস্তাঘাট সংস্কার করতে পারে।

বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা : 

রোগব্যাধি গ্রামবাসীদের একটি প্রধান সমস্যা। সমস্যার সর্বপ্রধান কারণ বিশুদ্ধ সুপেয় পানির অভাব। ছাত্ররা আবর্জনাপূর্ণ হজামজা পুকুর, দীঘি সংস্কার করতে পারে, নলকূপ বসাতে সাহায্য করতে পারে ৷

উপসংহার : 

বাংলাদেশের জনসমষ্টির এক বিরাট অংশ দেশের ছাত্রসমাজ। দেশের শতকরা নব্বই ভাগ লোক গ্রামে বাস করে। সে অনুপাতে ছাত্রসংখ্যার অধিকাংশই গ্রামবাসী। তাই গ্রামের ছাত্ররা যদি সংগঠিত হয়ে একযোগে কিছু করতে উদ্যোগী হয়, তবে গ্রামের উন্নয়ন সহজতর হবে। ছাত্রদের অবসর সময় কাজে লাগাতে হবে। দেশের নানাবিধ কাজে অংশগ্রহণ করে ছাত্ররা দক্ষতা অর্জন করবে এবং এ সময়ের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতেও তাদের উপকারে আসবে।

Post a Comment

0 Comments