বাগধারা অর্থ কি?কাকে বলে।বাগধারার গঠন,ব্যবহার,প্রয়োজনীয়তা

(toc) Table Of Contens

বাগধারা কী :

বাগধারা বা বিশিষ্টার্থক শব্দের অর্থ কথা বলার বিশেষ ঢং বা রীতি। এটা এক ধরনের গভীর ভাব ও অর্থবোধক শব্দ বা শব্দগুচ্ছ। বাগ্ধারার সাহায্যে নতুন এবং বিশেষ ধরনের অর্থবোধক শব্দ বা শব্দগুচ্ছ গঠিত হয়। একে বাগ্বিধিও বলা হয়। ইংরেজিতে এদেরকে ‘ইডিয়ম' (idiom) বলে।

বাগধারার সংজ্ঞা : 

প্রত্যেক ভাষায় এমন কিছু শব্দ আছে, যার মধ্যে অর্থগত ও ব্যবহারগত বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এরা প্রত্যেক ভাষারই অলংকারস্বরূপ। তেমনি বাংলা ভাষায়ও এমন অনেক শব্দ আছে, যা বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে সাধারণ অর্থের বাহিরে বিশিষ্ট অর্থ প্রকাশ করে ৷ এ জাতীয় বৈশিষ্ট্যের শব্দ বা শব্দসমষ্টিকে ‘বাগধারা' বলে। বাগধারাকে ‘বাগ্‌বিধিও বলা হয় ।

বাগধারার গঠন :

সাধারণভাবে বাগধারা একাধিক শব্দ নিয়ে গঠিত হয় । বাগ্ধারা গঠনের নানা বিন্যাস দেখা যায়। যেমন- 

ক. একটি বিশেষ্য ও একটি বিশেষণ শব্দ সমাস বদ্ধ হয়ে বাগধারা গঠিত হতে পারে। যেমন- বকধার্মিক, কুপোকাত ইত্যাদি ।

খ. দুটি বিশেষ্য শব্দ সমাসবদ্ধ হয়ে বিশেষ্য বা বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন- গোবর গণেশ, কুরুক্ষেত্র- কাণ্ড; ইত্যাদি ।

গ. এক বা একাধিক বিশেষ্যবাচক বা বিশেষণবাচক শব্দের সাথে ক্রিয়াবাচক শব্দ যুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ বাগ্ধারাটি ক্রিয়াপদ হিসেবে গণ্য হতে পারে। যেমন- কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা, ঘাড়ে ভূত চাপা, এক ঢিলে দুই পাখি মারা ইত্যাদি ।

ঘ. ধাতুর সাথে ‘আনো' প্রত্যয় যোগ করে বিশেষ্য বা বিশেষণ বা ক্রিয়াপদ গঠিত হতে পারে। যেমন- সাঁটানো, গ্যাজানো, কেলানো ইত্যাদি ।

ঙ. একটি ধাতুর দ্বিত্ব করে প্রথম অংশে ‘আ' এবং দ্বিতীয় অংশে 'ই' যোগ করে বিশিষ্টার্থক শব্দ তৈরি হয় এবং পুরো শব্দটি বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন- ধরাধরি, মাখামাখি, নাচানাচি ইত্যাদি।

আরও পড়ুন :- গুরুত্বপূর্ণ বাগধারা তালিকা পয়েন্ট আকারে - সাথে pdf

বাগধারার ব্যবহার : 

বাক্যে 'অলংকার' 'উপমা' উপাধি'তে এগুলো ব্যবহার হয়। বিভিন্ন প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য, আচার ইত্যাদির উপমায় এগুলো ব্যবহার হয় । বাগ্ধারা ভাষার সৌন্দর্য সৃষ্টি করে, অর্থে স্পষ্টতা ও ভাবে ব্যঞ্জনা আনে এবং বক্তব্যকে আকর্ষণীয় করে কথায় শ্রুতিমাধুর্য দান করে। যেমন-

ক. শিষ্টরীতি বা রীতিসিদ্ধ প্রয়োগ ঘটিত : ছাত্রটির মাথা ভাল । এখানে 'মাথা' বলতে ‘দেহের অঙ্গবিশেষ’ বুঝায় না, বুঝায় ‘মেধা’।

শব্দের অর্থ সংকোচন : ইনি আমার বৈবাহিক । এখানে 'বৈবাহিক' শব্দ 'বিবাহ সূত্রে সম্পর্কিত' অর্থ না বুঝিয়ে ‘ছেলে বা মেয়ের শ্বশুর সম্পর্কিত' ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে।

গ. শব্দের অর্থান্তর প্রাপ্তিতে : মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে তত্ত্ব পাঠানো হয়েছে। এখানে 'তত্ত্ব' শব্দটির আভিধানিক অর্থ ‘সংবাদ’ না বুঝিয়ে ‘উপঢৌকন’ বুঝাচ্ছে। এতে নতুন অর্থের আবির্ভাব বলা চলে।

ঘ. শব্দের উৎকর্ষ প্রাপ্তিতে : শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস । এখানে ‘পরমহংস' শব্দের সঙ্গে হাঁসের কোন সম্পর্ক নেই, এর অর্থ 'সন্ন্যাসী'।

ঙ. শব্দের অপকর্ষ বা অধোগতি বুঝাতে : জ্যাটামি করো না। এখানে ‘জ্যাঠামি' শব্দের সঙ্গে 'জ্যাঠা'র (পিতার বড় ভাইয়ের) কোন সম্পর্ক নেই; ‘ধৃষ্টতা' অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কাজেই দেখা যাচ্ছে যে, শব্দের ব্যবহার দু'প্রকার । যথা- ১. বাচ্যার্থ ও ২. লক্ষ্যার্থ । 

১. বাচ্যার্থ : যে সব শব্দ তাদের আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত হয়, এই আভিধানিক অর্থই তাদের বাচ্যার্থ।

২. লক্ষ্যার্থ : যে সব শব্দ তাদের আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত না হয়ে অন্য অর্থে ব্যবহৃত হয়, ঐ অন্য অর্থগুলো তাদের লক্ষ্যার্থ। 

আরও পড়ুন : বাংলা গুরুত্বপূর্ণ বাগধারা (MCQ) - পর্ব - ১

বাগধারার প্রয়োজনীয়তা :

বাগ্‌ধারা কথ্য ভাষার সম্পদ হলেও সাহিত্যের ক্ষেত্রে এখন তার বিচরণ লক্ষণীয়। সময়ের বিবর্তনে মানুষ তার ভাষাকে বা ভাবকে অন্যের কাছে আকর্ষণীয় করতে, বক্তব্য হৃদয়গ্রাহী ও ভাষাকে মাধুর্যময় করতে বাগ্ধারা বা বাগ্‌বিধির প্রয়োগ করছে ।

বাংলা ভাষার নিজস্ব সম্পদ বাগধারা ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম। সংক্ষেপে ও সুন্দর করে অনেক ক্ষেত্রে ছন্দ মিল রেখে উপমা ব্যবহার করে প্রবাদে সমাজের কোন মূল্যবান অভিজ্ঞতা প্রকাশ করা যায়। আমাদের দৈনন্দিন কথাবার্তায় প্রবাদ-প্রবচন অলঙ্কার হিসেবে কাজ করে । প্রবাদ-প্রবচনের খুব বড় এবং গভীর কথাও অল্প পরিসরে সুন্দরভাবে বলা সম্ভব হয়। স্মরণীয় যে, প্রবাদ- প্রবচন যখন বাক্যে প্রয়োগ করবে তা যেন সার্থক হয়ে বাক্যটির অর্থ স্পষ্ট হয়ে ওঠে । 

প্রবাদ-প্রবচন ও বাগধারা সে ধরণের সজ্জিত ও ছন্দময় বচন যার মধ্য দিয়ে একটি লোক সমাজের কোন জ্ঞান বা মনোরম অভিজ্ঞতা প্রকাশ পায়। প্রবাদ-প্রবচন ও বাগ্‌ধারার দুটি দিক। একটি লোকের অভিজ্ঞতা, কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বাগ্ধারা অন্যটি তার বিশেষ চিত্তাকর্ষণ সংগঠন- যা সহজেই হৃদয়গ্রাহী হয়ে ওঠে।


Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad