সূচনা :
অতি প্রাচীনকালে কুকুরই সর্বপ্রথম মানুষের পোষমানে। গৃহপালিত প্রাণীগুলোর মধ্যে কুকুর খুবই প্রভুভক্ত। এর প্রভুভক্তি সবাইকে আকর্ষণ করে। কুকুরের ঘ্রাণশক্তি খুবই প্রখর। সেজন্য দস্যু ও হত্যাকারীকে খুঁজে বের করতে অনেক সময় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে অনেক ধনী ব্যক্তি কুকুর পোষে; কিন্তু পাশ্চাত্য দেশে প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে পোষা কুকুর দেখা যায়। কুকুর প্রভুকে খুব ভালোবাসে বলেই তার মৃত্যুতে ঘেউ ঘেউ করে চোখের পানি ফেলে।
আকৃতি :
পৃথিবীর সর্বত্রই কম বেশি কুকুর দেখতে পাওয়া যায়। এগুলো নানা জাতের ও নানা আকারের হয়ে থাকে। এদের কেনোটির কান ছোট আবার কোনোটির কান লম্বা হয়। বাংলাদেশী কুকুর ক্ষীণ দুর্বল এবং আকারে ছোট। অ্যালসেসিয়ান কুকুর আকারে বেশ বড় এবং স্বভাবে খুবই হিংস্র। এগুলো অনেকটা নেকড়ে বাঘের মতো দেখায় ৷
বাংলাদেশী কুকুরের গায়ে ছোট ছোট লোম আছে, কিন্তু পাশ্চাত্য দেশে এমন কুকুরও দেখা যায়, যেটির দেহ বেশ বড় বড় লোমে ঢাকা থাকে। কুকুরের গায়ের রং সাধারণত কালো, বাদামি ও ছাই রঙের হয়ে থাকে। এগুলো এক হাত হতে আড়াই হাত পর্যন্ত উঁচু এবং দুই থেকে তিন হাত দীর্ঘ হয়। দৈর্ঘ্য ও উচ্চতায় অ্যলসেসিয়ান কুকুর সাধারণ কুকুর অপেক্ষা অনেক বড়। বাংলাদেশে কুকুর প্রায় এক রকমেরই হয়ে থাকে। কিন্তু পাশ্চাত্য দেশে ব্লাড হাউন্ড, অ্যালসেসিয়ান, স্প্যানিয়াল ইত্যাদি নানা জাতের কুকুর দেখতে পাওয়া যায়। এ সকল কুকুরের দামও অনেক।
আরও পড়ুন : ঘোড়া রচনা - ২টি (একটা ছোট একটা বড়)
প্রকৃতি :
স্বভাবের দিক দিয়েও কুকুর বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। কোনোটি হিংস্র, কোনোটি শান্ত, আবার কোনোটি উগ্র। অ্যাসেসিয়ান, ব্লাড হাউন্ড এবং স্প্যানিয়াল জাতের কুকুর সাধারণত হিংস্র ও ভয়ঙ্কর প্রকৃতির হয়ে থাকে। অন্যান্য জাতের কুকুর অপেক্ষাকৃত শান্ত ও কম হিংস্র। তবে সকল ধরনের কুকুরই পোষমানে ৷
আহার্য :
দেশি কুকুর ভাত, ডাল, মাছ, মাছের কাঁটা, মাংসের হাড়গোড় যা পায় তাই খায়। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য পায় না বলে এদের খাদ্যবস্তুর কোনো বাচবিচার নেই। তাই এরা ক্ষীণ, দুর্বল, রুগ্ণ ও খিটখিটে স্বভাবের হয়ে থাকে। কিন্তু পাশ্চাত্য দেশের কুকুরের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে খাদ্যের ব্যবস্থা করা হয়। স্বাস্থ্য সৌন্দর্য রক্ষা করার জন্য প্রচুর পরিমাণে খাদ্য দেয়া হয়। এসব কুকুর পালন করা খুবই ব্যয়সাধ্য এবং লালন পালন করা একমাত্র ধনী লোকের পক্ষেই সম্ভব।
দক্ষতা :
কুকুরের কিছু বিশেষ গুণ রয়েছে। যা অন্য কোনো প্রাণী বা মানুষের ভেতর নেই। যেমন—কুকুরের শ্রবণ, ঘ্রাণ ও দৃষ্টিশক্তি খুবই প্রখর। সামান্য একটু শব্দ হলেই এরা ঘুম থেকে জেগে ওঠে। তাই রাতে কুকুরের প্রভুর বাড়িতে চোর বা দুষ্ট প্রকৃতির লোক প্রবেশ করতে পারে না। ঘ্রাণশক্তির বলে পলাতক দস্যু বা আসামির সন্ধান এরা সহজেই করতে পারে। তাই গোয়েন্দা বিভাগের লোকেরা অনেক সময় কুকুরের সাহায্য নিয়ে থাকে। অন্ধকার রাতেও এরা স্পষ্ট দেখতে পায়।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশের জাতীয় পশু : বাঘ রচনা
উপকারিতা :
কুকুরের প্রভুভক্তির তুলনা হয় না। এ জীবগুলো প্রভুর জন্য জীবন দিতেও দ্বিধাবোধ করে না; বরং জীবন দিয়ে প্রভুকে রক্ষা করে। প্রভু কোনো স্থানে গেলে কুকুর তার সাথে সাথে যায়। কয়েকদিন অনুপস্থিত থেকে প্রভু যদি বাড়ি ফিরে আসে, কুকুরও তাকে দেখে খুশি হয় ও আনন্দে লেজ নাড়তে থাকে। কুকুর পালিয়ে যাওয়া কোনো প্রাণী ও লোককে সহজেই খুঁজে বের করতে পারে।
অপকারিতা :
কুকুর আমাদের কিছুটা অপকারও করে থাকে। এদের কামড়ে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ মারা যায়। এরা অনেক সময় বাইরে থেকে নোংরা জিনিস এনে বাড়িঘর নোংরা করে। যা আমাদের পরিবেশ নষ্ট করে। তবে অপকারের চাইতে উপকারই করে অনেক বেশি।
উপসংহার :
কুকুরের মতো প্রভুভক্ত প্রাণী খুব কমই আছে। প্রভুর জন্য প্রাণ দিতেও এরা দ্বিধাবোধ করে না। এদের ভালো করে যত্ন করা এবং ভালো খাদ্য দেয়া উচিত। সেই সাথে বংশ বিস্তার এবং পোষমানাতেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন ৷