রচনা : ইবাদত অথবা ইবাদতের তাৎপর্য

ভূমিকা : 

ইবাদত অর্থ দাসত্ব। মানুষের গোটা জীবনে যত কাজকর্ম আছে, প্রত্যেকটির মধ্যেই আল্লাহর নির্ধারিত সীমা পালন করতে হয়; কিন্তু মানুষ নানাবিধ লোভ লালসার ঘাত প্রতিঘাতে আল্লাহর দেয়া সীমাগুলো লঙ্ঘন করে। এ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ মানুষের জন্য ভিন্ন রকমের কয়েকটি ইবাদতের ব্যবস্থা করেছেন।

বিভিন্ন ধরনের ইবাদত : 

ইসলামে বেশ কয়েকটি আনুষ্ঠানিক ইবাদত রয়েছে। যেমন— নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো—

নামায : 

অযু সম্পূর্ণরূপে পাক-পবিত্র হয়ে, বিনীতভাবে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়ায়ে নির্দিষ্ট নিয়মে রুকু করে এবং শরীরের শ্রেষ্ঠ অঙ্গ মাথা মাটিতে লুটিয়ে সেজদা করে আল্লাহ তায়ালার যে ইবাদত করা হয়, তাকেই নামায বলে। এটা মানুষকে একান্তভাবে আল্লাহর ধ্যানে নিমগ্ন রাখে এবং জাগতিক সকল বিষয় থেকে আলাদা করে দেয়। আল্লাহকে অন্তরে অধিষ্ঠিত করার এ এক প্রকৃষ্ট উপায় ।

আরও পড়ুন : নামাজের শিক্ষা / সমাজ সংস্কারে নামাজের ভূমিকা – রচনা 

রোযা : 

ইসলামের পরিভাষায় ‘সুবহে সাদিক’ থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনোরূপ পানাহার ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি ভোগ থেকে বিরত থাকাকে রোযা বলে । রমযানের রোযা সংযম সাধনার মাধ্যমে প্রবৃত্তিকে আয়ত্তে আনার একটি প্রকৃষ্ট উপায়। এছাড়াও ইসলামে অনেক ধরনের রোযা রয়েছে, তবে রমযানের রোযাই প্রধান।

যাকাত : 

‘যাকাত’ অর্থ পবিত্রতা। শরীয়তের ভাষায় অর্থ সম্পদের পবিত্রতা অর্জনের জন্য বছরে একবার করে শরীয়তের নির্দিষ্ট হারে বাধ্যতামূলক যে দান করতে হয়, তাকে যাকাত বলে। যাকাতের অন্যতম উদ্দেশ্য ব্যক্তি জীবনের সংশোধন-অর্থ সম্পদের প্রতি মানুষের ঘৃণ্য আসক্তি, কৃপণতা, হিংসা, বিদ্বেষ প্রভৃতি নৈতিক ব্যাধিসমূহ দূর করা।

হজ্জ : 

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শরীয়তের নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী মক্কা শরীফে অবস্থিত কাবা শরীফ যেয়ারত করাকে হজ্জ বলে। সম্পদশালী প্রত্যেক মুসলমানের ওপর হজ্জ জীবনে একবার ফরয। প্রতি বছর হাজীদের হজ্জে গমন ও হজ্জ থেকে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে পৃথিবীর প্রতিটি অঞ্চলের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনে-প্রাণে এক অভিনব আলোড়ন উত্থিত হয়। ইসলামী প্রাণচাঞ্চল্য বজায় রাখার ব্যাপারে, হজ্জের এক বিরাট সার্থকতা রয়েছে। হজ্জের মাধ্যমে বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়। হজ্জ মুসলমানের এক মহাসম্মিলন। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সহাবস্থানের এক বড় শিক্ষা পাওয়া যায় হজ্জের ইবাদত থেকে।

আরও পড়ুন : রোযার শিক্ষা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা 

তাৎপর্য : 

ইসলামের আনুষ্ঠানিক ইবাদতগুলোর বিশেষ তাৎপর্য হচ্ছে মানুষের চারিত্রিক উন্নতি। এ উন্নতি ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে প্রতিফলিত হলেই এ ইবাদতগুলো সার্থক হয়। এ ইবাদতগুলো কর্মজীবনকে আল্লাহ তায়ালার পথে পারিচালিত করবে; এটাই আল্লাহর ইচ্ছা। তাই ইসলামের সুনির্ধারিত আনুষ্ঠানিক ইবাদতগুলো পালন প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুমিনের অবশ্য কর্তব্য। মনে রাখতে হবে, কেবল এগুলোই ইবাদত নয়; আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়ত করলে মুমিনের যাবতীয় বৈধ কর্মই ইবাদতের শামিল হয়। আল্লাহকে পেতে হলে পরকালের পথকে সুগাম করতে হলে ইবাদতের কোনো বিকল্প নেই। নিয়মিত ইবাদতই ধর্মের মূল কথা।

Advertisement Advertisement

উপসংহার : 

চরিত্র গঠন, ইসলামের নির্দেশ অনুসরণ প্রভৃতিতে ইবাদতের গুরুত্ব অপরিসীম। ইবাদত চরিত্র নির্মল করে, শরীর মন পবিত্র করে এবং জীবনকে সুন্দর করে তোলে।

আরও পড়ুন 

আমার মূল লক্ষ্য একটাই (Sikkhagar-শিক্ষাগার) ওয়েবসাইটের হাত ধরে “শিক্ষা হবে উন্মুক্ত ও বাণিজ্যমুক্ত”। এই প্লাটফর্মে থাকবে একাডেমিক প্রস্তুতি, ভর্তি প্রস্তুতি, চাকরি প্রস্তুতি, স্পেশাল স্কিল এবং ধর্মীয় শিক্ষাসহ নানাবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।

Leave a Comment

Advertisement Advertisement
error: Content is protected !!