রচনা : মানব সভ্যতার বিকাশ ও বিজ্ঞান

ভূমিকা : 

মধ্যযুগ থেকে বিজ্ঞান এবং সভ্যতার অগ্রগতি শুরু হয়। সভ্যতার বিকাশ ঘটে মূলত বিজ্ঞানকে ঘিরে। বিজ্ঞানের চেতনা ও উৎকর্ষ মানুষকে আজ উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।

সভ্যতার সাথে পরিচয় : 

আগুনের আবিষ্কারই আদিম মানুষের সভ্যতার সাথে প্রথম পরিচয়। তারপর মানুষ ধীরে ধীরে খাদ্য, বাসস্থান, পোশাক প্রভৃতির সাথে পরিচিত হয়। পরিচিত হয় আধুনিক সভ্যতার সাথেও। তারপর থেকে মানুষকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। সভ্যতার একপর্যায়ে বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কার আধুনিক সভ্যতাকে করায়ত্ত করে

সভ্যতার তাৎপর্য : 

মানুষের প্রকৃত কল্যাণ ছাড়া আধুনিক সভ্যতার আর কোনো উদ্দেশ্য নেই। মানব ইতিহাসের সুপ্রাচীনকাল থেকেই ক্রমান্বয়ে সভ্যতার জন্ম হয়েছে এবং মানুষের জীবনকে সুখী সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলেছে। কিসে মানুষ নিরাপদ হবে, কেমন করে তার প্রাত্যহিক জীবন সুখের হবে, কেমন করে গোটা মানবসমাজ মিলেমিশে পরম শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারবে, সভ্যতা তাই শিখিয়েছে। প্রথম থেকে সভ্যতা আবিষ্কার তার স্বপ্ন রচনা করেছে এবং তাকে সাধনায় ব্রতী করেছে ।

আরও পড়ুন : মানব কল্যাণে বিজ্ঞান অথবা বিজ্ঞানের জয়যাত্রা - রচনা | PDF 

সভ্যতা সৃষ্টির সহায়ক বিষয়সমূহ : 

সভ্যতা বিজ্ঞানের দান। বিজ্ঞান এ যুগের সভ্যতাকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছে তিলোত্তমার মতো। যে প্রকৃতির হাতে মানুষ একদিন বন্দি ছিল, সে প্রকৃতি আজ বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষের করায়ত্ত। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনীষিগণ দিনের পর দিন চিন্তা ও সাধনায় নিয়োজিত থেকে আবিষ্কার করেছেন প্রকৃতির গোপন রহস্য।

বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার : 

আধুনিক বিজ্ঞান সময় ও দূরত্বকে জয় করেছে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার লোকদেরকে পরস্পর সাংস্কৃতি, কৃষ্টি ও সভ্যতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। জেমস ওয়াট স্টীম ইঞ্জিন ও জর্জ স্টিফেনসন রেলগাড়ি আবিষ্কার করেন ৷ ফ্যারাডে বিদ্যুৎ আবিষ্কার করেন। টমাস এডিসন বিদ্যুৎকে কাজে লাগিয়ে মানবের অপার কল্যাণ সাধন করেছেন। রাইট ভ্রাতৃদ্বয় উড়োজাহাজ আবিষ্কার করেন। 

অধ্যাপক রঞ্জনের আবিষ্কৃত রঞ্জন-রাশ্মি, অধ্যাপক কুরী ও মাদাম কুরীর আবিষ্কার রেডিয়াম আধুনিক সভ্যতায় যুগান্তর এনেছে। লুই পাস্তুর জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক ইনজেকশন ও পানি বসন্ত রেগের জীবাণু নিবারণে ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন। আলেকজান্ডার টেলিফোন, জন এল বেয়ার্ড টেলিভিশন, গ্যালিলিও টেলিস্কোপ, মার্কনি রেডিও, ফারেনাইট থার্মোমিটার আবিষ্কার করেন। আণবিক শক্তির আবিষ্কার আধুনিক সভ্যতারই কৃতিত্ব ও গৌরব।

আরও পড়ুন : মানব কল্যাণে বিজ্ঞান - বাংলা  রচনা  (২০ পয়েন্ট )- PDF

আধুনিক সভ্যতা ও বিজ্ঞান : 

সন্ধানী মানুষের চোখে যে দিন আলোর শিখা জ্বালানোর কৌশল ধরা পড়ে, তখন সে আবিষ্কার করে বাষ্প ইঞ্জিন। সেদিন সূচিত হয় সভ্যতা অর্থাৎ বিজ্ঞানের জয়যাত্রার প্রথম অধ্যায়। বিদ্যুৎশক্তি আবিষ্কার মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও দূরদূরান্তে গমনাগমন হাজার গুণ সহজ করেছে। বৈদ্যুতিক পাখা, টেলিগ্রাফ, টেলিফোন, রেডিও, টেলিভিশন যন্ত্র প্রভৃতি বিদ্যুৎ তরঙ্গের রহস্যময় মহাশক্তিকে আশ্রয় করে দাঁড়িয়েছে। তড়িৎ তরঙ্গের মাধ্যমে দুনিয়ার এক প্রান্তের সংবাদ মুহূর্তের মধ্যে অন্য প্রান্তে গিয়ে পৌঁছছে। 

বিজ্ঞানের সাহায্যে মানুষ মৃত্যুর কবল থেকে ফিরে আসতে সমর্থ হচ্ছে। রঞ্জন রশ্মি ও রেডিয়াম বিজ্ঞানজগতে ও সভ্যতায় যুগান্তর এনেছে। রঞ্জন-রশ্মি ও আল্ট্রাসনোগ্রাফির সাহায্যে শরীরের অদৃশ্য কতু দৃশ্যমান করে তার চিকিৎসা হচ্ছে। রেডিয়াম ক্যান্সারের মতো ভয়ানক ক্ষতের মারাত্মক বিক্রিয়া বহুলাংশে প্রতিহত করছে। পেনিসিলিন, ক্লোরোমাইসিন, স্টেপটোমাইসিন ইত্যাদি মহৌষধ আবিষ্কারের ফলে কোটি কোটি মানুষ দূরারোগ্য ব্যাধির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে ৷

একবিংশ শতাব্দী ও বিজ্ঞান : 

আজ আমরা একবিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে এসে দাঁড়িয়েছি। বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার ফলে আজ আমাদের হাতে এসেছে মোবাইল, ই-মেইল, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট, রোবট আর কম্পিউটারের বিস্ময়কর প্রোগ্রাম ও কার্যক্রম। আমাদের আজকের এ সভ্যতা সম্পূর্ণরূপে বিজ্ঞানের কাছে ঋণী।

উপসংহার : 

আধুনিক সভ্যতায় বিজ্ঞানের দানই সর্বশ্রেষ্ঠ। এজন্য মানব সভ্যতা বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীর কাছে ঋণী। বিজ্ঞানের অবদানে মানুষ সত্যিই বিশ্বজয়ী হয়েছে। তাই বিজ্ঞানকে ধ্বংসের কাজে প্রয়োগ না করে যদি কল্যাণের কাজে প্রয়োগ করা হয়, তবে সভ্যতার জয়যাত্রা অব্যহত থাকবে। আর সভ্যতার আরো বিকাশ ঘটবে মানবীয় গুণাবলিকে ঘিরে। জীবন হবে সুন্দর সুখময়।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad