প্রবন্ধ রচনা : প্রকৃতি ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক

ভূমিকা : 

প্রতিটি মানুষ প্রকৃতির সন্তান। বিশেষ একটা প্রাকৃতিক নিয়মনীতির মধ্য দিয়ে মানুষ পৃথিবীতে আসে। আর প্রকৃতি মানব সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় আলো-বাতাসসহ সবকিছু তার পৃথিবীতে আগমনের পূর্বেই সুসজ্জিত করে রাখে। পাশাপাশি বিজ্ঞান মানুষকে জীবন, সংস্কৃতি ও সভ্যতার উচ্চ আসনে সমাসীন করে। পৃথিবীর অন্ধ প্রকৃতির কাছে বিজ্ঞানের ভূমিকা সর্বোচ্চ। তাই প্রকৃতি ও বিজ্ঞান ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

আদিম প্রকৃতি : 

আদিকালে মানুষ যখন অরণ্যে বাঁস করত, তখন সে শীত থেকে আত্মরক্ষা করতে জানত না। ঝড়ের মুখে তার সকল শক্তি তুচ্ছ হয়ে যেত, তুষারপাতে তার অস্তিত্ব বিলীন হতো। মানব সভ্যতার এ পর্যায়ে হিংস্র পশুর সাথে যুদ্ধ করে ফলমূল খেয়ে তাকে জীবন ধারণ করতে হতো।

মানুষের আবিষ্কার : 

প্রকৃতির গতিপথে প্রস্তর যুগে কোনো এক শুভ মুহূর্তে মানুষ আগুন আবিষ্কার করল। এ আবিষ্কার তার জীবনধারায় পরিবর্তন এনে দেয়। তখন থেকেই প্রকৃতির সাথে মানুষের নিরন্তর সংগ্রাম চলছে। মানুষ খনির গর্ত থেকে কয়লা আহরণ করছে, সাগরকে সেতু দ্বারা বেঁধে দিচ্ছে। আকাশে বিচরণ করছে। দূরকে নিকট করছে, রোগ জয় করছে। শতভাবে শতরূপে মানুষ প্রকৃতিকে হার মানাচ্ছে। এমনকি প্রকৃতিকে জয় করা এখন তার একটি নেশা মাত্ৰ ৷

আরও পড়ুন :-  প্রবন্ধ রচনা : বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব

বিজ্ঞানের জয় : 

প্রকৃতিকে এভাবে জয় করার যে জ্ঞান মানুষ লাভ করেছে, তাকেই বলে বিজ্ঞান। প্রকৃতির রহস্য উন্মোচন করার জন্য বিজ্ঞানের নিত্য নব নব অভিযান। মহাশূন্যের রহস্যও সে ভেদ করেছে। তাই বলে বিজ্ঞান প্রকৃতির সৌন্দর্য উপলব্ধি করেনি, একথা মনে করার কোনো কারণ নেই। বিজ্ঞান প্রকৃতিকে বিনাশ করতে চায় না, তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করতে ইচ্ছা করে। 

বিজ্ঞান একদিকে যেমন এনে দেয় আধুনিকতা ও ভবিষ্যতের উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা, তেমনি প্রকৃতিকে আরো ব্যাপকভাবে জানতে ও তার রহস্য উদ্ঘাটন করতে অনুপ্রেরণা যোগায়। এ কারণেই বিজ্ঞান যখন কোনো সমস্যার সমাধানে ব্যর্থতা উপলব্ধি করে, তখনই প্রকৃতির কাছে ছুটে যায়। এখানেই বিজ্ঞান প্রকৃতির কাছে ঋণী ।

বিজ্ঞানের অকল্যাণ : 

মানবতার শত্রু যারা, তাঁরা নিজেদের স্বার্থে মানুষের অকল্যাণ সাধন করতে ইচ্ছুক, তারা বিজ্ঞানকে ব্যবহার করতে চায় মারণাস্ত্র তৈরিতে। দুটি মহাযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজ্ঞানের ভয়াবহতা সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়েছে। আণবিক বোমা, হাউড্রোজেন বোমা— এসব নাম শুনলে আজ মানুষ মাত্রেরই হৃদকম্প উপস্থিত হয়। হিরোশিমা ও নাগাসাকীতে সভ্যতার যে শ্মশান রচিত হয়েছে, তা প্রত্যেক মানুষকে নিত্যদিন বিজ্ঞানের অভিশাপের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। মানুষ বিজ্ঞানকে স্বীয় স্বার্থপরতার অনুষঙ্গী হিসেবে কাজে লাগাতে সবিশেষ তৎপর। তাই আজকের বিশ্বে হানাহানির অন্ত নেই ।

আরও পড়ুন :- রচনা সহজ : দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান [ Class 6, 7, 8, 9, 10 ]

মানুষের কর্তব্য : 

প্রকৃতিকে ধ্বংস করা তো বিজ্ঞানের কাজ নয়; মানুষের কল্যাণে তা ব্যবহার করাই বিজ্ঞানের কাজ। মুষ্টিমেয় মানুষের প্রয়োজনে নয়, সামগ্রিকভাবে মানব জাতির প্রয়োজনে বিজ্ঞান প্রকৃতিকে অবাধে কাজে লাগাতে চায়। বসুন্ধরা বীরভোগ্যা হয়ত সত্যই, কিন্তু সে বীরকে কেব্ল শারীরিক শক্তিতে বীর হলেই চলবে না, বিজ্ঞান সাধনায়ও তাকে শ্রেষ্ঠ মানুষ বলে পরিগণিত হতে হবে। বিজ্ঞান উচ্চ-নীচ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য শান্তি ও সম্পদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছে।

উপসংহার : 

প্রকৃতি যেমন দিয়েছে সৌন্দর্য, স্নেহ, মমতা আর উন্মুক্ত প্রশান্তি, তেমনি বিজ্ঞান দিয়েছে আধুনিকতা, কর্মচাঞ্চল্য, গতিময় বিদ্যার উৎকর্ষতা এবং প্রযুক্তির উচ্চ আসন। তাই বিজ্ঞান ও প্রকৃতি একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অতএব মানব জীবনে শান্তি, স্বস্তির একমাত্র পথ প্রকৃতি ও বিজ্ঞানের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা।

আমার মূল লক্ষ্য একটাই (Sikkhagar-শিক্ষাগার) ওয়েবসাইটের হাত ধরে “শিক্ষা হবে উন্মুক্ত ও বাণিজ্যমুক্ত”। এই প্লাটফর্মে থাকবে একাডেমিক প্রস্তুতি, ভর্তি প্রস্তুতি, চাকরি প্রস্তুতি, স্পেশাল স্কিল এবং ধর্মীয় শিক্ষাসহ নানাবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।

Leave a Comment