ঐচ্ছিক, অনৈচ্ছিক ও হৃদপেশি কাকে বলে।এদের গঠন, কাজ, বৈশিষ্ট্য

সংজ্ঞা : যে সকল পেশী স্বেচ্ছায় সংকোচনশীল হতে পারে তাদেরকে ঐচ্ছিক পেশী বলা হয়। 

(toc) Table Of Contens

ঐচ্ছিক পেশীর গঠন বৈশিষ্ট্য : 

ঐচ্ছিক পেশী প্রাণীর ইচ্ছানুযায়ী সংকুচিত বা প্রসারিত হয়। ঐচ্ছিক পেশী টিস্যুর কোষগুলো নলাকার, শাখাবিহীন ও আড়াআড়ি ডোরাযুক্ত হয় । এদের সাধারণত একাধিক নিউক্লিয়াস থাকে । এই পেশী দ্রুত সংকুচিত ও প্রসারিত হতে পারে। এ পেশীকে ডোরাকাটা বা কঙ্কাল পেশীও বলে ।

অবস্থান : ঐচ্ছিক পেশী অস্থিতন্ত্র সংলগ্ন থাকে। যেমন- মানুষের হাড় ও পায়ের পেশীসমূহ ।

ঐচ্ছিক পেশীর কাজ কাজ : 

এটা বিভিন্ন অস্থির ঐচ্ছিক নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যম বিভিন্ন অঙ্গের সঞ্চালন এবং চলন নিয়ন্ত্রণ করে ।

আরও পড়ুন : পেশী কলা ও স্নায়ু কলার সংজ্ঞা, গঠন,  কাজ। পেশী কলার প্রকারভেদ

অনৈচ্ছিক পেশি :

সংজ্ঞা : যে সকল পেশী স্বেচ্ছায় সংকোনচশীল নয় তাদের অনৈচ্ছিক পেশী বলা হয়।

অনৈচ্ছিক পেশির গঠন :

ভ্রূণীয় মেসোডার্ম থেকে সৃষ্ট সংকোচন ও প্রসারণশীল বিশেষ ধরনের টিস্যুই হলো পেশি টিস্যু। পেশি টিস্যুর সংকোচন ও প্রসারণ প্রাণীর ইচ্ছাধীন নয়। তাই এরা অনৈচ্ছিক পেশি টিস্যু। এরা মাকু আকৃতির। এদের গায়ে আড়াআড়ি দাগ থাকে না। তাই এদের মসৃণ পেশিও বলে। এরা হৃদপেশির মতো শাখান্বিত নয়। সাধারণত দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গাদির সঞ্চালনে এরা অংশ নেয় মেরুদণ্ডী প্রাণীদের রক্তনালি, পৌষ্টিকনালি ইত্যাদির প্রাচীরে এ ধরনের পেশি দেখা যায় ।

অবস্থান : এই পেশী প্রধানত দেহ মধ্যস্থ ফাঁপা যন্ত্র বা নালীর প্রাচীরে, যেমন পাকস্থলী, অস্ত্র, মূত্রাশয়, শ্বাসনালী, রেচন নালী ইত্যাদি স্থানে অবস্থিত।

অনৈচ্ছিক পেশির বৈশিষ্ট্য : 

অনৈচ্ছিক পেশীর ধর্ম মোটামুটি ঐচ্ছিক পেশীর মত, তবে এই পেশীর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো হলো -

১। অনৈচ্ছিক পেশীর এক্সসাইটেবিলিটি অপেক্ষাকৃত কম্।

২। এই পেশীর সংকোচনশীলতা বা কন্ট্রাকটিবিলিটি খুব ধীর গতিতে ঘটে।

৩। এই পেশীর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো ছন্দোবদ্ধতা বা রিদমিসিট।

৪। এই পেশীর পরিবাহিতা বা কন্ডাকটিভিটি ধীর গতিতে সম্পন্ন হয় ।

অনৈচ্ছিক পেশির কাজ : 

এই পেশী স্বয়ংক্রিয় স্নায়ু (autonomic nerves) দ্বারা উদ্দীপিত হয়ে সংশ্লিষ্ট অঙ্গকে সংকুচিত হতে সহায়তা করে ।

আরও পড়ুন : আবরণী ও যোজক কলা কাকে বলে? এদের প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট ও কাজ

হৃৎপেশী : 

সংজ্ঞা : মেরুদণ্ডী প্রাণীদের হৃৎপিণ্ড যে বিশেষ ধরনের অনৈচ্ছিক পেশী দিয়ে গঠিত, তাকে কার্ডিয়াক বা হৃৎপেশী বলে। 

অবস্থান : মেরুদণ্ডী প্রাণীদের হৃৎপিণ্ডে এই বিশেষ পেশী অবস্থিত।

হৃদপেশির বৈশিষ্ট্য :

i. হৃদপেশি হলো মেরুদণ্ডী প্রাণীদের হূৎপিণ্ডের এক বিশেষ ধরনের অনৈচ্ছিক পেশি ।

ii. এ টিস্যুর কোষগুলো অনেকটা ঐচ্ছিক পেশির মতো নলাকৃতি ও আড়াআড়ি দাগযুক্ত ৷

iii. এছাড়াও এ টিস্যুর কোষগুলো শাখান্বিত এবং কোষগুলো শাখার মাধ্যমে পরস্পর যুক্ত থাকে ।

iv. কোষগুলোর মধ্যে ইন্টারক্যালেটেড ডিস্ক থাকে।

v. হৃৎপিণ্ডের সকল হৃদপেশি একটি নির্দিষ্ট গতিতে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে দেহের মধ্যে রক্ত চলাচলের প্রক্রিয়া সচল রাখে ।

হৃদপেশির গঠন :

১। হৃৎপেশীর তন্তুগুলো আকৃতিতে ক্ষুদ্র এবং বেলুনাকার ।

২। দীর্ঘচ্ছেদে আয়তাকার এবং প্রস্থচ্ছেদে বহুভুজাকার দেখায়। পেশীতন্ত্রতে একটি মাত্র নিউক্লিয়াস অবস্থিত।

৩। স্ট্রায়েশন অনুস্থ ও অনুদৈর্ঘ্য উভয়।

৪। সারকোলেমা অস্পষ্ট এবং অসম্পূর্ণ ।

৫। তন্তুগুলো শাখান্বিত। শাখা-প্রশাখাগুলো পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, ফলে তন্ত্রগুলোর মধ্যে প্রোটোপ্লাজমীয় সংযোগ গড়ে উঠেছে। এই কারণে হৃৎপেশীকে সিনসাইটিয়াম বলে । 

৬। হৃৎপেশীর কোষগুলোর সংযোগস্থলে কোষপর্দা ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে চাকতি বা প্লেটের আকার ধারণ করে। এই প্লেটগুলোকে নিবেশিত ফলক বা ইন্টারক্যালেটেড ডিস্ক বলে।

হৃদপেশির কাজ :

হৃদপিণ্ডকে তালে তালে বা নির্দিষ্ট ছন্দে সংকুচিত ও প্রসারিত করা এই পেশীর প্রধান কাজ ।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad