হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

রচনা : শিষ্টাচার ( ২০ পয়েন্ট )। SSC, HSC

উপস্থাপনা : 

মানুষ হিসেবে আমরা সামাজিক জীব। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা পরিবারের লোকজন, প্রতিবেশী ও সংশ্লিষ্ট লোকজনের সাথে বিভিন্ন কারণে দেখাশোনা ও মতবিনিময় করি। এসব কাজে প্রত্যেকের সাথে ভদ্র ও মার্জিত ব্যবহারের নামই শিষ্টাচার। মোটকথা সবার সাথে ভদ্রজনোচিত শালীন আচার-ব্যবহারকেই ‘শিষ্টাচার’ বা ‘আদব-কায়দা’ বলা হয়।

শিষ্টাচারিতার সংজ্ঞা : 

শিষ্টাচারিতার আভিধানিক অর্থ- সৌজন্য, ভদ্রতা, শিষ্টতা, আদব-কায়দা ইত্যাদি। পরিভাষায়- মার্জিত ও ভদ্র আচরণই শিষ্টাচার। আত্মীয়-অনাত্মীয়, পরিচিত-অপরিচিত, স্বধর্মী-বিধর্মী সকলের সঙ্গে ভদ্র ও রুচিসম্মত ব্যবহারই শিষ্টাচার ।

আরও পড়ুন : সততা / সত্যবাদিতা রচনা – (২০ পয়েন্ট)

শিষ্টাচারের বৈশিষ্ট্য : 

মানব চরিত্রের গভীরে শিষ্টাচারের মূল নিহিত। বাইরের চেহারায় ভেতরে সে রূপটি প্রতিফলিত হতে থাকে। সংযম ও ভদ্রতার আবরণেই শিষ্টাচার গড়ে ওঠে। আদবশীল ও শিষ্টাচারী মানুষের চরিত্রে রুক্ষ, অশীল, দুর্বিনীত ও হঠকারিতার স্থান নেই। মানব চরিত্রের প্রতিটি গুণকে মহিমান্বিত করে তোলে এই শিষ্টাচার। এভাবে জীবনের লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে এ মহৎ গুণটি।

শিষ্টাচারের গুরুত্ব : 

আমাদের জীবনে শিষ্টাচারের বা সৌজন্যবোধের গুরুত্ব অপরিসীম। সুন্দর ব্যবহার দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায়। নম্র ও ভদ্র আচরণ মানুষের মনের ওপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। আর তাই সমাজের সকল স্তরেই শিষ্টাচারের প্রয়োজন। স্কুল কলেজে, অফিস আদালত, সভা সমিতি, বাসে-ট্রেনে সব জায়গাতেই কতকগুলো সৌজন্যমূলক বিধি মেনে চলতে হয়। শুধু সামাজিক নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনেও শিষ্টাচার আবশ্যক।

তাই শিষ্টাচারের প্রকাশ ঘটলে সমাজের সকল স্তরে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ব বজায় থাকে, তখন জাতির চলার পথ প্রশস্ত হয়। মানুষে মানুষে সম্প্রীতি, পরিবেশকে সুন্দর, সর্বোপরি সমাজ জীবনকে সমুন্নত করার ক্ষেত্রে শিষ্টাচারের গুরুত্বের কথা বলে শেষ করা যায় না। । প্রবাদে আছে, ‘Courtesy costs nothing but buys everything. ‘ । 

আরও পড়ুন : রচনা : সংবাদপত্র (২০ পয়েন্ট) – PDF

শিষ্টাচারের মাধ্যম : 

শিষ্টাচার মানুষের মার্জিত আচরণিক রূপ। আমরা আমাদের প্রতিটি কাজকর্মে শিষ্টাচারের বিকাশ ঘটাতে পারি। যেমন- মাথার চুল কাটা থেকে পায়ের নখ কাটা এবং তা ভদ্রোচিতভাবে কাটা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, মানুষের সাথে সুন্দর ও শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা, সবার সঙ্গে আদব রক্ষা করা, পোশাক-আশাকে উন্নত রুচির পরিচয় দেওয়া, সময়ের মূল্য দেওয়া, লেখাপড়ায় ভালো ফল করা, সৎপথে চলা, সত্য কথা বলা ইত্যাদি সবই শিষ্টাচার প্রকাশের মাধ্যম। বদমেজাজ, অসঙ্গত পোশাক-আশাক, উদ্ধত ব্যবহার ও দুর্বিনীত আচরণ কখনো শিষ্টাচারের অঙ্গ হতে পারে না ।

মানবজীবন ও শিষ্টাচার : 

মানবজীবনের প্রথম শিক্ষাক্ষেত্র বা লালনক্ষেত্র হলো পরিবার। এ পরিবারই শিষ্টাচারিতা শিক্ষার প্রথম এবং প্রধান স্থান। পরিবারে থাকেন বাবা-মা, দাদা-দাদি অর্থাৎ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ, সমবয়সি ভাইবোন আর ছোটরা। অবস্থানভেদে তাদের সবার সাথে প্রয়োজনানুসারে মার্জিত ব্যবহার না করলে পারিবারিক শান্তি-সৌহার্দ বজায় থাকে না। অতএব পারিবারিক মধুর সম্পর্ক এবং শান্তি-সৌহার্দ বজায় রাখার জন্য সবাইকে শিষ্টাচার বা আদব-কায়দা জানতে হয় ।

ছাত্রজীবনে শিষ্টাচারের গুরুত্ব : 

ছাত্রজীবন হলো মানুষের প্রস্তুতিপর্ব। এরই ওপর নির্ভর করে তার পরবর্তী জীবনের সফলতা ও ব্যর্থতা। নির্ভর করে তার ভবিষ্যৎ জীবনের গতি-প্রকৃতি। এসময়ই হলো তার শিষ্টাচার ও সৌজন্য শিক্ষার যথার্থ কাল, তার উন্মেষ-লগ্ন। শিষ্টাচার ও সৌজন্যের ছোঁয়াতেই ছাত্র হয় বিনীত, ভদ্র। নতুন প্রাণ-সম্পদে হয় গৌরবান্বিত। ছাত্রজীবনে যে গুরুজনদের শ্রদ্ধা করতে শিখল না, যার উদ্ধত, অবিনীত ব্যবহারে শিক্ষক বিরক্ত, যার রূঢ়, অমার্জিত আচরণে, সহ-বন্ধুরা ক্ষুব্ধ, বেদনাহত, পরবর্তী জীবনেও তার একই আচরণের পুনরাবৃত্তি ঘটে । 

তখন সে হয় অশুভ-শক্তি ও অকল্যাণের মূর্ত প্রতীক। হতাশা, ব্যর্থতার তিল তিল দংশন-জ্বালায় সে নিজেকে নিঃশেষ করে। ছাত্রজীবনই মানুষের সুকুমারবৃত্তি লালনের শুভক্ষণ। এখানেই তার চরিত্রগঠনের ব্রত-অনুষ্ঠান। শিষ্টাচার ও সৌজন্য তো তার মনুষ্যত্ব অর্জনেরই সোপান । এরই মধ্যে আছে নিজেকে সুন্দর ও সার্থকতায় পরিপূর্ণ করে তোলার মহাশক্তি।

আরও পড়ুন : রচনা : বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ( ২০ পয়েন্ট ) – PDF

শিষ্টাচার না থাকার কুফল : 

আমাদের জাতীয় জীবনে যে অবক্ষয় যে পশ্চাৎপদতা তার অন্যতম কারণ হিসেবে রয়েছে শিষ্টাচারের অভাব। শিষ্টতা যেমন মানুষের ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক, ভদ্র ও মার্জিত রুচিশীল বিনয়ী, মিষ্ট স্বভাব যেমন একজন মানুষের চেহারায় স্বাতন্ত্র্য ফুটিয়ে তোলে, সকলের কাছে তাকে করে তোলে সম্মানের পাত্র। তেমনি অশিষ্ট মানুষ হাজার বিদ্বান, অর্থ ও প্রতিপত্তিশালী হলেও তার চেহারায় ও আচার আচরণে সর্বদা একটা কর্কশ, অমার্জিত ও অবিনয়ী ভাব ফুটে ওঠে। তার কথাবার্তাও হয় রূঢ় ও শিষ্টতাবর্জিত। 

মানুষ তাকে সামনে ভয় পায়, জ্ঞাতসারে এড়িয়ে চলে কিন্তু আড়ালে ঠিকই নিন্দা ও সমালোচনা করে, আবার জাতিগত শিষ্টাচারের অভাবে বিশ্ব চরম সংকটের মুখোমুখি হয়ে পড়ছে। তাই দেখা যায়, ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনে শিষ্টাচার বা সৌজন্যবোধ না থাকলে প্রবল অশান্তি সৃষ্টি হয়, দেশের জনকল্যাণমূলক কর্মকান্ড বিঘ্নিত হয়। সর্বোপরি বিশ্ব বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। 

রাজনৈতিক অঙ্গনে শিষ্টাচার : 

বিশ্বের বর্তমান দ্বন্দ্ব-বিক্ষুব্ধ ও প্রতিযোগিতামূলক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে চলছে ক্রমাগত কাদা ছোড়াছুড়ি। রাজনৈতিক দলসমূহ একে অপরকে অপ্রতিরোধ্য প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে পরস্পরের বিরুদ্ধাচরণে লিপ্ত। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না, একের ভালো অন্যে দেখতে পারে না। সবাই প্রতিযোগীদের পদদলিত করে উপরে উঠতে চায়।

এতে করে রাজনৈতিক পরিবেশ কলুষিত হয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তিও বিনষ্ট হয়। এ কারণেই রাজনৈতিক অঙ্গনে শিষ্টাচার শিক্ষা ও তার প্রয়োগ একান্ত জরুরি। রাজনৈতিক দলসমূহের পরস্পর পরস্পরকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করা উচিত, একে অপরের আদর্শকে সম্মান দেখানো উচিত।

আরও পড়ুন : রচনা : শৃঙ্খলাবোধ / নিয়মানুবর্তিতা ( ২০ পয়েন্ট )

দৈনন্দিন জীবনে শিষ্টাচার : 

মানুষ সব সময়ই একে অন্যের কাছ থেকে ভদ্র ব্যবহার আশা করে। সে কাঙ্ক্ষিত ব্যবহারের পরিবর্তে অভদ্রোচিত ব্যবহার পেলে কখনোই তাকে সুনজরে দেখবে না। সমাজে সে হবে নিন্দিত। দৈনন্দিন জীবনে মানুষকে হাজারো ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হয়, ভাববিনিময় করতে হয়, বিভিন্ন রকম কাজকর্ম আদান-প্রদান করতে হয়। সুতরাং জীবনে চলার পথে মানুষের সাথে মার্জিত ও ভদ্রোচিত ব্যবহার করলে অনেক কঠিন কাজও সহজসাধ্য হয়ে যায়। 

মানুষ যখন মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করে, উপযুক্ত সৌজন্য বজায় রেখে আচার-আচরণ করে, তখন স্বভাবতই ওই ব্যক্তি তার ওপর সন্তুষ্ট হয় এবং সে এ ব্যক্তির সামগ্রিক চাহিদার যতটুকু পূরণ করা সম্ভব ততটুকু পূরণে এগিয়ে আসে। সুতরাং দৈনন্দিন জীবনে শিষ্টাচার প্রদর্শন করলে সমাজে নিরবচ্ছিন্ন সুখ-শান্তি বিরাজ করবে। একমাত্র শিষ্টাচারের অভাবেই নানা ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয় এবং সমাজে নানা অঘটন ঘটে। 

শিল্প বাণিজ্যে শিষ্টাচার : 

বর্তমান আধুনিক প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শিল্প-কারখানায় শিষ্টাচার বা সৌজন্যবোধ একান্ত অপরিহার্য। ব্যবসায় বাণিজ্য ও শিল্পক্ষেত্রে সবার সাথে সৌজন্যবোধ বজায় থাকলে এক্ষেত্রে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়। শিষ্টাচার ও সৌজন্যতার অভাবে ব্যবসায়িক সম্পর্ক নষ্ট হয়, শিল্প কারখানার শ্রমিক মালিক সম্পর্ক নষ্ট হয়। এতে শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়ন ব্যাহত হয়। তাই শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি করতে হলে প্রতারণা, অসত্য, লোক ঠকানোর মতো ঘৃণিত কর্মকাণ্ডকে পরিত্যাগ করতে হবে। সৎ পথে থেকে এবং শিষ্টাচারে ব্রতী হয়ে সামনে অগ্রসর হলে সফলতা নিশ্চিত।

শিষ্টাচার সম্পর্কে ভুল ধারণা : 

শিষ্টাচারকে অনেকে দুর্বলতা মনে করে। এরা মনে করে শিষ্টাচার এক ধরনের তোষামোদ বা তেলানো। আসলে তাদের ধারণা অযৌক্তিক। এ ধারণার বশবর্তী হয়ে, তারা নিজেদেরই ক্ষতি করে। কারণ মানুষ শিষ্টাচারকেই ভালোবাসে। শিষ্টাচার তোষামোদ নয়, দুর্বলতা নয়, শিষ্টাচার এক মহৎ গুণ। শিষ্টাচার দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। অনেক মহাপুরুষই তা বাস্তবে প্রমাণ করেছেন। শিষ্টাচারের মাধ্যমে যেমন অন্যকে সন্তুষ্ট রাখা যায়, তেমনি নিজের আত্মশুদ্ধিও ঘটে। 

আরও পড়ুন : চরিত্র – বাংলা প্রবন্ধ রচনা ( ২০ পয়েন্ট )

শিষ্টাচারের প্রয়োজনীয়তা : 

যারা আমাদের প্রতিবেশী, তাদের সাথে শিষ্টাচার প্রদর্শন না করলে সামাজিক সৌহার্দ নষ্ট হয়। একে অন্যের শত্রুতে পরিণত হয়। পক্ষান্তরে ভদ্র ব্যবহার, হাসিমাখা সম্বোধন সহজেই প্রতিবেশীর মন জয় করতে পারে। শিষ্টাচার মানুষের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে ও মানুষের ভালোবাসা অর্জনে সহায়তা করে। শিষ্টাচারের কারণে সমাজে ব্যক্তির গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। ফলে সমাজের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব হাতে আসে, মহৎ কোনো কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়। শিষ্টাচার কর্মসংস্থানে সাহায্য করে এবং ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সফলতা লাভ করা যায়।

শিষ্টাচার শেখার উপায় : 

পরিবার শিষ্টাচার অর্জনের সূতিকাগার। পিতামাতা, ভাইবোন এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে শিশুরা সর্বপ্রথম শিষ্টাচার অর্জনের পাঠ নিয়ে থাকে। শিশুরা সাধারণত অনুকরণপ্রিয়। এক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যরা যদি শিষ্টাচারী হয় শিশুরাও তা শিখতে পারে। শিশুরা সবকিছুই শিখতে চায়। তাদের কেবল দিকনির্দেশনার প্রয়োজন। শিষ্টাচার শেখার দ্বিতীয় ক্ষেত্র বিদ্যালয়। শিক্ষকের দায়িত্ব এ ব্যাপারে শিশুদের শিক্ষাদান করা। তৃতীয় ক্ষেত্র সমাজ। সামাজিকতা এবং সমাজ-পরিবেশ থেকেও শিশুরা শিষ্টাচার সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে পারে ।

শিষ্টাচারের লক্ষণ : 

একজন মানুষ শিষ্টাচারী কিনা তা তার হাঁটাচলাতেও বোঝা যায়। কথা বলা মাত্র তাকে ভালোবেসে ফেলা যায় ৷ শিষ্টাচারের অনুশীলন করতে হয় ঘরে-বাইরে সর্বত্র। একজন শিষ্টাচারী মানুষ বিনয়ী হন, আত্ম-অহংকার তাকে স্পর্শ করে না। নিজেকে ছোট করে দেখতেই সে তৎপর। কিন্তু সবাই তাকে বড় করে তুলে ধরে। শিষ্টাচারী মানুষের সবচেয়ে বড় লক্ষণ মিষ্টভাষিতা। কথার সাথে অম্লান হাসি এবং আন্তরিকতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। 

সে যা জানে না বা পারে না তা অকপটে স্বীকার করে, পরের মতামত ও যুক্তিকে নির্দ্বিধায় মেনে নেয়। নিজে যা পছন্দ করে না, অন্যের জন্য সে তা কল্পনাও করতে পারে না। অন্যের কথায় ও কাজে বিরক্ত হওয়া তার ধর্ম নয়, উত্তেজিতও সহজে হয় না। তার কোনো কাজে অন্যের ক্ষতি হয় না, কথায় অসত্য ঝরে পড়ে না। মার্জিত রুচি, শালীন মনোভাব, পরিচ্ছন্ন চিন্তা, সত্য প্রকাশে দ্বিধাহীন শিষ্টাচারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

শিষ্টাচারের সুফল : 

যার জীবনে শিষ্টাচার রয়েছে সে একজন আদর্শ চরিত্রবান ব্যক্তি, একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। শিষ্টাচারের অধিকারী ব্যক্তি জীবনে উন্নতি লাভ করতে পারে। তাই শিষ্টাচারের ফল সুদূরপ্রসারী।

শিষ্টাচার কোনো দুর্বলতা নয় : 

একজন মানুষের সদাচার এবং বিনয় কোনো দুর্বলতার প্রমাণ নয় । কারো কর্কশ কথার জবাব মৃদু ও মার্জিত ভাষায় এবং বিনীতভাবে দেওয়াতে ব্যক্তিত্বের দুর্বলতা প্রকাশ পায় না। অনুরূপভাবে সত্য সম্পর্কে দ্বিধাহীন ও অটল থাকাতেও ঔদ্ধত্য প্রকাশ পায় না। তবে আমাদের সমাজে ভদ্রতাকে দুর্বলতা হিসেবে গণ্য করার প্রবণতা বেশি। এটা এক ধরনের মূর্খতা ছাড়া কিছুই নয় । যারা এরূপ ধারণা পোষণ করে তারা অসুন্দরকে উৎসাহিত ও সুন্দরকে অনুৎসাহিত করে, যার নেতিবাচক প্রভাব সমাজকেই বহন করতে হয়। 

শিষ্টাচার ও সামাজিক জীবন : 

আমাদের জাতীয় জীবনে শিষ্টাচারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যার মধ্যে শিষ্টাচার নেই, সমাজে তার অবস্থান অনেক নিম্নস্তরে। সুন্দর, মার্জিত এবং উপযুক্ত শিষ্টাচার একজন মানুষকে সামাজিকভাবে অনেক উঁচু আসনে নিয়ে যায়। বদমেজাজি, ঔদ্ধত্য ও খারাপ লোকের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করা সম্ভব নয়। এসব মানুষ শিষ্টাচার বর্জিত; এদের চালচলন, আচার-ব্যবহার সবকিছুতেই বিশ্বত্যের ছাপ ফুটে ওঠে। তাই সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেও আমাদের জীবনে শিষ্টাচারিতার প্রয়োজন অনেক ।

শিষ্টাচার লাভে পরিবেশের প্রভাব :

শিষ্টাচার লাভ করার ব্যাপারে পারিপার্শ্বিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । একটি শিশু যে পরিবেশে জন্মায় এবং লালিত-পালিত হয় তা তার মনে বহুল পরিমাণে ছাপ ফেলে- দাগ কাটে। পরবর্তীকালে তার কাজে-কর্মে, আচার-আচরণে এ পরিবেশের শিক্ষা-দীক্ষা এবং রীতি-নীতি তার চরিত্রে ফুটে ওঠে। 

উপসংহার : 

শিষ্টাচার বা আদব-কায়দা মানবজীবনের অপরিহার্য গুণাবলির অন্যতম। শিষ্টাচার ছাড়া কেউ সমাজে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারে না। তাই শিষ্টাচার সম্পর্কে বাল্যকাল থেকেই যথাযথ শিক্ষা নেওয়া দরকার। পারিবারিক পরিমণ্ডল থেকে এর পাঠ শুরু হয়। তারপর বিদ্যালয় ও সমাজের সর্বত্রই চলতে-ফিরতে শিষ্টাচারী হওয়া প্রয়োজন । এক কথায়, শিষ্টাচার মানবচরিত্রের এক অমূল্য সম্পদ।

3 thoughts on “রচনা : শিষ্টাচার ( ২০ পয়েন্ট )। SSC, HSC”

  1. আমার পড়া শিষ্টাচার এর উপর লেখা অন্যতম সবচেয়ে ভালো এবং সুন্দর রচনা এটি। আমি কখনোই কোনো ওয়েবসাইট এ কমেন্ট করি না। এই প্রথম রচনাটা এতো ভালোলাগার কারনে কমেন্টটা করা।

    Reply
    • আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। এ ধরনের প্রশংসা আমাদের আরও ভালো লেখার উৎসাহ দেয়। এটাই আমাদের লেখার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। পাশে থাকুন সবসময়।

      Reply

Leave a Comment