মূলভাব : ভালো কাজের দায়িত্ব নেওয়া যত কঠিন, তার চেয়ে বেশি কঠিন সে কাজ সমাধা করা ।
সম্প্রসারিত ভাব : সামাজিকভাবে নিজের অবস্থানকে সুন্দর এবং সমাজের উঁচু স্তরে নিজের অবস্থানকে আসীন করা খুব কঠিন ব্যাপার। তার জন্য অনেক দুর্লভ গুণের অধিকারী হতে হয় মানুষকে। একজন রাজনৈতিক নেতা তাঁর দীর্ঘদিনের সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার পর ক্ষমতায় আসীন হয়; দায়িত্ব লাভ করেন দেশ পরিচালনার। একজন রাজ্যশাসক রাজ্যের পরিচালনার উচ্চতম পদটি লাভের জন্য দীর্ঘদিন প্রহর গুনে অবশেষে স্পর্শ পান সেই কাঙ্ক্ষিত মুকুটের। কিন্তু এই দায়িত্ব ও ক্ষমতা পাওয়ার জন্য তাকে যেমন ত্যাগ-তিতিক্ষা সইতে হয়, তেমনি ক্ষমতা ও দায়িত্ব লাভের পর ইচ্ছে করলেই বেগতিক দেখে ক্ষমতা বা দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারেন না। কারণ এ কাজ আরও কঠিন। একজন দেশপ্রেমিক দেশকে নৈরাজ্যের মধ্যে ফেলে দিয়ে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন না। একজন দায়িত্ববান লোক তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্বকে উপেক্ষা করে দায়িত্ব বা ক্ষমতা থেকে সরে যেতে পারেন না। মনের ভেতর জন্ম নেয় দায়িত্ববোধ। দেশের সার্বিক মঙ্গল ও জনকল্যাণে সে তখন আত্মনিয়োগ করে। এরই মাঝে সে নিজের জীবনের সার্থকতা খুঁজে পায়।
মন্তব্য : ক্ষমতার স্বাদ মানুষকে লোভী করে তোলে। একবার কেউ সে স্বাদ পেলে তা আর ছাড়তে চায় না। যে-কোনোভাবে তা আঁকড়ে ধরে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে।
আরও পড়ুন : দুর্নীতি জাতীয় জীবনে অভিশাপ স্বরূপ : ভাব সম্প্রসারণ
একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন
মূলভাব : মুকুট অর্জন করা খুবই কঠিন। তবে ক্ষমতালিপ্সু, লোভী, স্বার্থান্বেষী মানুষ মুকুট তথা ক্ষমতা পেলে হয়ে ওঠে উন্মাদ। তখন মুকুট ত্যাগ করা আরো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
সম্প্রসারিত ভাব : মুকুট পরার মর্যাদা ও গৌরব অতুলনীয়। তবে মুকুটকে সমুজ্জ্বল রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সাধনার। কেননা দেখা যায় যে, পৃথিবীর ইতিহাসে যারা ক্ষমতায় এসেছিলেন, তাদের বহু শক্তি, সাধনা ও সামর্থ্যের প্রয়োজন হয়েছে। অনেক কষ্টে তারা এ মুকুট পরেছেন অর্থাৎ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন। কেবলমাত্র কঠোর সাধনা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে জনসাধারণের বিশ্বস্ত হতে পারলেই জাতি ও সমাজের নেতৃত্ব প্রদানের মুকুট পরা যেতে পারে। কিন্তু এ মুকুট পরার পর তার দায়িত্ব অনেক গুণে বেড়ে যায়। তখন তাকে পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সবদিকে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হয়। অজস্র ঐশ্বর্যের কাছে থেকেও তাকে অনেক সময় বিলাসবিমুখ হয়ে জীবনযাপন করতে হয়। প্রজাদের সুখ-দুঃখ নিয়েই তার সবসময় চিন্তা করতে হয়। এদিক থেকে দেখলে মনে হয় যে, মুকুট পরা অনেক কঠিন কাজ। অপরপক্ষে যারা লোভী তারা যদি একবার ক্ষমতায় আসতে পারে তখন তারা ক্ষমতার নেশায় মত্ত হয়ে ওঠে। অন্যায়ভাবে হলেও সে ক্ষমতায় থাকতে চায়। তার কাছে তখন ক্ষমতাই বড় হয়ে দেখা দেয়। এ ক্ষমতা ও সুখ-ভোগের মায়া সে সহজে ত্যাগ করতে পারে না। তাই দেখা যায়, মুকুট পরার চেয়ে মুকুট ত্যাগ করা কঠিন।
মন্তব্য : ক্ষমতায় যাওয়া কঠিন কিন্তু তার চেয়েও কঠিন তা ত্যাগ করা। ক্ষমতা অর্জন করলে মানুষের কর্তব্য অনেক বেড়ে যায়। এছাড়া ভোগের লোভও তাকে ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধা দেয়।