প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক : ভাবসম্প্রসারণ(২টি)

প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক।

মূলভাব : প্রয়োজনীয়তা মানুষের নিত্যনতুন কর্মপ্রেরণা ও উদ্ভাবনী প্রয়াসের কেন্দ্রবিন্দু। মানুষের প্রয়োজন ও চাহিদা মেটাতে যুগ যুগ ধরে আবিষ্কৃত হয়েছে নিত্যনতুন প্রয়োজনীয় সামগ্রী।

সম্প্রসারিত ভাব : সমাজ ও সভ্যতা বিকাশের ধারায় মানুষের জীবনে নিত্যনতুন উপযোগ সৃষ্টি হয়। মানুষ নিত্যনতুন জিনিসের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। মানুষ অতৃপ্ত ও অভাবগ্রস্ত মানসিকতার অধিকারী। এজন্যই বলা হয়ে থাকে, “Man is a wanting being.” মানুষের একটি অভাব বা প্রয়োজন পূরণ হতে না হতেই আরেকটি প্রয়োজন এসে দেখা দেয়। আর এই প্রয়োজন মেটানোর জন্য মানুষ মরিয়া হয়ে নিরন্তর পরিশ্রমের মাধ্যমে উদ্ভাবন করে নতুন নতুন বস্তু। বিস্ময়কর উদ্ভাবন একদিনে উদ্ভাবিত হয়নি। সৃষ্টির উষালগ্ন থেকে পরিলক্ষিত হয়, মানুষ তার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই আবিষ্কার করছে নিত্যনতুন সামগ্রী। প্রাচীনকালে বৈরী পরিবেশে অস্তিত্ব রক্ষায় সংগ্রাম করতে গিয়ে প্রয়োজন হয়েছিল হাতিয়ারের। সে প্রয়োজনেই মানুষ আবিষ্কার করেছে পাথুরে হাতিয়ার। অন্ধকার থেকে আলোয় যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে মানুষ বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। শিক্ষার প্রয়োজনে উদ্ভাবিত হয়েছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ। রোগ নিরাময়ের প্রয়োজনে উদ্ভাবিত হয়েছে ওষুধ ও আধুনিক চিকিৎসার যন্ত্রপাতি। যাতায়াতের সুষ্ঠু ব্যবস্থার প্রয়োজনে উদ্ভাবিত হয়েছে লঞ্চ, স্টিমার, বাস, ট্রাক, রেলগাড়ি, বিমান ও রাস্তা। বিনোদনের প্রয়োজনীয়তায় তৈরি হয়েছে সিনেমা, চলচ্চিত্র। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য টেলিফোন, টেলিস্কোপ, টেলিগ্রাফ, ফ্যাক্স, টেলিভিশন, কাগজ ইত্যাদি আবিষ্কৃত হয়েছে। মানুষের জীবনে প্রয়োজনের পরিসীমা ও পরিসর যতই বেড়েছে ততই সম্প্রসারিত হয়েছে উদ্ভাবন ও আবিষ্কারের ক্ষেত্র। মানুষের সব কর্মকাণ্ডই পরিচালিত মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রয়োজনকে ঘিরে। তাছাড়া বর্তমানে বিশ্বব্যাপী তথ্য যোগাযোগের জন্য ও বিশ্ববাসীর প্রয়োজনে বিস্ময়কর আবিষ্কার কম্পিউটার ও ইন্টারনেট উদ্ভাবিত হয়।

মন্তব্য : প্রয়োজনের শেষ নেই, তেমনি মানুষের উদ্ভাবনেরও শেষ নেই। এই প্রয়োজনের পথ ধরেই মানুষের উদ্ভাবনী প্রচেষ্টার বিকাশ সাধিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন : ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় : ভাবসম্প্রসারণ |sikkhagar

একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন

মূলভাব : যে-কোনো নতুন কিছু আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের মূল চাবিকাঠি হলো প্রয়োজন । প্রয়োজন রয়েছে বলেই মানুষ শ্রম ও চেষ্টা দিয়ে তা আবিষ্কার করছে।

সম্প্রসারিত ভাব : সব সৃষ্টির পেছনেই একটি রহস্য বা কারণ রয়েছে । এ জগতে কোনোকিছু আকস্মিকতার সৃষ্টি নয়। একদিন আমাদের পূর্বপুরুষেরা বনে জঙ্গলে বাস করতো। পাথরে পাথরে ঘর্ষণে আগুন জ্বালাত। বৈজ্ঞানিকের চমকপ্রদ উদ্ভাবন তখন অজ্ঞাত ছিল। মানুষের দৈনন্দিন কাজের প্রয়োজনে সভ্যতার ক্রমবিকাশ ঘটেছে ।

মানুষ এক সময় এক এক জিনিসের অভাবের কথা বুঝতে পেরেছে। প্রয়োজনের কথা গুরুত্বের সাথে উপলব্ধি করেছে। অন্ধকার দূর করার প্রয়োজন, বিদ্যুৎ উদ্ভাবন করেছে। যাতায়াতের সুষ্ঠু ব্যবস্থা ছিল না, বাহন ছিল না। রাস্তাঘাট তৈরি করেছে স্টিম ইঞ্জিন, রেলগাড়ি, মোটরগাড়ি, এরোপ্লেন এবং আরও অনেক যন্ত্রযান উদ্ভাবন করেছে। দূরাঞ্চলের মানুষের কথা শোনা দরকার। পর্দায় ছবি দেখা দরকার । তাই উদ্ভাবন হলো চলচ্চিত্র, টেলিফোন, টেলিস্কোপ, টেলিগ্রাফ, টেলিভিশন, ভি.সি.আর ইত্যাদি। প্রয়োজনীয়তা না থাকলে এগুলো উদ্ভাবনের কথা চিন্তাও করা যেত না।

আলো জ্বালানোর দরকার। তাই দিয়াশলাই, লাইটার উদ্ভাবন করেছে। আবার রোগ, শোক জরা-ব্যাধিকে দূরে নিক্ষেপ করার জন্য এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাফির উদ্ভাবন করেছে। নানা দুরারোগ্য ব্যাধির ওষুধ আবিষ্কার করার প্রয়োজনের কথাও তার মনে হয়েছে। সে আবিষ্কার করেছে পেনিসিলিন, ক্লোরোমাইসিন ইত্যাদি। এভাবে চলেছে একের পর এক আবিষ্কার। দৈনন্দিন জীবনের সকল প্রয়োজন উদ্ভাবিত হয়েছে সবকিছু, প্রয়োজন না থাকলে মানুষ কিছুই আবিষ্কার করার প্রয়াস পেত না। তাই বলা হয়- Necessity is the father of invention.

মন্তব্য : মানুষের প্রয়োজনীয়তা অসীম। একটা প্রয়োজন মিটে গেলেই আরও একটা প্রয়োজন এসে দেখা দেয়। আর তাই মানুষ নিত্য নতুন উদ্ভাবনের নেশায় চালিয়ে যায় নিরলস প্রচেষ্টা ।

Post a Comment

0 Comments