অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে শব্দ বলে। বাংলা শব্দ গঠনে প্রত্যয়ের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত শব্দসমূহের একটি বিপুল অংশই প্রত্যয়জাত শব্দ। প্রত্যয় কখনো শব্দের শেষে আবার কখনো ধাতুর শেষে যুক্ত হয়ে নতুন নতুন শব্দ গঠন করে।
প্রত্যয়যোগে শব্দগঠনের নিয়ম :
নিচে প্রত্যয়যোগে শব্দ গঠনের পাঁচটি নিয়ম উপস্থাপিত হলো-
১। 'ইনী' প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দ : 'ইনী' প্রত্যয়যোগে সাধারণত স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়। এর ফলে শব্দের বানানে পরিবর্তন হয়ে থাকে। যেমন- বন্দি + ইনী = বন্দিনী, গৃহ + ইনী = গৃহিণী, প্রণয় + ইনী = প্রণয়িনী ইত্যাদি।
২। 'ইত' প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দ : 'ইত' প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দের বানান পরিবর্তিত হয় এবং মূল শব্দ সংকুচিত হয়। যেমন- কুসুম + ইত = কুসুমিত, কণ্টক + ইত = কণ্টকিত, তরঙ্গ + ইত = তরঙ্গিত ইত্যাদি।
৩। 'ইক' (ষ্ণিক) প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দ : ‘ইক' বিশেষ্যকে বিশেষণ করার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। এর ফলে প্রায়ই মূল শব্দের আদি স্বর বৃদ্ধি পায়। আদি অ-ধ্বনি হয়ে যায় আ, উ/ঊ/ ও হয় ঔ এবং ই / ঈ / এ হয় ঐ । যেমন- অর্থ + ইক = আর্থিক, অনুষ্ঠান + ইক আনুষ্ঠানিক, বিপ্লব + ইক = বৈপ্লবিক, জীবন + ইক = জৈবনিক, উপনিবেশ + ইক = ঔপনিবেশিক, বেদান্ত + ইক = বৈদান্তিক ইত্যাদি ।
৪। 'য' প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দ : 'য' প্রত্যয়যোগে অন্য পদকে বিশেষ্য পদে পরিণত করা হয় । এক্ষেত্রে সাধারণত মূল শব্দের আদি স্বর বৃদ্ধি পায়। যেমন- √কৃ + য = কার্য, √ভুজ + য = ভোজ্য, √ত্যজ + য = ত্যাজ্য ইত্যাদি ।
৫। 'তা' প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দ : 'তা' প্রত্যয় অন্য পদকে বিশেষ্য বা বিশেষণ পদে পরিণত করার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। এ রকম ক্ষেত্রে মূল শব্দের শেষে ঈ-কার থাকলে তা ই-কার হয়ে যায়। যেমন- সহযোগী + তা = সহযোগিতা, সভ্য + তা = সভ্যতা, উর্বর + তা = উর্বরতা ইত্যাদি।
উপসংহার : প্রত্যয় নানাবিধ উপায়ে শব্দ গঠনে সহায়তা করে। তাই বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি ও উন্নতিতে শব্দভাণ্ডারকে আরো বৃদ্ধি করতে প্রত্যয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ।