সংজ্ঞা : বিসর্গ সন্ধির সাথে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের মিলনে যে সন্ধি হয় তাকে বিসর্গ সন্ধি বলে । যেমন-
নিঃ + চয় = নিশ্চয়, নিঃ + ঠুর = নিষ্ঠুর, অধঃ + তন = অধস্তন ইত্যাদি।
বিসর্গ সন্ধি কত ভাবে হতে পারে ?:
বিসর্গ সন্ধি মূলত ব্যঞ্জনসন্ধিরই অন্তর্ভুক্ত। বিসর্গ সন্ধি দু’ভাবে সাধিত হয়। যেমন-
ক. বিসর্গ বর্ণ + স্বরবর্ণ।
খ. বিসর্গ বর্ণ + ব্যঞ্জনবর্ণ।
বিসর্গ বর্ণ + স্বরবর্ণ-এর সন্ধি :
বিসর্গের সাথে স্বরবর্ণের মিলনে এ সন্ধি গঠিত হয়। যেমন :
ততঃ + অধিক = ততোধিক, মনঃ + অভিলাষ = মনোভিলাষ, বয়ঃ + অধিক = বয়োধিক, মনঃ + অভিনিবেশ = মনোনিবেশ, অতঃ + এব = অতএব, শিরঃ + উপরি = শিরোপরি ইত্যাদি।
বিসর্গ বর্ণ + ব্যঞ্জনবর্ণ-এর সন্ধি :
বিসর্গের সাথে ব্যঞ্জনবর্ণের মিলনে যে সন্ধি গঠিত হয়। যেমন :
অন্তঃ + ভূক্ত = অন্তর্ভূক্ত, চতুঃ + দশ = চতুৰ্দশ, আবিঃ + ভাব = আবির্ভাব, নিঃ + রস = নীরস, পুরঃ + কার = পুরস্কার, দুঃ + প্রাপ্য = দুষ্প্রাপ্য ইত্যাদি।
আরও জানুন : নিপাতনে সিদ্ধ সরসন্ধি ও ব্যঞ্জনসন্ধি:সহজে মনে রাখার উপায় ও উদাহরণ
বিসর্গ সন্ধির প্রকারভেদ :
বিসর্গ সন্ধিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় । যথা-
ক. র-জাত বিসর্গ,
খ. স-জাত বিসর্গ এবং
গ. ও - জাত বিসর্গ ।
র-জাত বিসর্গ সন্ধি :
১. স্বরবর্ণ বা ঘোষবর্ণ পরে থাকলে যে কোন স্বর পরবর্তী র-জাত বিসর্গ স্থানে ‘র’ হয়। এই 'র' পরবর্তী স্বরে যুক্ত হয়, অথবা রেফ রূপে পরবর্তী ব্যঞ্জনের শীর্ষে বসে। যেমন-
অন্তঃ + ভুক্ত = অন্তর্ভুক্ত, চতুঃ + ভুজ = চতুৰ্ভুজ ইত্যাদি।
২. স্বরবর্ণ বা ঘোষবর্ণ পরে থাকলে ‘অ’ কিংবা ‘আ’ ছাড়া অন্য স্বরের পরস্থিত বিসর্গ র-জাত না হলেও বিসর্গ 'র' এ পরিণত হয় । এ 'র' পরবর্তী স্বরে যুক্ত হয় অথবা (রেফ) রূপে পরবর্তী ব্যঞ্জনের উপরে বসে। যেমন-
আশীঃ + বাদ = আশীর্বাদ, আবিঃ + ভাব = আবির্ভাব ইত্যাদি।
৩. 'র' বর্ণ পরে থাকলে বিসর্গ স্থানীয় 'র' লোপ পায় এবং পূর্ববর্তী হ্রস্বস্বর দীর্ঘ হয়। যেমন-
নিঃ + রব = নীরব, নিঃ + রস = নীরস, নিঃ + রোগ = নীরোগ ইত্যাদি।
স/ষ/শ-জাত বিসর্গ সন্ধি :
স-জাত বিসর্গ সন্ধি :
। ‘ত’-এর পূর্বে বিসর্গ থাকলে বিসর্গ স্থলে 'স’ হয়! যেমন-
নিঃ + তার = নিস্তার, দুঃ + তর = দুস্তর, ইতঃ + তত = ইতস্তত, নিঃ + তেজ = নিস্তেজ, অধঃ + তন = অধস্তন, প্রঃ + থান = প্রস্থান ইত্যাদি।
৫. ক, খ, প, ফ পরে থাকলে অ-কার বা আ-কারের পরস্থিত বিসর্গ স্থানে 'স' হয়। যেমন-
মনঃ + কামনা = মনস্কামনা, ভাঃ + কর = ভাস্কর, পুরঃ + কার = পুরস্কার ইত্যাদি।
৬. অ-কার ভিন্ন স্বরবর্ণ থাকলে অ-কারের পরস্থিত বিসর্গের লোপ পায়। যেমন-
অতঃ + এর = অতএব, বক্ষঃ + উপরি = বক্ষোপরি।
আরও জানুন : ব্যঞ্জন সন্ধি: সংজ্ঞা, কত ভাবে হতে পারে ও নিয়মাবলি উদাহরণ সহ
ষ-জাত বিসর্গ সন্ধি :
৭. ক, খ, প, ফ পরে থাকলে অ-কার বা আ-কার ভিন্ন অন্য স্বরের পরস্থিত বিসর্গ স্থানে ‘ষ’ হয়। যেমন—
নিঃ + ফল = নিষ্ফল, পরিঃ + কার = পরিষ্কার, বহিঃ + কৃত = বহিষ্কৃত।
৮. 'ট' বা 'ঠ' পরে থাকলে বিসর্গ স্থানে 'ষ' হয় । যেমন-
নিঃ + ঠুর = নিষ্ঠুর, ধনুঃ + টংকার = ধনুষ্টংকার।
শ-জাত বিসর্গ সন্ধি :
৯. 'চ' বা ছ’ পরে থাকলে বিসর্গ স্থানে ‘শ’ হয় । যেমন-
দুঃ + চিন্ত' = দুশ্চিন্তা, দুঃ + চরিত্র = দুশ্চরিত্র, দুঃ + ছেদ্য = দুশ্ছেদ্য, নিঃ + চয় = নিশ্চয়, নিঃ + ছিদ্র = নিশ্ছিদ্র, নভঃ + চর = নভশ্চর ইত্যাদি।
১০. শ, ষ, স পরে থাকলে বিকল্পে বিসর্গর লোপ হয় । যেমন-
দুঃ + স্থ = দুঃস্থ >দুস্থ, নিঃ + শ্বাস = নিঃশ্বাস> নিশ্বাস, নিঃ + স্ব = নিঃস্ব > নিস্ব।
ও-জাত বিসর্গ সন্ধি :
১১. অ-কারের পরস্থিত স-জাত বিসর্গের পর অর্থাৎ ‘অ' ধ্বনির পর স্বরবর্ণ ‘অ’ কিংবা যে কোন ঘোষ বর্ণ থাকলে ‘অ’ স্থানে ‘ও’ হয়। যেমন-
সরঃ + বর = সরোবর, তপঃ + বন = তপোবন, অধঃ + গতি = অধোগতি।
১২. কোন কোন ক্ষেত্রে সন্ধি গঠনের সময় বিসর্গ লোপ হয় না । যেমন-
মনঃ + কষ্ট = মনঃকষ্ট, প্ৰাত + কাল = প্রাতঃকাল, মনঃ + প্ৰাণ = মনঃপ্রাণ, শিরঃ + পীড়া = শিরঃপীড়া, মনঃ + ক্ষোভ = মনঃক্ষোভ, স্বতঃ + সিদ্ধ = স্বতঃসিদ্ধ।
১৩. কতকগুলো বিসর্গ সন্ধি আছে যেগুলো গঠনে কোন নিয়ম মানা হয় না। এগুলোকে নিপাতনে সিদ্ধ বিসর্গ সন্ধি বলে । যেমন-
মনঃ + ঈষা = মনীষা, মনঃ + রথ = মনোরথ, অহঃ + রাত্র = অহোরাত্র, মনঃ + রম = মনোরম, ভাঃ + কর = ভাস্কর, সমঃ + কার = সংস্কার ইত্যাদি।