সন্ধি শব্দের অর্থ মিলন। আমরা যখন দুটি শব্দ পাশাপাশি উচ্চারণ করি, তখন শব্দ দুটির কাছের বর্ণ দুটি অনেক সময় আলাদাভাবে উচ্চারিত হয় না। দুয়ে মিলে মিশে যায়। এভাবে পাশাপাশি দুটি বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে। যেমন-হিম + আলয় = হিমালয়, বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়, মহা + আশয় = মহাশয় ইত্যাদি।
সংজ্ঞা : উচ্চারণের সুবিধার জন্য পরস্পর অম্বয়যুক্ত পাশাপাশি দুই বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে। যেমন- সিংহ + আসন = সিংহাসন, বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়, পরি + ঈক্ষা = পরীক্ষা, নব +অন্ন = নবান্ন ইত্যাদি।
সন্ধির প্রকারভেদ
সন্ধি প্রধানত মোট তিন প্রকার। যথা-
১. স্বরসন্ধি
২. ব্যঞ্জনসন্ধি ও
৩. বিসর্গ সন্ধি ।
স্বরসন্ধি : স্বরবর্ণের সাথে স্বরবর্ণের মিলনে যে সন্ধি হয়, তাকে স্বরসন্ধি বলে। যেমন-বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়, রবি + ইন্দ্র = রবীন্দ্র, যথা + ইষ্ট = যথেষ্ট, মহা + ঋষি = মহর্ষি ইত্যাদি।
আরও পড়ুন : স্বরসন্ধি কাকে বলে?স্বরসন্ধি গঠনের দশটি নিয়ম।উদাহরণ সহ ব্যাখ্যা
২. ব্যঞ্জনসন্ধি : ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে ব্যঞ্জনবর্ণের বা স্বরবর্ণের মিলনে যে সন্ধি হয়, তাকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলে । যেমন- দিক + অন্ত = দিগন্ত; বি+ ছেদ = বিচ্ছেদ; সৎ + জন = সজ্জন; তৎ + ময় = তন্ময় ।
৩. বিসর্গ সন্ধি : বিসর্গের সাথে স্বরবর্ণ বা ব্যঞ্জনবর্ণের মিলনে যে সন্ধি হয়, তাকে বিসর্গ সন্ধি বলে। যেমন- পুনঃ + আয় = পুনরায়; তিরঃ + ধান = তিরোধান, তপঃ + বন = তপোবন ইত্যাদি।
সন্ধির উদ্দেশ্য :
যে কোন কাজ করতে আমরা এমন পথ বেছে নিতে চাই, যে পথে কাজটি কম সময়ে ও কম পরিশ্রমে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সমাধা করা যায়, ভাষার ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। ভাষা হল অসংখ্য অর্থবোধক শব্দের সুশৃঙ্খল ব্যবহার মাত্র। এ সমস্ত শব্দ যত সুন্দর, অর্থবহ ও সুশৃঙ্খল হয় ভাষা ততই উন্নত হয় ।
আমরা যাতে স্বাভাবিক উচ্চারণে অনায়াসে বা কম পরিশ্রমে শব্দ উচ্চারণ করতে পারি সন্ধি তারই ব্যবস্থা করে দেয়। এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত শব্দে মাধুর্যতা আসে। ফলে ভাষা সুন্দর এবং আকর্ষণীয় হয়। সুন্দর, আকর্ষণীয় এবং কৃত্রিমতা বর্জিত জিনিসের স্থায়িত্ব যেমন সর্বাধিক তেমনি যে ভাষার শব্দ সম্ভার মাধুর্যমণ্ডিত ও অনায়াসে উচ্চারণযোগ্য এবং কৃত্রিমতা বর্জিত সে ভাষাও অধিক আকর্ষণীয় ও গ্রহণীয় । সন্ধি ভাষার উপরোক্ত গুণ অর্জনে সহায়তা করে ।
সন্ধির প্রয়োজনীয়তা :
বাংলা ভাষায় সন্ধির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য । নিম্নে সন্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হলো-
১. সন্ধি দুটি বর্ণের মিলন ঘটিয়ে ভাষার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
২. সন্ধি শব্দের উচ্চারণগত সুবিধা করে দেয় ।
৩. সন্ধি শব্দের অর্থ সাবলীল করে প্রকাশ করে ।
৪. সন্ধির ফলে ভাষা গতিশীল হয় ।
৫. সন্ধির ফলে শব্দের ধ্বনিগত মাধুর্য সৃষ্টি হয় ।
৬. সন্ধি শব্দকে সংক্ষিপ্ত, সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও শ্রুতিমধুর করে তোলে ।
৭. সন্ধির ফলে ভাষায় নতুন নতুন শব্দের সৃষ্টি হয়।
৮. সন্ধি ভাষাকে সংক্ষেপ করে।
৯. সন্ধির মাধ্যমে শব্দ সংক্ষেপ হয় বলে এর ব্যবহারে সময় কম লাগে।
১০. সন্ধি ভাষায় অলঙ্কার সৃষ্টি করে।