সংজ্ঞা : স্বরবর্ণের সাথে স্বরবর্ণের মিলনে যে সন্ধি হয় তাকে সরসন্ধি বলে। যেমন : হিম + আলয় = হিমালয়, পরি + ঈক্ষা = পরীক্ষা, জন + এক = জনৈক ইত্যাদি।
স্বরসন্ধি গঠনের দশটি নিয়ম :
নিয়ম-১ : অ-কার কিংবা আ-কারের পর অ-কার কিংবা আ-কার থাকলে উভয়ে মিলে আ-কার হয়, আ-কার পূর্ববর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + অ = আ | নর + অধম = নরাধম হিম + অচল = হিমাচল |
অ + আ = আ | জল + আশয় = জলাশয় হিম + আলয় = হিমালয় |
আ + অ = আ | আশা+ অতীত = আশাতীত মহা + অ = মহার্ঘ |
আ + আ = আ | বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয় কারা + আগার = কারাগার |
নিয়ম-২ : ই-কার কিংবা ঈ-কারের পর ই-কার কিংবা ঈ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঈ-কার হয়। ঈ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয় । যেমন-
ই + ই = ঈ | রবি + ইন্দ্র = রবীন্দ্র অতি + ইত = অতীত |
ই + ঈ = ঈ | পরি + ঈক্ষা = পরীক্ষা প্রতি + ঈক্ষা = প্রতীক্ষা |
ঈ + ই = ঈ | যোগী + ইন্দ্ৰ = যোগীন্দ্ৰ শচী + ইন্দ্ৰ = শচীন্দ্র |
ঈ + ঈ = ঈ | সতী + ঈশ = সতীশ পৃথ্বী + ঈশ = পৃথ্বীশ |
নিয়ম ৩ : উ-কার কিংবা ঊ-কারের পর উ-কার কিংবা ঊ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঊ-কার হয় । উ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয় । যেমন-
উ + উ = ঊ | মরু + উদ্যান = মরূদ্যান অনু + উদিত = অনুদিত |
উ + ঊ = ঊ | লঘু + ঊর্মি = লঘূর্মি তনু + ঊর্ধ্ব = তনূর্ধ্ব |
ঊ + উ = উ | বধু + উক্তি = বধুক্তি বধু + উৎসব = বধুৎসব |
ঊ + উ = ঊ | ভূ + ঊর্ধ্ব = ভূর্ধ্ব সরযূ + ঊর্মি = সরযূমি |
আরও জানুন: সন্ধি কাকে বলে?কত প্রকার।সন্ধির উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা-উদাহরণ সহ
নিয়ম ৪ : অ- কার কিংবা আ-কারের পর ই-কার কিংবা ঈ-কার থাকলে উভয়ে মিলে এ-কার হয়। এ -কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয় । যেমন-
অ + ই = এ | নগ + ইন্দ্ৰ = নগেন্দ্ৰ শুভ + ইচ্ছা = শুভেচ্ছা |
অ + ঈ = এ | রাম + ঈশ্বর = রামেশ্বর অপ + ঈক্ষা = অপেক্ষা |
আ + ই = এ | মহা + ইন্দ্ৰ = মহেন্দ্ৰ যথা + ইচ্ছা = যথেচ্ছা |
আ + ঈ = এ | উমা + ঈশ = উমেশ মহা + ঈশ = মহেশ |
নিয়ম ৫: অ-কার কিংবা আ-কারের পর উ-কার কিংবা ঊ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ও-কার হয় । ও-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন-
অ + উ = ও | উত্তর + উত্তর = উত্তরোত্তর সর্ব + উচ্চা = সর্বোচ্চ |
অ + ঊ = ও | নব + উঢ়া = নবোঢ়া চল + ঊর্মি = চলোর্মি |
আ + উ = ও | মহা + উদয় = মহোদয় যথা + উপযুক্ত = যথোপযুক্ত |
আ + ঊ = ও | গঙ্গা + ঊর্মি = গঙ্গোর্মি মহা + ঊর্মি = মহোমি |
নিয়ম ৬ : অ-কার কিংবা আ-কারের পর এ-কার কিংবা ঐ-কার থাকলে উভয় মিলে ঐ-কার হয়। ঐ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয় । যেমন-
অ + এ = ঐ | হিত + এষী = হিতৈষী জন + এক = জনৈক |
অ + এ = ঐ |
মত + ঐক্য = মতৈক্য অন + ঐক্য = অনৈক্য |
আ + এ = ঐ | সদা + এব = সদৈব তথা + এব = তথৈব |
আ + ঐ = ঐ | মহা + ঐশ্বৰ্য = মহৈশ্বৰ্য রাজা + ঐশ্বর্য = রাজৈশ্বর্য |
নিয়ম ৭ : অ-কার কিংবা আ-কারের পর ঋ-কার থাকলে উভয় মিলে ‘অর’হয়। অর’ (রেফ) হয়ে পরবর্তী বর্ণের উপরে বসে। যেমন-
অ + ঋ = অর | দেব + ঋষি = দেবর্ষি সপ্ত + ঋষি = সপ্তর্ষি |
আ + ঋ = অর | মহা + ঋষি = মহর্ষি রাজা + ঋষি = রাজর্ষি |
নিয়ম ৮ : স্বরবর্ণ পরে থাকলে এ-স্থানে ‘অয়' হয় এবং ‘অয়' অ-কার রূপে পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন-
এ + অ = অয় | নে + অন = নয়ন শে + অন = শয়ন |
নিয়ম ৯ : স্বরবর্ণ পরে থাকলে ঐ-স্থানে ‘অয়' হয় এবং ‘আয়' আ-কার রূপে পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন-
ঐ + আ = আয় | নৈ + অক = নায়ক গৈ + অক = গায়ক |
নিয়ম ১০ : স্বরবর্ণ পরে থাকলে ‘ও’ স্থানে ‘অব’ হয় এবং ‘অব’ অ-কার রূপে পূর্ববর্ণে যুক্ত হয় । যেমন-
ও + অ = অব | ভো + অন = ভবন লো + অণ = লবণ |