গোসল হলো পবিত্রতা অর্জনের সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম। ইসলামি শরিয়ত গোসলের পদ্ধতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
গোসল শব্দের অর্থ কি ও গোসল কাকে বলে ?
আভিধানিক অর্থ : গোসল আরবি শব্দ। এর অর্থ পানি দ্বারা ধৌত করা।
পারিভাষিক সংজ্ঞা: শরিয়তের পরিভাষায়- পবিত্রতা অর্জন ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে পবিত্র পানি দ্বারা সমস্ত শরীর ধৌত করাকে গোসল বলে।
গোসলের ফরজ :
গোসলের ফরজ তিনটি। যথা:
- গড়গড়ার সাথে কুলি করা।
- নাকে পানি দেওয়া।
- সমস্ত শরীর ধৌত করা।
(এমনভাবে ধৌত করা যেন মাথা হতে পা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি পশমের গোড়ায় পানি প্রবেশ করে এবং মেয়েদের চুলের গোড়া ভিজে যায়।)
ফরজ গোসলের দোয়া :
نَوَيْتُ الغُسَلَ لِرَفْعِ الْجَنَابَةِ
বাংলা উচ্চারণ : নাওয়াইতুল গোসলা লিরাফ’ইল জানা-বাহ ।
অনুবাদ : হে আল্লাহ আমি গোসল করছি নাপাকি হতে পবিত্রতা লাভের জন্য ।
গোসলের সুন্নাত:
গোসলের সুন্নাত ৭টি। যথা:
- গোসলের নিয়ত করা।
- বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম বলে গোসল শুরু করা।
- উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা।
- মিসওয়াক করা।
- শরীর থেকে অপবিত্রতা দূর করা।
- অজু করা।
- সারা শরীর তিনবার ধৌত করা।
সুন্নত গোসলসমূহ :
সুন্নত গোসল চার প্রকার-
- জুমু’আর নামাযের জন্য গোসল করা ।
- ঈদের নামাযের জন্য গোসল করা।
- হজ্জ বা ওমরার এহরাম বাঁধার আগে গোসল করা। এবং
- আরাফাত ময়দানে হজ্জ পালনের জন্য গোসল করা সুন্নত।
আরও পড়ুন : গোসল ফরজ হওয়ার কারণ সমূহ এবং যেসব কারণে গোসল ফরয হয় না
ওয়াজিব গোসলসমূহ :
মাসআলা— ১: যদি কেউ নতুন মুসলমান হয় এবং অমুসলমান অবস্থায় গোসল ফরয হয়েছিল, কিন্তু গোসল করেনি, অথবা শরীয়তমত গোসল না করে থাকে, তবে তার উপর গোসল ওয়াজিব হবে।
মাসআলা— ২ : যদি কেউ পনের বছর বয়সের পূর্বে বালেগ হয় অর্থাৎ স্বপ্নদোষ হয়, তখন তার প্রথম স্বপ্নদোষের জন্য গোসল ওয়াজিব। কিন্তু তারপর যে স্বপ্নদোষ হয় তাতে গোসল ফরয হয়।
মাসআলা- ৩ : মৃত মুসলমানকে গোসল দেয়া জীবিত মুসলমানদের উপর ফরযে কেফায়া ।
মুস্তাহাব গোসলসমূহ :
নিম্নোক্ত অবস্থায় গোসল করা মুস্তাহাব-
- ইসলাম গ্রহণের জন্য গোসল করা। যদি সে তখন পাক অবস্থায় থাকে, নতুবা গোসল করা ওয়াজিব।
- ছেলে-মেয়ের বয়স পনর বছর হবার পরও যদি বালেগ হবার কোন নিদর্শন দেখা না যায়, তবুও পনর বছর হলে বালেগ ধরতে হবে এবং তখন তাদের গোসল করা মুস্তাহাব ।
- মুর্দাকে গোসল দেয়ার পর গোসলদাতার নিজের গোসল করা মুস্তাহাব ।
- শবে বরাত ও শবে কদরে গোসল করা মুস্তাহাব ।
- মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফে প্রবেশের জন্য গোসল করা মুস্তাহাব । তদ্রূপ
- মুজদালিফায় ওকুফ করার সময় গোসল করা মুস্তাহাব ।
- হজ্জের তাওয়াফ করার জন্য ।
- হজ্জের সময় মিনায় রমী করার জন্য ।
- সূর্য গ্রহণ, চন্দ্র গ্রহণ, এবং বৃষ্টির জন্য নামায পড়ার সময় গোসল করা মুস্তাহাব। এভাবে-
- বিপদকালীন সময় এবং তওবার নামায পড়ার জন্য গোসল করা মুস্তাহাব ।
- যদি কারো মৃত্যুদণ্ডের হুকুম হয় তবে তার জন্য গোসল করে দু’রাকাত নামায পড়া মুস্তাহাব। অনুরূপ—
- সফর হতে বাড়ি এলে এবং কোন মাহফিলে যেতে কিংবা নতুন কাপড় পরিধান করতে হলে গোসল করে নামায পড়া মুস্তাহাব।