পরিবেশগত ভারসাম্যের জন্য চাই- বৃক্ষরোপণ প্রতিবেদন

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার বর্ণনা করে একটি সংবাদ প্রতিবেদন রচনা কর।
অথবা, “পরিবেশগত ভারসাম্যের জন্য চাই বৃক্ষরোপণ’- এ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন তৈরি কর।

পরিবেশগত ভারসাম্যের জন্য চাই বৃক্ষরোপণ

বাবুল ইসলাম- গাজীপুর থেকে, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২…..। মহান আল্লাহ মানুষকে শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে প্রেরণ করেছেন। সাথে দিয়েছেন অফুরন্ত নেয়ামত। বৃক্ষ তেমনি একটি নেয়ামত। এজন্য বলতে হবে বৃক্ষ মানবজাতির জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বৃক্ষের প্রয়োজন হয়। ড. মোহন দাশের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, একটি গাছের আয়ুষ্কাল হচ্ছে একশ’ থেকে দু’শ বছর। এ দীর্ঘ সময় একটি বৃক্ষ মানবজাতির জন্য যে কল্যাণসাধন করে, আর্থিকভাবে মূল্যায়ন করলে তার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৬ লাখ টাকার মতো।

প্রতিটি গাছ যে পরিমাণ অক্সিজেন উৎপাদন করে তার মূল্য ধরা হয়েছে ২,৫০,০০০ টাকা, প্রোটিন রূপান্তর সাধন ২০,০০০ টাকা, ভূমিক্ষয় রোধ ও মাটির উর্বরতা বজায় রাখা ৫০,০০০ টাকা, বায়ুর তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ ২,৫০,০০০ টাকা, পাখি ও অন্যান্য জীবের আশ্রয়স্থল ২,৫০,০০০ টাকা, বায়ু-তাপের দূষণ নিয়ন্ত্রণ ৫,৩০,০০০ টাকা৷ তাছাড়া বৃক্ষ জ্বালানি সরবরাহ করছে সৃষ্টির প্রথম থেকেই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, পরিবেশ সংরক্ষণে বৃক্ষের সে যতু আজ আর নেই। দেদারছে বৃক্ষ কর্তন চলছে দেশব্যাপী। এর ফলে গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়াও তীব্রতর হচ্ছে।

আগামী শতকে বাংলাদেশ পরিবেশগত দিক দিয়ে এক মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। যে কোনো কৃষিনির্ভর দেশে শতকরা ২৫ ভাগ বনাঞ্চল থাকা দরকার। অথচ এ দেশে আছে মাত্র ১৭ ভাগ। তারপরও অবাধে বনবৃক্ষ কাটা হচ্ছে। এতে করে দেশে ঘন ঘন বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প দেখা দিচ্ছে। আমাদের দেশ শুষ্ক মওসুমে পরিণত হয় মরুভূমিতে। প্রাপ্ত এক তথ্য থেকে জানা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে ২ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর অনাবাদি পতিত ভূমি রয়েছে।

অন্যদিকে শিল্প-কারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, মোটরগাড়ি ইত্যাদি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া বায়ুর সাথে মিশে আমাদের পরিবেশ নষ্ট করছে। শিল্প-কারখানার বর্জ্য পদার্থ, শহরের ময়লা-আবর্জনা, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ইত্যাদি পানির সাথে মিশ্রিত হয়ে পানিকে দূষিত করছে। খোলা পায়খানা ব্যবহার এবং যেখানে-সেখানে মলমূত্র ত্যাগের ফলে এগুলো বায়ু ও পানির সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে পরিবেশ দূষণ করছে।

মাছ, মরা জীব-জন্তু ইত্যাদি পানিতে পচে পানি ও বায়ুকে দূষিত করছে। শহরের শিল্প-কারখানা অথবা গৃহস্থালির আবর্জনা যেখানে-সেখানে ফেলার ফলে পচা দুর্গন্ধ পরিবেশ দূষণ করছে। ভারসাম্য নষ্ট করছে পরিবেশের।

অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ঘন জনবসতিপূর্ণ অঞ্চল বিশেষ করে বস্তি অঞ্চলের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। কলকারখানা ও যানবাহনের উচ্চ শব্দও আমাদের পরিবেশকে দূষিত করছে। তাছাড়া পলিথিনের ব্যাগ যেখানে-সেখানে ফেলার ফলে আমাদের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

কিভাবে পরিবেশ দূষণ প্রতিকার করা যায় তা নিচে উল্লেখ করা হলো :

১. আমাদের সবাইকে পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে।

২. শিল্প-কারখানার বর্জ্য পদার্থ যথাস্থানে অপসারণ করতে হবে।

৩. কলকারখানার দূষণ সংক্রান্ত আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

৪. উন্নত ও ত্রুটিমুক্ত যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে।

৫. সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে আবাসভূমি নির্মাণ করতে হবে।

৬. ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে অথবা মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে।

৭. পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

৮. অধিক পরিমাণ বৃক্ষ রোপণ করতে হবে।

৯. বনায়ন করতে অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

১০. বৃক্ষ নিধন শাস্তিযোগ্য অপরাধ—এ প্রেক্ষিতে বিচার করতে হবে।

উপরিউক্ত বিষয়াদি সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

আমার মূল লক্ষ্য একটাই (Sikkhagar-শিক্ষাগার) ওয়েবসাইটের হাত ধরে “শিক্ষা হবে উন্মুক্ত ও বাণিজ্যমুক্ত”। এই প্লাটফর্মে থাকবে একাডেমিক প্রস্তুতি, ভর্তি প্রস্তুতি, চাকরি প্রস্তুতি, স্পেশাল স্কিল এবং ধর্মীয় শিক্ষাসহ নানাবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।

Leave a Comment