মৌমাছি মানুষের ‘উপকারী বন্ধু’ হিসেবে পরিগণিত। ইহা হতে প্রধানত মধু ও : মোম সংগ্রহ করা হয় । নিম্নে মৌমাছির অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো –
মৌমাছির অর্থনৈতিক গুরুত্ব :
১. মধুর ব্যবহার : (ক) মধু প্রাচীনকাল থেকেই পুষ্টিকর রক্তবর্ধক ও বলদায়ক খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় ।
২. (খ) ওষুধ হিসেবে মধু ব্যবহৃত হয়। (গ) মধু মিষ্টান্ন হিসেবে খাওয়া হয় ।
৩. মোমের ব্যবহার : (ক) মোম হতে মোমবাতি তৈরি হয়। (খ) শিল্পক্ষেত্রে এবং আসবাপত্র তৈরিতে মোম ব্যবহৃত হয়। (গ) কারুশিল্পে এবং গবেষণাগারে মোম ব্যবহার করা হয় ।
৪. মৌমাছি পালনের সাথে জড়িত থেকে এবং মধু ও মোমের ব্যবসা করে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করে।
৫. মোম ও মধু বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়।
৬. কৃত্রিম উপায়ে মৌমাছি প্রতিপালন করে ঘরে বসেই অল্প পরিশ্রমে এবং অল্প পুঁজিতে অর্থউপার্জন করে গৃহিণীরা সংসারের স্বচ্ছলতা আনতে পারে।
আরো পড়ুন : রেশম চাষ কি ? বাংলাদেশের রেশম চাষের বিবরণ ও সংগ্রহ পদ্ধতি
কৃত্রিমভাবে মৌমাছির চাষ ও মধু সংগ্রহ প্রক্রিয়া :
কৃত্রিমভাবে মৌমাছির চাষ ও মধু সংগ্রহ প্রক্রিয়া বর্ণনা : প্রাচীন পদ্ধতিতে বনজঙ্গলের মৌচাক খুঁজে তা থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়। এ পদ্ধতিতে মৌচাকে ধোঁয়া দিয়ে মৌমাছি তাড়িয়ে মোম এবং মধু সংগ্রহ করা যায়। এভাবেই বাংলাদেশের সুন্দরবন থেকে মৌওয়ালারা মোম ও মধু সংগ্রহ করে। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মৌচাকের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। এজন্য কৃত্রিমভাবে মৌমাছি পালন করা হয়। এ পদ্ধতিতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে এবং সহজে মোম ও মধু পাওয়া যায় ।
কৃত্রিমভাবে মৌমাছি পালন বা চাষ : বাংলাদেশে মৌমাছি চাষের জন্য এক সরল ধরনের চাক বাক্স উদ্ভাবন করা হয়েছে। চতুর্ভুজাকৃতি এই চাক বাক্সের উপরের দিকে খোলা। এর ভেতরে লম্বা কাঠি ঝুলানো থাকে। বাক্সের ভেতরে যাতে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি না ঢুকতে পারে সেজন্য বাক্সের উপরে ঢাকনা দেবার ব্যবস্থা থাকে। মৌবাক্সটা বাড়ির আশে পাশে, সরিষা ক্ষেত বা অন্য কোনখানে মাটি থেকে কিছুটা উপরে রাখতে হয়। মৌবাক্স রাখার সময়ই কিছুটা মধু ছড়িয়ে দেয়া হয় । এই মধুর গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে নির্দিষ্ট ছিদ্রপথে মৌমাছিরা মৌবাক্সে ঢোকে এবং জন্মগত স্বভাববশত তার ভেতরে মৌচাক বাঁধে এবং মধু সংগ্রহ করতে থাকে। এভাবে কৃত্রিম পদ্ধতিতে মৌমাছির চাষ করা হয় । কোন প্রাকৃতিকভাবে গঠিত মৌচাকের কাছাকাছি মৌবাক্স রাখলে নতুন জন্মলাভ করা মৌমাছিরা সহজেই তার মধ্যে বাসা বাঁধে ।
মধু সংগ্রহ প্রক্রিয়া : প্রাচীন পদ্ধতিতে মধু ভর্তি মৌচাকে ধোঁয়া দিয়ে মধু এবং মোম সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানে বিশেষভাবে তৈরি যন্ত্রের সাহায্যে আধুনিক মধু নিষ্কাশন করা যায়। এই পদ্ধতিতে কৃত্রিম চাক নষ্ট হয় না বলে তা একাধিকবার ব্যবহার করা যায়।