হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

দুর্নীতির বৈশিষ্ট্য, সংজ্ঞা ও প্রতিকারের উপায় সমূহ

দুর্নীতি একটি দেশের উন্নয়নে প্রধান অন্তরায়। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষবাষ্পের মতো ছড়িয়ে পড়া সর্বগ্রাসী দুর্নীতির ভয়াল কালো থাবায় বিপন্ন আজ মানব সভ্যতা। এ সর্বনাশা ব্যাধির মরণ ছোবলে আক্রান্ত আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষানীতি, সংস্কৃতি, শিল্প, ব্যবসায়-বাণিজ্যসহ সর্বত্রই চলছে দুর্নীতি। দেশের শিরায় শিরায় যে দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে তা প্রতিরোধে দেশপ্রেমিক জনতাকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

দুর্নীতির সংজ্ঞা :

সাধারণত বল প্রয়োগ বা ভয়প্রদর্শন, ঘুষ, এবং ব্যক্তি বিশেষের বিশেষ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে গণপ্রশাসনের ক্ষমতা অপব্যবহারের দ্বারা ব্যক্তিগত সুবিধা অর্জনকে দুর্নীতি বলে।

সরকারি পর্যায়ে দুর্নীতির ধরন :

সরকারি পর্যায়ে দুর্নীতির ধরনগুলো হলো-

  • আত্মসাৎ।
  • ঘুষ বা উৎকোচ গ্রহণ ।
  • প্রিয়তোষণ বা ফেভরেটিজম।
  • স্বজনপ্রীতি বা নেপোটিজম।
  • খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীতে ভেজাল মিশ্রণ ।

দুর্নীতির বৈশিষ্ট্য :

দুর্নীতির বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ-

১। জনসমর্থনহীন সরকার ক্ষমতায় থাকার লক্ষ্যে দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতা করে সুবিধাবাদীদের নিজেদের দলে ঢুকিয়ে থাকে ।

২। দুর্নীতি ক্ষমতাবান বা দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে থাকে ।

৩। দুর্নীতি ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা, দ্রুত ধনসম্পত্তি অর্জন অথবা দারিদ্র্যের কারণে সংগঠিত হয়ে থাকে ।

৪। দুর্নীতি কোনো নির্দিষ্ট স্তরে সীমাবদ্ধ থাকে না, প্রতিটি স্তরে এর অশুভ ছোবল পড়ে।

৫। সমাজে উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতি এর দ্রুত বিস্তারে সহায়তা করে ।

৬। দুর্নীতি, দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের লাভবান করলেও বাকি সকল লোকের জন্য ক্ষতিকারক।

৭। দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের আন্তরিকতার অভাব দুর্নীতি বিস্তারে সহায়তা করে ।

৮। দুর্নীতির ফলে সরকারি সম্পদের অপচয় ঘটে।

৯। দুর্নীতি দ্রুত সমাজ ও দেশকে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর করে এবং ধনী দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য বৃদ্ধি করে ।

১০। বিনিয়োগ ও উৎপাদন হ্রাস পায় ।

১১। মাথাপিছু আয়ের হার কমে।

১২। দুর্নীতি দ্রুত সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টির মাধ্যমে সামাজিক সম্পর্ক
ক্ষতিগ্রস্ত করে।

১৩। দুর্নীতির ফলে কিছুসংখ্যক দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির হাতে সম্পদ কুক্ষিগত হয় ।

দুর্নীতি প্রতিকারের উপায়সমূহ :

দুর্নীতি জাতির অর্থনীতি ধ্বংসকারী, প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে গ্রোথিত এক অবিনাশী ব্যাধি। এ সমস্যার সমাধানে সামাজিক আন্দোলনের প্রয়োজন। একা সরকারের পক্ষে এর সমাধান সম্ভব নয়। কেননা জনগণের পক্ষ হতে সহযোগিতা না পেলে সরকারি শাসক গোষ্ঠীর কর্মকর্তারা দুর্নীতি করতে পারে না। এ আন্দোলনে সরকার ও সর্বস্তরের জনসাধারণের সম্মিলিত প্রয়াস অপরিহার্য। এজন্য আমাদের যা যা করতে হবে তা হলো-

  • দুর্নীতির বিরুদ্ধে নৈতিক ও সামাজিক চেতনা সৃষ্টি ।
  • রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মীয় অনুশাসন পালন ।
  • চাকরিজীবীদের পর্যাপ্ত বেতন ও পারিশ্রমিক প্রদান ।
  • দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কটকরণ ।
  • আয় ও ব্যয়ের সামঞ্জস্যহীনতায় জবাবদিহিতা ।
  • আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ।
  • রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সৎ ও আইনগত নির্দেশনা ।
  • স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন
  • নির্বাহী বিভাগের চাপমুক্ত পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারবিভাগ প্রতিষ্ঠা।
  • ন্যায়পালের পদ বাস্তবায়ন।
  • দুর্নীতিবিরোধী টাস্কফোর্স গঠন।
  • ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটানো ।

Leave a Comment