উদ্ভিদের পুষ্টিতে খনিজ উাদানের ভূমিকা : উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য ১৭ টি খনিজ উপাদান খুবই প্রয়োজন। এ ১৭টি খনিজ উপাদানকে বলা হয় উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –
উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান কয়টি ও কি কি :
উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান হলো মোট ১৭টি। উদ্ভিদ দেহের প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে এ পুষ্টি উপাদনসমূহকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় । যথা-
১. ম্যাক্রোমৌল বা মুখ্য উপাদান (৯টি), যা বেশি প্রয়োজন ।
২. মাইক্রোমৌল বা অণু উপাদান (৮টি), যা তুলনামূলক কম প্রয়োজন ।
ম্যাক্রোমৌল বা মুখ্য উপাদান :
১. নাইট্রোজেন(N) : উদ্ভিদের ক্লোরোফিল তৈরিতে এটি বিশষ ভূমিকা রাখে। ফলে উদ্ভিদ খাদ্য প্রস্তুত করে, শ্বসন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে এবং শক্তি নির্গমণ করে। এটি উদ্ভিদ দেহে নিউক্লিয়ক এসিড ও প্রোটিন উৎপাদনে অংশ নেয়।
২. ম্যাগনেসিয়াম (Mg): ক্লোরোফিল গঠনে এটি একটি অত্যবশ্যকীয় উপাদান । এটি উদ্ভিদের শ্বসন ও সালোকসংশ্লেষণে সাহায্যে করে । প্রয়োজনীয় কিছু এনজাইমেরও সক্রিয়তা বজায় রাখে ।
৩. ফসফরাস (P): ফসফরাস জীবকোষের DNA, RNA, ATP, NADP প্রভৃতির গাঠনিক উপাদান। এটি উদ্ভিদকে সবল করে এবং উদ্ভিদের পাতা, ফুল ও ফল ঝরা রোধ করে।
৪. পটাশিয়াম (K): উদ্ভিদের ফুল, ফল ও বীজ ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোষ বিভাজনে সহায়তার মাধ্যমে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটায় । এছাড়া প্রোটোপ্লাজমকে সক্রিয় রাখে।
৫. ক্যালসিয়াম (Ca): মূলের বৃদ্ধি । কোষ প্রাচীর গঠনে সহায়তা করে। উদ্ভিদ দেহে সৃষ্ট ক্ষতিকর অ্যাসিড নষ্ট করে।
৬. সালফার (S): অ্যামাইনো অ্যাসিডের প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে সালফার প্রোটিন সংশ্লেষণে অংশ গ্রহণ করে। প্রোটিনের আকৃতির জন্যও সালফার দায়ী। রাখে।
৭. অক্সিজেন (O) : পানির অন্যতম উপাদান হিসেবে উদ্ভিদ কর্তৃক শোষিত হয়। খাদ্য তৈরিতে অক্সিজেন বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৮. কার্বন (C): সালোকসংশ্লেষণের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে। কোষ প্রাচীর ও প্রোটোপ্লাজম তৈরিতে সহায়তা করে ।
৯. হাইড্রোজেন (H): খাদ্য তৈরিতে ভূমিকা রাখে ।
মাইক্রোমৌল বা গৌন উপাদান :
১. বোরন (B) : উদ্ভিদের মূল ও কান্ডের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ।
২. দস্তা (Zn) : ক্লোরোফিল ও অক্সিন হরমোন তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৩. তামা (Cu): সালোকসংশ্লেষণ এবং কিছু এনজাইম তৈরিতে ভূমিকা রাখে ।
৪. ম্যাঙ্গানিজ (Mn): ক্লোরোফিল তৈরিতে ভূমিকা রাখে । বিভিন্ন এনজাইমের ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
৫. মলিবডেনাম (Mo): প্রোটিন সংশ্লেষণ ও নাইট্রোজেনের বিপাকে সাহায্য করে।
৬. ক্লোরিন (Cl): মূলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সালোকসংশ্লেষণেও সহায়তা করে।
৭. লৌহ (Fe): ক্লোরোফিল গঠনে ভূমিকা রাখে । এটি শ্বসনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । বিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে ।
৮. নিকেল (Ni): উদ্ভিদে ইউরিয়েজ এনজাইম সক্রিয় করে নাইট্রোজেন বিপাকে সহায়তা করে।