অবাত শ্বসন কী ?
অক্সিজেনের সহায়তা ব্যতীত শ্বসনিক বস্তুর অসম্পূর্ণ জারণের ফলে সামান্য পরিমাণে শক্তি ও বিভিন্ন প্রকার জৈব যৌগ উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি হলো অবাত শ্বসন ৷
অবাত শ্বসন কাকে বলে ?
যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় কোনো মুক্ত অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় না তাকে অবাত শ্বসন বলে ।
অবাত শ্বসন বিক্রিয়া :
ইথানল (এলকোহল) _
C6H12O6 → 2CH3CHOHCOOH + শক্তি
অবাত শ্বসনের গুরুত্ব :
১। কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া এমন রয়েছে যা অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বাচতে পারে না। শক্তি উৎপাদনে এদের একমাত্র উপায় হলো অবাত শ্বসন।
২। এ প্রক্রিয়া ইথাইল এলকোহল তৈরি করে, যা বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
৩। ল্যাকটিক অ্যাসিড ফার্মেন্টেশনে দরকার হয় ।
অবাত শ্বসন প্রক্রিয়া :
অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে শ্বসনিক বস্তুর অসম্পূর্ণ জারণের ফলে সামান্য পরিমাণে শক্তি ও বিভিন্ন প্রকার জৈবযৌগ উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি অবাত শ্বসন প্রক্রিয়া নামে পরিচিত।
অবাত শ্বসন প্রক্রিয়াটিকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
১। গ্লাইকোলাইসিস ও ২। পাইরুভিক এসিডের অসম্পূর্ণ জারণ ।
১। গ্লাইকোলাইসিস : গ্লাইকোলাইসিস সবাত শ্বসন ও অবাত শ্বসনের একটি অভিন্ন প্রক্রিয়া। উভয়ক্ষেত্রে বিক্রিয়াসমূহ অনুরূপ। এ ক্ষেত্রেও এক অণু গ্লুকোজ ভেঙ্গে দুই অণু পাইরুভিক এসিড উৎপন্ন হয়।
২। পাইরুভিক এসিডের অসম্পূর্ণ জারণ : সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত এনজাইমের কার্যকারিতায় পাইরুভিক এসিড অসম্পূর্ণরূপে জারিত হয়।
১। গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন পাইরুভিক এসিড ডিকার্বক্সিলেজ এনজাইমের কার্যকারিতায় পাইরুভিক এসিড থেকে এক অণু CO2ও এক অণু অ্যাসিটালডিহাইড উৎপন্ন হয়।
২। অ্যালকোহল ডিহাইড্রোজিনেজ এনজাইমের কার্যকারিতায় অ্যাসিটালডিহাইড NADH + H+ থেকে হাইড্রোজেন গ্রহণ করে ইথাইল অ্যালকোহল বা ইথানলে পরিণত হয়। এ বিক্রিয়ায় NADH + H+ জারিত হয়ে NAD+ সৃষ্টি হয় ।
৩। কোনো কোনো জীবে (যেমন ল্যাকটিক এসিড ব্যাক্টেরিয়া) পাইরুভিক এসিড ল্যাক্টিক ডিহাইড্রোজিনেজ এনজাইমের কার্যকারিতায় NADH + H+ থেকে হাইড্রোজেন গ্রহণ করে ল্যাক্টিক এসিডে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে CO2 নির্গত হয় না ।
পরীক্ষণ-: অবাত শ্বসনে CO2 গ্যাসের নির্গমন পরীক্ষা
তত্ত্ব : শ্বসন প্রক্রিয়ায় জীবকোষে সঞ্চিত খাদ্য ভেঙে শক্তি নির্গত হয় ও এ প্রক্রিয়ায় CO2 উৎপন্ন হয়। অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে যে শ্বসন ঘটে তা হলো অবাত শ্বসন ।
উপকরণ : একটি টেস্টটিউব ও টেস্টটিউব হোল্ডার, ছোট একটি বিকার, পারদ, ভেজানো ছোলা বীজ, চিমটা ও কস্টিক পটাশের টুকরা।
কার্যপদ্ধতি : প্রথমে বিকারটিতে অর্ধেক পরিমাণ পারদ পূর্ণ করা হলো। পরে টেস্টটিউবটি পারদ দ্বারা পূর্ণ করে মুখ বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে বিকারের পারদের উপর উপুড় করে রাখা হলো। এবারে হোল্ডারের সাহায্যে টেস্টটিউবটিকে খাড়াভাবে আবদ্ধ করে রাখা হলো।
আগে থেকে ভিজিয়ে রাখা অঙ্কুরিত ছোলাবীজ এবারে চিমটার সাহায্যে টেস্টটিউবে প্রবেশ করানো হলো। বীজগুলো পারদের চাপে টেস্টটিউবের উপরের দিকে উঠে যায়। এ অবস্থায় সেটটিকে ২ ঘণ্টা রেখে দেয়া হলো ।
পর্যবেক্ষণ : দু’ঘণ্টা পর দেখা গেল টেস্টটিউবের ভিতরে পারদের স্তর বেশ নিচে নেমে গেছে। এবারে কস্টিক পটাশের কয়েকটি ছোট টুকরা চিমটার সাহায্যে টেস্টটিউবে প্রবেশ করালে কিছুক্ষণ পর টিউবটি পুনরায় পারদে পূর্ণ হয়ে গেল।
সিদ্ধান্ত : কস্টিক পটাশ যেহেতু CO2 গ্যাস শোষণ করে এজন্য টেস্টটিউবের ভেতরে উৎপন্ন গ্যাসটি CO2 । এই CO2 অঙ্কুরিত ছোলা বীজের শ্বসন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়েছে। টেস্টটিউবটি যেহেতু প্রথমে পারদপূর্ণ ছিল, এ অবস্থায় এর মধ্যে কোনো বাতাস বা অক্সিজেন ছিল না। এ অবস্থায় অঙ্কুরিত ছোলা বীজের শ্বসন ঘটেছে যা অবাত শ্বসন । অতএব অঙ্কুরিত ছোলাবীজে অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে অবাত শ্বসন ঘটে এবং CO2 নির্গত হয় ।
সতর্কতা :
1.টেস্টটিউবে যেন কোনো বাতাস থাকতে না পারে এজন্য সম্পূর্ণভাবে পারদ পূর্ণ করতে হবে ।
ii. টেস্টটিউবের মুখ যেন বিকারের তলে না লেগে থাকে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
iii. টেস্টটিউবের মুখ যেন পারদের মধ্যে থাকে সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।