হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

প্রস্বেদন কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এবং গুরুত্ব

প্রস্বেদন কী?

প্রস্বেদন হলো যে শারীরতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের বায়বীয় অঙ্গ (সাধারণত পাতা) থেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি বাষ্পাকারে বের হয়ে যায় তাই প্রস্বেদন ।

প্রস্বেদন কাকে বলে?

প্রস্বেদন (Transpiration) : যে শারীর বৃত্তিয় প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ তার বায়বীয় অঙ্গের (প্রধানত পাতার সজীব কলা) মাধ্যমে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি বাষ্পাকারে বের করে দেয়, তাকে প্রস্বেদন বা বাষ্পমোচন বলে ।

প্রস্বেদন কত প্রকার ও কি কি :

উদ্ভিদের নিম্নলিখিত তিন ধরনের প্রস্বেদন পরিলক্ষিত হয় । যথা-

ক. স্টোম্যাটাল বা পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন (Stomatal Transapirtion)।

খ. কিউটিকুলার বা ত্বকীয় প্রস্বেদন (Cuticular Transpiration)।

গ. লেন্টিকুলার বা রন্ধীয় প্রস্বেদন (Lenticular Transpiration)।

নিম্নে এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো –

ক. স্টোমাটাল বা পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন (Stotmatal Transpiration) : পত্ররন্ধ্র দ্বারা বাষ্পাকারে যে পানি বহিঃমাধ্যমে উদ্ভিদ হতে নির্গত হয়, তাকে পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন বলে। উদ্ভিদের মোট প্রস্বেদনের প্রায় ৯০-৯৫ ভাগ এ প্রক্রিয়ায় ঘটে থাকে । ।

খ. কিউটিকুলার বা ত্বকীয় প্রস্বেদন (Cuicular Transpiration) : উদ্ভিদের কঁচি কাণ্ড ও পাতার বহিঃত্বক কোষে কিউটিকল নামক মোম জাতীয় পদার্থের প্রলেপ থাকে। যদিও এ জাতীয় আবরণ প্রলেপ দ্বারা প্রস্বেদনর রোধ করা হয়, তবুও এই আবরণের মধ্যে স্থানে স্থানে ফাটল থাকায় অথবা আবরণ খুব পাতলা হলে সম্পূর্ণ প্রস্বেদনে শতকরা ৫-১০ ভাগ এই কিউটিকলের মাধ্যমে ঘটে। যার কারণে একে কিউটিকুলার প্রস্বেদন বলে।

গ. লেন্টিকুলার বা রন্ধ্রীয় প্রস্বেদন (Lenticular Transpiration) : গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদের কাণ্ডে লেন্টিসেল নামক রন্ধ্র বিদ্যমান। এ ধরনের কান্ডরন্ধ্রের মাধ্যমে বাষ্পাকারে পানি ত্যাগের পদ্ধতিকে লেন্টিকুলার প্রস্বেদন বলে। সম্পূর্ণ প্রস্বেদনের ০.১% ভাগ পানি এই পদ্ধতিতে নির্গত হয় ।

প্রস্বেদনের গুরুত্ব :

i. পানি শোষণ : পাতার প্রস্বেদনের কাৰণে বাহিকানালীতে পানির যে টান পড়ে সেই টান মূলরোম কর্তৃক পানি শোষণে সাহায্য করে। তাই পানি শোষণে জীবন রক্ষাকারী হিসেবে প্রস্বেদনের অনেক ভূমিকা আছে।

ii. লবণ পরিশোষণ : প্রস্বেদনের কারণে চারদিক থেকে লবণ উদ্ভিদমূলের কাছাকাছি আসে, তাই উদ্ভিদ সহজে লবণ পরিশোষণ করতে পারে ।

iii. সকল কোষে পানি সরবরাহ : প্রতিটি জীবিত কোষেই প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটে থাকে। এর জন্য পানির প্রয়োজন। প্রস্বেদন প্রক্রিয়ার কারণে পানি সহজে সকল কোষে পৌঁছাতে পারে ।

iv. সালোকসংশ্লেষণ : সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য তৈরির জন্য পানির প্রয়োজন । প্রস্বেদন না হলে এ বিপুল পানি পাওয়া যেত না, ফলে সালোকসংশ্লেষণ তথা খাদ্য তৈরি কমে যেত ।

v. পাতায় উপযুক্ত তাপ নিয়ন্ত্রণ : বিভিন্ন কাজের জন্য পাতায় একটি উপযুক্ত তাপমাত্রার দরকার । প্রস্বেদন গাছকে অত্যধিক গরম হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং উপযুক্ত তাপমাত্রা রক্ষা করে ।

vi. দৈহিক বৃদ্ধি : কোষ বিভাজন, স্বাভাবিক স্ফীতি রক্ষা ইত্যাদির মাধ্যমে প্রস্বেদন গাছের দৈহিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ।

vii. অভিস্রবণ : প্রস্বেদনের ফলে কোষরসের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়; ফলে অভিস্রবণ প্রক্রিয়া ঘটার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয় ।

প্রস্বেদনের উপকারিতা ও অপকারিতা :

উপকারি ভূমিকা : উদ্ভিদের প্রস্বেদনের ফলে বাহিকানালীতে যে টান পড়ে সেই টান মূলরোম কর্তৃক উদ্ভিদের পানি শোষণে সাহায্য করে। প্রস্বেদন পরোক্ষভাবে সালোকসংশ্লেষণকে নিয়ন্ত্রণ করে। কারণ সালোকসংশ্লেষণে বিপুল পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয়। প্রস্বেদনের কারণেই মাটি থেকে পানি পাতায় পৌঁছায়। ফলে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া চলতে থাকে।

প্রস্বেদনের ফলে উদ্ভিদদেহের বিভিন্ন অংশে খাদ্য পরিবহণ অব্যাহত থাকে । প্রস্বেদনের ফলে পাতার পৃষ্ঠে কিছু পানিগ্রাহী লবণ জমা হয় যা ছত্রাকের আক্রমণ হতে পাতাকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। প্রস্বেদন কোষরসের ঘনত্বের বৃদ্ধি ঘটিয়ে অভিস্রবণে সাহায্য করে। পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে উদ্ভিদের দৈহিক বৃদ্ধিতে প্রস্বেদন বিশেষ ভূমিকা রাখে ।

অপকারি ভূমিকা : প্রস্বেদনের মাধ্যমে দেহ থেকে বাষ্পাকারে পানি বের করে দিতে উদ্ভিদের শক্তির অপচয় হয়। প্রস্বেদনের কারণে উদ্ভিদের শোষিত পানির অপচয় ঘটে। অতিরিক্ত প্রস্বেদন অনেক সময় উইলটিং ঘটিয়ে উদ্ভিদের জীবনকে বিপন্ন করে ও মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনে।

সুতরাং উদ্ভিদ জীবনে প্রস্বেদনের গুরুত্ব বিশ্লেষণ শেষে এ কথাই বলা যায় যে, কিছু অপকারি দিক থাকলেও উদ্ভিদের সুস্থ সবলভাবে বেঁচে থাকার জন্য তথা বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রস্বেদনের গুরুত্ব অপরিসীম।

Leave a Comment

error: Content is protected !!