হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ:সংজ্ঞা,ধাপ,গুরুত্ব,প্রযুক্তি চিত্র সহ

নতুন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টির জন্য কোনো জীনের DNA-র পরিবর্তন ঘটানোই হলো জিন প্রকৌশল বা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং। আর এ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংকে রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ প্রযুক্তি বলা হয় ।

রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ কি ?

রিকম্বিনেট ডিএনএ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিশেষ এনজাইনের সাহায্যে কোন ডিএনএ অনুকে দুস্থানে কেটে নির্দিষ্ট অংশ পৃথক করে অন্য কোন জীবের ডিএনএ অনুর কাঙ্খিত স্থানে সন্নিবেশিত করা হয়। এ প্রযুক্তিকে উৎপন্ন বইমেরিক ডিএনএ হলো রিকম্বিনেট ডিএনএ।

রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ কাকে বলে ?

কোন জীবের কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্য বহনকারী DNA অনুর খন্ডাংশকে আলাদা করে অন্য একটি জীবের DNA অনুর সঙ্গে যুক্ত করে যে নতুন ধরনের DNA অনু তৈরি করা হয় তাকে রিকম্বিনেট ডিএনএ বলে।

আরও দেখো: টিস্যু কালচার: সংজ্ঞা,পদ্ধতি,গুরুত্ব,ধাপ,ব্যবহার, সুবিধা

রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ তৈরির ধাপ সমূহ :

i. কাঙ্ক্ষিত DNA (Target DNA) নির্বাচন ।

ii. একটি বাহক নির্বাচন, যার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত DNA খণ্ডটি স্থানান্তর করা সম্ভব।

iii. নির্দিষ্ট স্থানে DNA অণুকে ছেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় রেস্ট্রিকশন এনজাইম (DNA কে কাটার বিশেষ ধরনের এনজাইম) নির্বাচন ।

iv. ছেনকৃত DNA খণ্ডসমূহ সংযুক্ত করার জন্য DNA লাইগেজ এনজাইম নির্বাচন ।

V. কাঙ্ক্ষিত DNA-সহ বাহন DNA-এর অনুলিপনের জন্য একটি পোষক (Host) নির্বাচন।

vi. কাঙ্ক্ষিত DNA খণ্ড সমন্বয়ে প্রস্তুতকৃত রিকম্বিনেন্ট DNA-এর বহিঃপ্রকাশ মূল্যায়ন ।

আরও দেখো: জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কী? কাকে বলে। এবং এর ব্যবহার

রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ এর গুরুত্ব :

এ প্রযুক্তির মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব। রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তি বা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে পেঁপের মোজাইক প্রতিরোধী পেঁপে গাছ উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে। রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তির মাধ্যমে সূর্যমুখীর সালফার অ্যামিনো এসিড সৃষ্টিকারী জিন ক্লোভার ঘাসে স্থানান্তর করা সম্ভব হয়েছে।

যেসব ভেড়া ঐ ঘাস খায় তাদের লোম উন্নত মানের হয়ে থাকে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং তথা রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তির মাধ্যমে সুইডেনের একদল বিজ্ঞানী সুপার রাইস উদ্ভাবন করেন। তারা Japonica টাইপ ধানে ড্যাফোডিল থেকে বিটা ক্যারোটিন তৈরির চারটি জিন এবং অতিরিক্ত আয়রন তৈরির তিনটি জিন প্রতিস্থাপন করেন।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তির সফলতা রয়েছে অনেক। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের টিকা, হরমোন, অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন। বিভিন্ন ধরনের রোগ শনাক্তকরণেও ব্যবহৃত হচ্ছে জিন প্রযুক্তি ।

আরও দেখো: জীবপ্রযুক্তি কি? কাকে বলে। এবং এর গুরুত্ব বা অবদান

রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ প্রযুক্তি চিত্রসহ বর্ণনা :

রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ প্রযুক্তি চিত্র

১। কাঙ্ক্ষিত DNA নির্বাচন ও পৃথকীকরণ : জিন প্রকৌশলের প্রথম ধাপ হলো কাঙ্ক্ষিত DNA অণু নির্বাচন। নির্বাচনের পর জীব হতে জৈব রাসায়নিক পদ্ধতির মাধ্যমে DNA পৃথক করা। প্রথমে কোষকে সামান্য বিগলিত করা হয় এবং কোষের অভ্যন্তরে অবস্থিত প্রোটিন, শর্করা, লিপিড প্রভৃতি অণুসমূহকে তলানি ফেলার মাধ্যমে DNA অণুকে পৃথক করা হয়।

পৃথকীকৃত DNA হতে Restriction endonuclease এনজাইম দ্বারা কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিনের বিন্যাস কাটা হয়। EcoRI, BamHI, HindIII, BglII প্রভৃতি রেসট্রিকশন (RE) এনজাইম ।

২। বাহক নির্বাচন : কাঙ্ক্ষিত DNA-এর প্রয়োজনীয় অংশ বহন করার জন্য একটি বাহক নির্বাচন করতে হয়। ব্যাকটেরিয়ার প্লাজমিড একটি উত্তম বাহক ।

৩। কাঙ্ক্ষিত DNA খণ্ডকে বাহকে (প্লাজমিড) প্রবেশ করানো : এ ক্ষেত্রে পৃথকীকৃত বাহক প্লাজমিডকে Restriction endonuclease এনজাইমের সাহায্যে কাটা হয়। এ কর্তিত স্থানে কাঙ্ক্ষিত DNA খণ্ডটিকে স্থাপন করে লাইগেজ এনজাইমের সাহায্যে প্লাজমিড DNA-এর সাথে জোড়া লাগানো হয় । কঙ্ক্ষিত DNA খণ্ড সংযুক্ত প্লাজমিড DNA-কে রিকম্বিন্যান্ট DNA বলে ।

৪। পোষক কোষে rDNA-এর স্থানান্তরকরণ : এই ধাপে রিকম্বিন্যান্ট DNA-কে নির্দিষ্ট পোষক কোষে প্রবেশ ‘করানো হয় ৷ পোষক কোষ হিসেবে সাধারণত ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়। এ পদ্ধতিকে ট্রান্সফরমেশন বলে ।

৫। rDNA-এর বহিঃপ্রকাশ মূল্যায়ন : রিকম্বিন্যান্ট DNA প্রস্তুত করার কাজটি সফলভাবে হয়েছে কি না তা এ ধাপে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করা হয় ।

৬। কাঙ্ক্ষিত DNA উদ্ভিদে স্থানান্তর : সাধারণত প্রোটোপ্লাস্ট আবাদ, কোষ-কলা আবাদ, ভাজক কলা আবাদ, অপরিপক্ব ভ্রূণ আবাদ, বিটপ আবাদ, পরাগরেণু এবং জাইগোট ইত্যাদির মাধ্যমে টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে উদ্ভিদ দেহে কাঙ্ক্ষিত জিন স্থানান্তর করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন উদ্ভিদকে ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ বলে ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!