হেমন্তকাল : বাংলা প্রবন্ধ রচনা

সূচনা : 

হেমন্ত বাংলার ষড়ঋতুর একটি। হালকা শীতের আমেজ আর কোমল স্নিগ্ধতার পরশ নিয়ে হেমন্তকাল আসে ধীর লয়ে। তার আগমনে কোনো ডামাঢোল নেই, নেই কোনো আলাদা উৎসব ।

হেমন্ত প্রকৃতির রূপ বৈশিষ্ট্য : 

কার্তিক অগ্রহায়ণ দু’মাস হেমন্তকাল। হেমন্ত শরতেরই বিলম্বিত পরিণতি। কিন্তু হেমন্তের নেই শরতের বর্ণৈশ্বর্য, আছে বৈরাগ্যের সুগভীর বিষণ্নতা। হেমন্ত ধোঁয়াটে কুয়াশার আবরণে মুখ ঢেকে নিঃসঙ্গ সাধনায় মগ্ন থাকে। সে সাধনা তার ফসল ফলানোর একান্ত সাধনা। ক্ষেত খামার ফসলে ভরে যায়। এক সময় তা কৃষকের বাড়িতে উঠতে থাকে। 

এক অন্ত হীন কর্ম ব্যস্ততার মধ্যদিয়ে। হেমন্ত ঋতু প্রকৃতিক ভূষণ হীন। তার ফুলের বাহার নেই, সৌন্দর্যের জৌলুস নেই, রূপসজ্জা নেই, নেই অফুরন্ত প্রাচুর্য। কিন্তু আছে নারীর এক অনির্বচনীয় কল্যাণময় রূপশ্রী। সে আমাদের কুটির আঙিনায় রাশি রাশি রেখে সোনা ধানে ভরে দিয়ে ঐশ্বর্য শিশির ভেজা পথে নিঃশব্দ চরণে বিদায় গ্রহণ করে।

আরও পড়ুন : বাংলা প্রবন্ধ রচনা : শরৎকাল

হেমন্তের রূপ বৈশিষ্ট্য : 

হেমন্তের মৃদু স্নিগ্ধ আবহাওয়া, মেঘমুক্ত সুনীল আকাশ আর ফসলের মৌ মৌ সুবাসে ভরা শীতের আমেজ লাগা বাতাসে বাংলার প্রকৃতি মায়ের মমতায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। সোনার ছড়ার মতো ধানের আঁটি কেটে এনে কৃষক তার আঙিনা ভরে তোলে। বুভুক্ষু মানুষের ঘরেও তখন নবান্নের সুবাস। হেমন্তের রূপ দেখে অভিভূত, আনন্দে মাতোয়ারা কবি হৃদয় গেয়ে ওঠে—

“বিবর্ণ বাদামী পাখি, হলুদ বিচালি

পাতা কুড়াবার দিন ঘাসে ঘাসে।”

বাংলার হেমন্ত যেন ফসলের গানে সুরে ভরা। হেমন্তের প্রভাবে সূর্য গাছের শাখায় শাখায় কাঁচা সোনার মতো আলো ছড়িয়ে দেয় চারদিকে। প্রকৃতি যেন নির্মল আনন্দে নেচে ওঠে। হেমন্তের মেঘমুক্ত সুনীল আকাশ থেকে রাতের চাঁদ রজতধারা ছড়িয়ে দেয় ঘুমন্ত ধরিত্রীর বুকে। মনে হয় শব্দহীন কোনো ঘুমপাড়ানি গানের সুর বাংলার মানুষের বুক স্নেহসুধায় নিবিড় মমতায় পূর্ণ করে তুলতে চায়। আর তাই বাংলার কবি বলেন-

“আমি যদি মরে যাই একদিন

Advertisement Advertisement

কার্তিকের নীল কুয়াশায়

যখন মরিছে ধান বাংলার

ক্ষেতে ক্ষেতে ম্লান চোখ বুকে।”

হেমন্তের সকাল : 

হেমন্তের সকাল প্রকৃতিকে হিমেল ছোঁয়ায় ভরে দেয়। চারদিকে শীতের আমেজ। শান্ত, স্নিগ্ধ নির্মল সকাল। শীতের আগমনীবার্তা ধ্বনিত হয় সকালের মৃদুমন্দ হাওয়ায়। প্রকৃতি প্রভাতে চারদিকে ঝলমলে সোনালি রোদ ছড়িয়ে যেন উচ্ছলতায় হেসে ওঠে। সে এক অপরূপ সৌন্দর্য।

হেমন্তের বিকাল : 

হেমন্তের বিকাল আরো সুন্দর, আরো কোমল। গাছে গাছে পাখিদের কলকাকলি, ঘরে ঘরে, পাতায় পাতায়, বাড়িয়ে বাড়িতে আনন্দ, নির্মল আকাশ, মাঠঘাট পরিচ্ছন্ন। বিলে ঝিলে কলমি আর শাপলার সৌন্দর্য যেন মন কেড়ে নেয়। সন্ধ্যায় পাখিরা ঘরে ফেরে, সূর্যাস্ত যায়। গোধূলি মিলিয়ে যায়, আসে রাত। আসে নীরবতা।

উপসংহার : 

আমাদের বাংলাদেশ এমন এক দেশ, যেখানে দুঃখ আছে, আছে অভাব । সর্বোপরি হেমন্ত আমাদের হৃদয়ে আনন্দের বন্যা বইয়ে দেয়। ঘরে বাইরে সব কিছুতেই যেন আমরা হেমন্তের আনন্দ ছোঁয়া অনুভব করি। হেমন্ত প্রকৃতির তাই এক অমূল্য দান।

আমার মূল লক্ষ্য একটাই (Sikkhagar-শিক্ষাগার) ওয়েবসাইটের হাত ধরে “শিক্ষা হবে উন্মুক্ত ও বাণিজ্যমুক্ত”। এই প্লাটফর্মে থাকবে একাডেমিক প্রস্তুতি, ভর্তি প্রস্তুতি, চাকরি প্রস্তুতি, স্পেশাল স্কিল এবং ধর্মীয় শিক্ষাসহ নানাবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।

Leave a Comment

Advertisement Advertisement
error: Content is protected !!