বাক্যে ধাতুর সাথে পুরুষ অনুযায়ী কালসূচক বিভক্তি বা ক্রিয়া বিভক্ত যোগ করে ক্রিয়া পদ গঠন করা হয় । এই ক্রিয়া পদ ছাড়া কোন বাক্য গঠন হয় না। তাই বাংলা ব্যাকরণে ক্রিয়াপদের গুরুত্ব অপরিসীম।
সংজ্ঞা : যে পদ দ্বারা কোনো কাজ করা বা হওয়া বোঝায়, তাকে ক্রিয়াপদ বলে। যেমন-যায়, খায়, গায়, পড়ে, লেখে, খেলে, আঁকে ইত্যাদি ক্রিয়াপদ।
ক্রিয়াপদ বাক্যে প্রয়োগ :
মাহিন স্কুলে যায়। গরু ঘাস খায়। পাখি গান গায়। মিনা বই পড়ে। ছেলেরা ফুটবল খেলে ইত্যাদি।
ক্রিয়াপদের প্রকারভেদ :
সাধারণত অবস্থা ও কর্ম অনুযায়ী ক্রিয়াপদের শ্রেণিবিন্যাস হয়ে থাকে। যেমন-
ক। অবস্থানুযায়ী ক্রিয়াপদ দুই প্রকার। যথা-
- সমাপিকা ক্রিয়া ও
- অসমাপিকা ক্রিয়া ৷
১। সমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া দ্বারা মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায় এবং বাক্য সমাপ্ত হয়, তা-ই সমাপিকা ক্রিয়া । যেমন- নাঈম পড়েছিল। প্রভাতে সূর্য ওঠে। শিশুটি কাঁদছে। তারা ঘুড়ি উড়ায়। উপরের বাক্যগুলোতে পড়েছিল, ওঠে, কাঁদছে, উড়ায় সমাপিকা ক্রিয়াপদ ৷
২। অসমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া দ্বারা মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায় না এবং বাক্যও সমাপ্ত হয় না, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন- মিনা ভাত খেয়ে ………। হাসান বাজারে গিয়ে ……….। এখানে মিনা ও হাসান কি করছে তা সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ পায়নি। তাই বাক্যও সমাপ্ত হয়নি। সুতরাং এরা অসমাপিকা ক্রিয়া।
আরও শিখুন : সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার সংজ্ঞা, উদাহরণ, পার্থক্য, বৈশিষ্ট্য
খ। কর্ম অনুযায়ী ক্রিয়াপদ তিন প্রকার। যথা-
- সকর্মক ক্রিয়া,
- অকর্মক ক্রিয়া এবং
- দ্বিকর্মক ক্রিয়া ।
ক. সকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়ার কর্মপদ থাকে, তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে। ক্রিয়াকে ‘কী’ বা ‘কাকে’ দ্বারা প্রশ্ন করে যে উত্তর পাওয়া যায় তা-ই ক্রিয়ার কর্মপদ। যেমন- রশিদ আমাকে কলমটি দিয়েছে। এ বাক্যে ‘দিয়েছে’ ক্রিয়াপদ। যদি প্রশ্ন করা হয় ‘রশিদ কী দিয়েছে’? উত্তর আসে ‘কলম’। সুতরাং ‘কলম’ ‘দিয়েছে’ ক্রিয়া পদের কর্ম । তাই এটি সকর্মক ক্রিয়া ৷
খ. অকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়ার কর্ম থাকে না, তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে । যেমন- শিশুটি খেলছে। এ বাক্যে ‘খেলছে’ ক্রিয়াপদ। ‘খেলছে’ ক্রিয়াপদকে ‘কী খেলছে’ বা ‘কাকে খেলছে’ দ্বারা প্রশ্ন করলে কোন উত্তর পাওয়া যায় না। তাই ‘খেলছে’ ক্রিয়াপদটি একটি অকর্মক ক্রিয়া।
গ. দ্বিকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়ার দুটি কর্মপদ থাকে, তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন – রশিদ আমাকে কলমটি দিয়েছে। এ বাক্যে ‘দিয়েছে’ ক্রিয়াপদ এবং ‘আমাকে’ ও ‘কলমটি’ দুটি কর্মপদ। দ্বিকর্মক ক্রিয়ার বস্তুবাচক কর্মটিকে মূখ্য কর্ম এবং ব্যক্তিবাচক কর্মটিকে গৌণ কর্ম বলে। উপরোক্ত বাক্যে ‘আমাকে’ গৌণ কর্ম এবং ‘কলমটি’ মুখ্য কর্ম।