প্রতিবেদন : রাস্তা সংস্কারের জন্য বা যাতায়াত ব্যবস্থার দুরবস্থা সম্পর্কে

কোনো একটি রাস্তা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পত্রিকায় প্রকাশের জন্য একটি প্রতিবেদন তৈরি কর।

অথবা, তোমার এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থার দুরবস্থা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন রচনা কর।

তেওতা-শিবালয় সড়কটি পুনঃসংস্কার একান্ত প্রয়োজন

শিবালয় থানা থেকে তেওতা পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ কি. মি. রাস্তা যানবাহন ও লোক চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। থানার সাথে তেওতার যোগাযোগের এটিই একমাত্র রাস্তা। সড়কটির গুরুত্ব সহজেই অনুমেয়। জাফরগঞ্জ ও আরিচা নদীবন্দর এ সড়কের উভয় প্রান্তে অবস্থিত। অথচ সড়কটির দুরবস্থা বর্ণনাতীত। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ইঞ্জিনচালিত যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ। এতদসত্ত্বেও এবারের ভয়াবহ বন্যা সড়কটিকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। সড়কটির দু’পাশের মাটি নরম হয়ে সরে গেছে। মাঝে মাঝে বিরাট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। রিকশা, সাইকেল ও মোটর সাইকেল চলতে পারছে না।

মানুষের চলাচল যেন একেবারেই অসম্ভব হয়ে উঠেছে। জাফরগঞ্জ হাটে প্রচুর পরিমাণে তরিতরকারি ও অন্যান্য কাঁচামালের আমদানি ঘটে। পরিবহনের অব্যবস্থার কারণে এসব কাঁচামাল অন্যত্র যেতে পারছে না। এতে স্থানীয় উৎপাদক ও কৃষকগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সাথে দূরবর্তী এলাকার মানুষ এখানকার উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী ভোগের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। স্থানীয় কৃষকগণ উৎপাদনের উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। থানা সদরের সাথে তেওতার যোগাযোগ প্রশাসনিক কারণেও গুরুত্বপূর্ণ।

সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দের স্বচ্ছন্দে যাতায়াতে সড়কটি প্রধান অন্তরায়। শুকনো মৌসুমে কোনোরকমে গাড়ি চলাচল করলেও বর্ষাকালে এ সড়কটি যে চেহারা ধারণ করে তা এক কথায় ‘ভয়ঙ্কর’। বুকে পানি নিয়ে অদৃশ্য গর্ত লুকিয়ে থাকে এবং সাধারণ পথচারীরা প্রায়ই এসব গর্তে পড়ে আঘাতে জর্জরিত হয়। এহেন অবস্থা আজকের নয় বা একদিনে এ দুরবস্থা আসেনি। স্বাধীনতা-পরবর্তী চল্লিশ বছরে মাত্র একবার সড়কটির প্রতি সরকারের শুভদৃষ্টি পড়েছিল, পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারের পর অজ্ঞাত কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর থেকে এই এলাকাবাসী যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার বিষয়টি উত্থাপন করে কোনো সুফল না পেয়ে দারুণভাবে হতাশাগ্রস্ত। হতাশা থেকে ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠছে জনমনে, থানা সদরে মিছিল করে সে ক্ষোভের প্রকাশও তারা ঘটিয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের নীরব উদাসীনতায় তাতে সামান্য ফাটল ধরেনি। রাস্তাটি ক্ষতবিক্ষত বক্ষদেশ নিয়ে আর কতদিন উপেক্ষায় পড়ে থাকবে- এ জিজ্ঞাসা আজ সবার। এলাকাবাসীর একান্ত কামনা, যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্বসহ বিচার করবেন এবং যথাশীঘ্র সম্ভব সড়কটি পুনঃনির্মাণের সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

ইমাম হোসেন
তেওতা এলাকাবাসীর পক্ষে
তেওতা, শিবালয়।

আরো পড়ুন : বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রতিকার চেয়ে – প্রতিবেদন

বর্তমান রাস্তাঘাটের দুরবস্থা’- বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা কর ।

অথবা, তোমার এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন চেয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি কর ।

প্রতিবেদনের প্রকৃতি : সংবাদ প্রতিবেদন
প্রতিবেদনের শিরোনাম : বর্তমান রাস্তাঘাটের দুরবস্থায় জনজীবনে দুর্ভোগ ।
সরেজমিনে তদন্তের স্থান : ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ স্থানের রাস্তাঘাট (সড়কপথ) ।
প্রতিবেদন তৈরির সময় : সকাল ১১:০০ টা – বিকাল ৪:০০ টা ।
তারিখ : ১৪ই মার্চ ২০১৯
সংযুক্তি : ৫ কপি ছবি (‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ স্থানের রাস্তার দুরবস্থার চিত্র সংবলিত) ।

বর্তমান রাস্তাঘাটের দুরবস্থায় জনজীবনে দুর্ভোগ

বর্তমান সময়ে রাস্তাঘাটের যে করুণ চিত্র দেখা যায় তা মানুষের জন্য চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। এ ধরনের বিপজ্জনক রাস্তায় চলাফেরা করা সবার জন্যই বেশ ঝুঁকিপূর্ণ । ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ এলাকা পরিদর্শন করে বিষয়টি সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে । বর্তমান রাস্তাঘাটের দুরবস্থার কারণে একদিকে যেমন অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে তেমনই প্রতিনিয়ত বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। অপ্রশস্ত রাস্তাঘাট, অতিরিক্ত যানবাহন, যানবাহনের নিয়মহীন চলাচল, উপচে পড়া অগণন মানুষের ভিড়, সর্বোপরি রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা সব মিলিয়ে মানুষের জীবন আজ বিপর্যস্ত ।

স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বাংলাদেশের সড়ক পথের যথেষ্ট উন্নতি সাধিত হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল । ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, অপরিকল্পিত ও ভারসাম্যহীন নগরায়ণ, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে । রাস্তাঘাটের দুরবস্থার চিত্র প্রতিদিনই খবরের কাগজে কিংবা টেলিভিশনে দেখা যায় । এ কারণে জনগণের কী পরিমাণ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাও জানা যায় । রাস্তাঘাটের দুরবস্থার কারণ খুঁজে বের করে এর প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, ওয়ার্ড কমিশনার, চেয়ারম্যান, স্থানীয় সংসদ সদস্য সবাইকে অবগত করানো হয়। তৎক্ষণাৎ সবাই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিলেও দিন কয়েক পরেই তা গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। তখন রাস্তাঘাটের দুরবস্থার সঙ্গে সাধারণ মানুষের দুরবস্থার আর কোনো পার্থক্য থাকে না ।

রাস্তাঘাটের দুরবস্থার কারণ

১. অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও আবাসন সংকটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাস্তাঘাটের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও উন্নয়ন না হওয়ায় যোগাযোগ বিশেষত সড়কপথ ভারসাম্যহীন ও দুর্বল হয়ে পড়েছে ।

2. রাস্তায় ওভারব্রিজের স্বল্পতা, ট্র্যাফিক আইন না মানা এবং রাস্তা পারাপারে নিয়ম মেনে না চলা, আধাপাকা ও কাঁচা রাস্তায় অতিরিক্ত মাল ও যাত্রী বোঝাই যানবাহন চলাচল করা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা ইত্যাদি কারণেও রাস্তাঘাটের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হচ্ছে।

৩. অপরিকল্পিতভাবে ওয়াসা, ডেসা, গ্যাস, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ এবং বেসরকারি সংস্থা ও কোম্পানির বিজ্ঞাপনী বিলবোর্ডসহ নানা কারণে প্রায়ই জনবহুল রাস্তাসহ আবাসিক রাস্তাতেও খোঁড়াখুঁড়ি চলে । খোঁড়াখুঁড়ির পর পুনরায় রাস্তাটি মেরামতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণেও রাস্তাঘাটের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে ।
৪. দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ সড়কগুলোর কার্যকর পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রাস্তাঘাটের অবস্থা শোচনীয় হচ্ছে ।

৫. পরিকল্পিত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় সামান্য বৃষ্টিতেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা । এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের পক্ষে রাস্তায় চলাফেরা করা অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়ে ।

৬. টেকসই ও পরিকল্পিত রাস্তাঘাটের উন্নয়ন এবং সংস্কারের অভাবই রাস্তাঘাটের দুরবস্থার জন্য প্রধানত দায়ী । অধিকাংশ রাস্তা অপ্রশস্ত ও সংকীর্ণ ।

৭. জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য ২৫% ফুটপাত থাকার কথা থাকলেও তা নেই । আবার যেটুকু আছে তার অধিকাংশ স্থান কলকারখানা, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ফেরিওয়ালাদের দখলে । এসব রাস্তায় ক্ষণস্থায়ী দোকানপাট থেকে শুরু করে পানের দোকান, চায়ের দোকান, কাপড়ের দোকান, ফলের দোকান, মাছের বাজার, তরকারির দোকান বসে । এতে করে রাস্তার প্রশস্ততা আরও কমে যায় । ফলে সাধারণ মানুষের রাস্তায় চলাফেরা করতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় ।

৮. রাস্তার অনেকাংশ জুড়ে বাসস্ট্যান্ড, ট্রাকস্ট্যান্ড ও টেম্পোস্ট্যান্ড দখল করে রেখেছে। সংশ্লিষ্টরা সংঘবদ্ধ বলে তাদের ওঠানো যাচ্ছে না । এছাড়া আবাসনের ক্ষেত্রে যে নিয়ম রয়েছে অর্থাৎ রাস্তার জন্যে যতটুকু স্থান রাখার কথা বাড়ির মালিক তা রাখেন না; ক্ষেত্র বিশেষে রাস্তা দখলের ঘটনাও ঘটে । এসব কারণে রাস্তা সংকীর্ণ ও অরক্ষিত হয়ে পড়ছে ।

প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ : রাস্তাঘাটের দুরবস্থা নিরসনে যেসব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে সেগুলো নিম্নরূপ-

১. রাস্তা নির্মাণে দক্ষ নির্মাতা ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা । ট্র্যাফিক আইন মেনে চলা এবং রাস্তার বাইরে বহুতলবিশিষ্ট পার্কিং সুবিধা সৃষ্টি করা । অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে ফুটপাত ও রাস্তাঘাট পথচারী ও যান চলাচলের উপযোগী রাখাও আবশ্যক ।

২. কিছু কিছু প্রধান ও অপ্রধান সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা এবং প্রয়োজনে ভারী যানবাহনের জন্য ভিন্ন সড়ক তৈরি করা । দেশের সড়কগুলোর কার্যকর পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বর্তমানের ‘সড়ক শ্রেণিবিন্যাস’কে সকল সড়কের জ্যামিতিক মান অনুসারে পুনর্বিন্যাস করতে হবে । এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও দেশীয় চাহিদাকে বিবেচনায় রাখতে হবে ।

৩. দেশে সুসংহত ও সুপরিকল্পিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা । রাস্তাঘাটের সংস্কার সাধন ও আধুনিকায়ন করা ।

৪. পরিকল্পিত নগরায়ণ ও রাস্তাঘাটের উন্নয়নে পরিকল্পনা মাফিক প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা । কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করে যথাযথ মেরামতের মাধ্যমে সড়ক সংরক্ষণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা ।

৫. দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনকে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে এবং নাগরিক দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে ।

৬. সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং গ্রামীণ নেটওয়ার্কের রক্ষণাবেক্ষণে বাজেট বাড়াতে হবে এবং সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে ।

৭. সড়ক ব্যবস্থাপনার জন্য জরুরিভিত্তিতে একটি সড়ক তহবিল গঠন করা উচিত । এ ধরনের তহবিল ছাড়া বর্তমান রাস্তাঘাটের দীর্ঘস্থায়ী রক্ষণাবেক্ষণ কষ্টসাধ্য হবে ।

এসব ব্যবস্থা গৃহীত হলে বর্তমান রাস্তাঘাটের যে দুরবস্থা তা দ্রুত নিরসন করা সম্ভব হবে এবং সাধারণ জনগণও দুর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা পাবে ।

আমার মূল লক্ষ্য একটাই (Sikkhagar-শিক্ষাগার) ওয়েবসাইটের হাত ধরে “শিক্ষা হবে উন্মুক্ত ও বাণিজ্যমুক্ত”। এই প্লাটফর্মে থাকবে একাডেমিক প্রস্তুতি, ভর্তি প্রস্তুতি, চাকরি প্রস্তুতি, স্পেশাল স্কিল এবং ধর্মীয় শিক্ষাসহ নানাবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।

Leave a Comment