মানপত্র কাকে বলে? মানপত্র লেখার নিয়ম ও মানপত্র নমুনা

সংজ্ঞা : আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে বরণ করা, বিদায় জানানো বা সংবর্ধনা প্রদানের জন্য যে অভিনন্দনপত্র রচনা করা হয় তাকে মানপত্র বলে । মানপত্রকে সংবর্ধনা পত্র, অভিনন্দন পত্র বা সম্মান পত্র বলেও অভিহিত করা হয় ।

মানপত্রকে সাধারণভাবে সামাজিক পত্রের পর্যায়ভুক্ত করা হয় । যদিও বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে মানপত্রকে পত্র বলা যায় না, কারণ এ পত্র ডাকযোগে বা লোক মারফতে প্রাপককে পাঠানো হয় না । প্রাপকের উপস্থিতিতে তা পাঠ করা হয় । মানপত্র কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির চিঠি নয়, বরং কোনো সংগঠন, সংস্থা, সমিতির পক্ষে তা লেখা হয়ে থাকে । সংস্থার বা সংগঠনের সবাই মিলে মানপত্র অনুমোদন করে সুন্দরভাবে লিখে বাঁধাই করে সংবর্ধনা প্রাপ্ত ব্যক্তিকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয় ।

অনেক সময় অহেতুক অতিরঞ্জিত প্রশংসার ফলে মানপত্র হয়ে পড়ে কৃত্রিম ও বুলিসর্বস্ব । মানপত্র রচনার সময় বিশেষ কাঠামো অনুসরণ করতে হয় । নিচে আমরা জানবো মানপত্র কিভাবে লিখতে হয়।

মানপত্র লেখার নিয়ম :

১। শিরোনাম : যাকে, যাদের এবং যে উপলক্ষ্যে মানপত্র দেওয়া হয় তার উল্লেখ করে মানপত্রের প্রকৃতি অনুযায়ী প্রাণঢালা শুভেচ্ছা, শ্রদ্ধাঞ্জলি, উষ্ণ অভিনন্দন, শ্রদ্ধার্ঘ্য ইত্যাদি লিখতে হয় ।

২। মূল অংশ : কয়েকটি অনুচ্ছেদে বিভক্ত মানপত্রে এক একটি অনুচ্ছেদ এক একটি ভাব বহন করে । প্রত্যেকটি অনুচ্ছেদ হতে হবে সংগতিসম্পন্ন ও পারম্পর্যপূর্ণ । সংবর্ধেয় ব্যক্তির গুণ প্রকাশক সম্ভাষণের মাধ্যমে প্রত্যেক অনুচ্ছেদ শুরু করতে হয়। যেমন— সংবর্ধেয় বিশিষ্ট সাহিত্যিকের বেলায় সম্ভাষণ : হে বরেণ্য অতিথি এবং হে ঐতিহ্যের রূপকার, হে নন্দিত কথাশিল্পী । সাফল্য ও মঙ্গল কামনা করে মূল অংশ শেষ করতে হয় ৷

৩। নাম-স্বাক্ষর ও তারিখ : যে প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবর্ধেয় ব্যক্তিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় মূলপত্রের শেষে তাদের সমষ্টিগতভাবে প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় দিতে হয় । যেমন— ছাত্রছাত্রীবৃন্দ, ডিগ্রি কলেজ, কিশোরগঞ্জ । নাম স্বাক্ষরের আগে কিছু বিশেষণ ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়, যেমন— গুণমুগ্ধ, বিনীত, বিনায়বনত, শ্রদ্ধাবনত ইত্যাদি ।

আরো পড়ুন : ছাত্র ছাত্রীদের বিদায়ী মানপত্র – স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা-pdf

মানপত্র লেখার নমুনা :

আপনার এলাকার একজন মুক্তিযোদ্ধার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পাঠের জন্য একটি মানপত্র রচনা করুন।

হে মহান অতিথি,
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সৈনিক! অত্র এলাকার প্রতিটি মানুষের প্রাণ আজ তোমার আগমনে উল্লসিত হয়ে উঠেছে। প্রাণের সাড়া জেগেছে আজ আমাদের এলাকায় তোমার শুভাগমনে । তরুণ, বৃদ্ধ সকলেই আজ আনন্দে বিভোর। দেশমাতৃকার স্বাধীনতাসূর্য ছিনিয়ে আনার সূর্যসন্তান হিসেবে আমরা তোমাকে আমাদের হৃদয়-নিংড়ানো শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করছি। তুমি তা গ্রহণ করে আমাদের ধন্য কর ।

হে দেশের সূর্যসন্তান,
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তোমার অসাধারণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তোমাকে বীর-উত্তম খেতাব প্রদান করেছে। এ মহাগৌরব শুধু তোমার একার নয়, তুমি এতদঞ্চলের সন্তান হওয়ায় এ গৌরব আমাদেরও তোমার এ স্বীকৃতি আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে, সম্মান বাড়িয়েছে। সেজন্য তোমাকে জানাই আমাদের অন্তরের গভীর কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধার্ঘ্য।

হে মৃত্যুঞ্জয়ী সৈনিক,
বাঙালির অস্তিত্বের যুদ্ধে বীরদর্পে অংশগ্রহণ করে তুমি মৃত্যুকে জয় করেছ। যুদ্ধক্ষেত্রে তোমার অসম বীরত্ব ইতিহাসের পাতায় কিংবদন্তি হয়ে আছে। মৃত্যুভয়ে তুমি পেছনে তাকাওনি। দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসায় তুমি হয়ে উঠেছিলে মৃত্যুঞ্জয়ী। আমরা জানি, তোমার সমস্ত শরীরে আজও বুলেটের ক্ষতচিহ্ন বিদ্যমান। তোমার ক্ষতস্থানগুলো বিজয় গৌরবেরই পুষ্পিত
আলেখ্য আমাদের কাছে।

হে মহান দেশপ্রেমিক,
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের তুমি একজন অকুতোভয় বীর সেনানী। তোমার যুদ্ধকৌশল এবং আঘাত হানার পারদর্শিতায় বর্বর বাহিনীর অত্যাচার থেকে মুক্তি পেয়েছে এ দেশের লাখো নারী পুরুষ ও নিষ্পাপ শিশুরা। মানুষকে যেমনি তুমি ভালোবেসেছ ঠিক তেমনি অকৃত্রিমভাবে ভালোবেসেছ দেশকে। আমাদের মুখে মুক্তির হাসি ফুটেছে একমাত্র তোমার দেশপ্রেমের জন্যই । তুমি আমাদের হৃদয় উৎসারিত সংগ্রামী অভিনন্দন গ্রহণ কর ।

হে আপসহীন সংগ্রামী,
আজ এ গৌরবের দিনে তোমাকে সম্মান জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। কোনো বস্তুগত উপঢৌকন দিয়ে পুরস্কৃত করলে তোমার গৌরব কালিমায় ঢাকা পড়বে। তাই তোমাকে আমাদের অন্তর পেতে বরণ করে নিচ্ছি। সেই সাথে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তোমাকে উপহার দিচ্ছি হাজার বুকের সশ্রদ্ধ ভালোবাসা। তুমি দীর্ঘজীবী হও, মানুষের মাঝে চিরদিন বেঁচে থাক- এ কামনা আমাদের।

তারিখ : ১৫.১১.২০….
বিনয়াবনত
কুমিল্লা…. এলাকাবাসীর পক্ষে

আরো পড়ুন : শিক্ষকের বিদায় সংবর্ধনা মানপত্র- প্রধান ও সহকারী শিক্ষক

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় উপলক্ষে একটি বিদায় সংবর্ধনাপত্র রচনা কর।

অথবা, মনে কর, তোমার বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে একটি অভিনন্দনপত্র রচনা কর।

ইস্পাহানি পাবলিক স্কুলের ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় উপলক্ষে

আন্তরিক সংবর্ধনা

হে বিদায়ী বন্ধুরা,
আজ প্রকৃতি রানির অঙ্গজুড়ে বয়ে চলেছে ঋতুরাজ বসন্তের অপরূপ রূপের বিচিত্র আলপনা। কবির ভাষায়, “আজ ভুবনের দুয়ার খোলা, দোল দিয়েছে বনের দোলা”। আমাদের জীবন সুধার এ মধুময় লগনে তোমরা এলে বিদায় নিতে। তোমাদের বিদায় বারতায় শতধা বিভক্তি হয়ে ছিড়ে যাচ্ছে আমাদের হৃদয় বীণার তারগুলো। সেখানে বেজে উঠছে প্রিয়হারা মানুষের বেদনাবিধুর রাগিণী।

হে অমোঘ পথের যাত্রী,
পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকেই চলে আসছে বিদায় দেয়া-নেয়ার মর্মস্পর্শী করুণ অভিনয়। যেতে দিতে মন চায় না, তবুও যেতে দিতে হয়। কবিগুরুর ভাষায় বলা যায়, ‘যেতে নাহি দিব হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়’। কিন্তু অবুঝ মন তো বুঝ মানে না—মানতে চায় না। শুধু বলে, মায়ার বাঁধনে কেন জড়ালে ছেড়ে যদি যাবে হায়।

হে উদ্যম পথিক,
তোমাদের বিদায় ব্যথায় আমরা ব্যথিত বটে, কিন্তু অমঙ্গল অশ্রুতে ভিজিয়ে আমরা অশুভ করতে চাই না তোমাদের শুভ যাত্রা পথকে। প্রকৃতির অমোঘ বিধান মেনে নিয়েই তোমাদেরকে জানাচ্ছি সাদর-বিদায় সম্ভাষণ। শুধু আশা-‘নব জীবনের গাহিয়া গান’ তোমরা বয়ে আনবে নতুন প্রভাত। তোমরা চলো অকুতোভয় দুর্বার বেগে মিথ্যা ভয়ের আগল ভেঙে।

হে পথের দিশারী,
তোমরা ছিলে আমাদের চলার পথের আলোর দিশা। তোমাদের পরশে আমাদের জীবন হয়েছে সরস ও উর্বর। তোমাদের স্নেহ- ভালোবাসা, সুন্দর আচার-আচরণে আমরা হয়েছি গৌরবান্বিত। তোমাদের কাছে আমরা শিখেছি সত্য ও ন্যায়ের পথে চলার অগ্নিমন্ত্র। তোমরা শিখিয়েছ, ‘পৃথিবীতে শত্রুমিত্র কেউ কারো নয়, ব্যবহারে শত্রুমিত্র সবাকার হয়’। তোমরা বড় হও, ফুলে ফলে, পত্রপল্লবে সুশোভিত হয়ে উঠুক তোমাদের বাকি চলার পথটুকু।

হে আলোর সন্ধানী,
জগৎ তো চলমান। চলমান জগতে কেউই দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। কেননা চলাতেই আনন্দ, চলাতেই নব নব সৃষ্টির উন্মেষ। জাতির আলোর দিশা তোমরা। তোমরা অরুণ প্রাতের তরুণ দল। তোমরা জাতির আশা-ভরসার স্থল। তোমাদের পায়ের তলায় পথ জাগবে নব নব অনুরাগে। আমাদের প্রত্যাশা, মিথ্যা ভয়ের আগল ভেঙে তোমরা বয়ে আনবে এক আলোক উজ্জ্বল সোনালি প্রভাত। সুতরাং “যার যেথা স্থান খুঁজিয়া লও, করিয়া সন্ধান নিজ শক্তি বলে।

আজকের প্রত্যাশা,
তোমরা এগিয়ে যাবে সম্ভাবনাময় সোনালি ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার শপথ নিয়ে সম্মুখপানে। ঝাঁপিয়ে পড়বে বাস্তব কর্মক্ষেত্রে, অন্যায়-অত্যাচার, জুলুম-নির্যাতন আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে তোমাদের কঠোর হস্ত সদা প্রস্তুত থাকবে। সুষ্ঠু সুন্দর একটা সমাজ গঠনে ও মজলুম মানবতাকে অন্যায়ের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করবে। এটাই হোক আজকের প্রত্যাশা ও অঙ্গীকার।

তোমাদের প্রীতিস্নিগ্ধ ছাত্রছাত্রীবৃন্দ
ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল, চট্টগ্রাম।
তারিখ : ২৩.০২.২০…

আরো পড়ুন : অবসরজনিত বিদায় সংবর্ধনা মানপত্র : স্কুল ও কলেজ

আমার মূল লক্ষ্য একটাই (Sikkhagar-শিক্ষাগার) ওয়েবসাইটের হাত ধরে “শিক্ষা হবে উন্মুক্ত ও বাণিজ্যমুক্ত”। এই প্লাটফর্মে থাকবে একাডেমিক প্রস্তুতি, ভর্তি প্রস্তুতি, চাকরি প্রস্তুতি, স্পেশাল স্কিল এবং ধর্মীয় শিক্ষাসহ নানাবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।

Leave a Comment