কোষঝিল্লি কাকে বলে? কোষ ঝিল্লির গঠন, কাজ, চিত্র বিস্তারিত

প্রতিটি সজীব কোষের প্রোটোপ্লাজম যে সূক্ষ্ম,  স্থিতিস্থাপক, বৈষম্যভেদ্য, লিপো-প্রোটিন দ্বারা গঠিত সজীব দ্বিস্তরী ঝিল্লি দিয়ে আবৃত থাকে, তাকে প্লাজমামেমব্রেন বা কোষঝিল্লি (Cell membrane) বলে।
 

 প্লাজমামেমব্রেন ছাড়াও একে সেল মেমব্রেন, প্লাজমালেমা, সাইটোপ্লাজমিক মেমব্রেন বা বায়োমেমব্রেন নামে অভিহিত করা হয়।

কোষ ঝিল্লি চিত্রঃ  

প্লাজমামেমব্রেন বা কোষঝিল্লি চিত্র

কোষঝিল্লির ভৌত গঠন :-

এটি দু’স্তরবিশিষ্ট এবং স্থানে স্থানে তা বিচ্ছিন্ন। প্রোটিন স্তর প্রোটিন ও লিপিড স্তর নিয়ে গঠিত। প্লাজমামেমব্রেনের তরঙ্গিত সংবর্তন বা ভাজকে বলে মাইক্রোভিলাই । এক একটি ভিলাই এর বেধ ও উচ্চতা যথাক্রমে ১০০০ A° ও ০.৬-৮ মাইক্রন। কোন কোন কোষে প্রায় ৩,০০০ ভিলাই থাকতে পারে। 
 
হিসেব অনুযায়ী সমগ্র ঝিল্পীর প্রন্থ বা বেধ হয় ৭৫ A° । সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে মেমব্রেনটি মোটেই সুশৃংঙ্খল এবং নিরেট নয় বরং বেশ তরল। পরবর্তীতে আরও আবিষ্কৃত হয়েছে যে, যেখানে কয়েকটি কোষ পাশাপাশি থাকে সেখানে এদের সংযোগস্থলে ঝিল্লীটি সর্বত্র দুই বা তিন স্তরবিশিষ্ট না হয়ে স্থানে স্থানে বেশ পুরু একটিমাত্র স্তরে পরিণত হয় । 
 

দুটি লিপিড স্তর কিভাবে বিন্যস্ত থাকে তার ব্যাখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মডেল প্রস্তাবিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণীয় মডেল হল ফ্লুইড- মোজাইক মডেল। এ মডেল অনুযায়ী মেমব্রেনের দুটি স্তর ফসফোলিপিড দিয়ে গঠিত। এখানে লিপিড ফ্লুইড বা তরল অবস্থায় থাকে এবং তার মধ্যে সম্পৃক্ত থাকে মোজাইকের মত প্রোটিন অণুগুলো ।

আরও পড়ুন :- কোষ প্রাচীর কি। কোষ প্রাচীর ও কোষ ঝিল্লির পার্থক্য। গঠন ও কাজ। 

কোষঝিল্লির রাসায়নিক গঠন :-

  • প্লাজমামেমব্রেন-এ থাকে লিপিড, প্রোটিন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে পলিস্যাকারাইড, DNA, RNA প্রভৃতিও থাকতে পারে।
  • প্রোটিন গাঠনিক উপাদান হিসেবে, এনজাইম হিসেবে এবং বাহক হিসেবে থাকে।
  • প্লাজমামেমব্রেনের মোট শুষ্ক ওজনের প্রায় ৭৫ ভাগই লিপিড। লিপিড প্রধানত পসফোলিপিড হিসেবে থাকে। এছাড়া লিপিডের গ্লিসারোফসফেটিড, লেসিথিন, স্পিনগোলিপিড, কোলেস্টেরল প্রভৃতি বিভিন্ন পরিমাণে বিবিধ কোষ ঝিল্লীতে অবস্থিত থাকে ।
  • লিপিড ও প্রোটিনের অনুপাত ১ : ১.৬ থেকে ১ : ১.৮।

রাসায়নিকভাবে কোষঝিল্লি নিম্নলিখিত উপাদানসমূহ নিয়ে গঠিত-

  1. প্রোটিন [৬০-৮০%]- গাঠনিক প্রোটিন, এনজাইম,বাহক প্রোটিন ইত্যাদি। 
  2. লিপিড [২০-৪০%] ফসফোলিপিড, স্টেরল ইত্যাদি ।
  3. কার্বোহাইড্রেট [৪- ৫%] অলিগোস্যাকারাইড ।
  4. পানি ও লবণ- সামান্য পরিমাণ ।

কোষঝিল্লির কাজ :-

  • এটি কোষীয় সমস্ত বস্তুটিকে ঘিরে রাখে ।
  • বাইরের প্রতিকূল অবস্থা হতে প্রোটোপ্লাজম বা কোষ অঙ্গাণুসমূহকে রক্ষা করে।
  • কোষঝিল্লির মধ্যখান দিয়ে বস্তুর সমন্বয় ও স্থানান্তর ও ব্যাপন নিয়ন্ত্রণ হয় ।
  • কোষের বিভিন্ন অঙ্গের আবরণ তৈরী করে। 
  • বাইরের  ও ভেতরের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে ।
  • বিভিন্ন বৃহদাণু (macro-molecule) সংশ্লেষ করতে পারে।
  • বিভিন্ন রকমের তথ্যের ভিত্তি  হিসেবে কাজ করে।
  • পারস্পরিক বন্ধন, চলন ও বৃদ্ধি ইত্যাদি কাজেও এর অনেক ভূমিকা আছে ।
  • কোষের আকৃতি দান করে। 

আরও পড়ুন :- আদিকোষ ও প্রকৃতকোষের সংজ্ঞা, পার্থক্য, বৈশিষ্ট, উদাহরণ 

প্লাজমামেমব্রেন বা কোষঝিল্লি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী:-  

  • নাগেলি এই ঝিল্লিকে প্লাজমা মেমব্রেন নামকরণ করেন ।
  • অন্যান্য নাম = Bio cell membrane/Cytoplasmic cell membrane / প্লাজমালেমা । 
  • একক পর্দা = প্রোটিন, লিপিড, প্রোটিন নামক ৩টি স্তর দিয়ে গঠিত ।
  • প্লাজমা ঝিল্লীতে 25% পানি থাকে ।
  • কোষাভ্যন্তরে অধিক প্রবিষ্ট মাইক্রোভিলাসকে বলে পিনোসাইটিক ফোস্কা (প্রাণিকোষে ভালো দৃশ্যমান)  
  • গ্লাইকোক্যালিক্স = চিনির স্তর বিশেষ, গ্লাইকোপ্রোটিন ও গ্লাইকোলিপিডের সমষ্টি 
  • কোষঝিল্লী ৭০-১০০ A পুরু ।
  • কোষঝিল্লীর মোট শুষ্ক ওজনের প্রায় ৭৫% লিপিড, ৪০% প্রোটিন ।
  • রাসায়নিক উপাদান: প্রোটিন (৬০-৮০% গাঠনিক প্রোটিন, এনজাইম বাহক প্রোটিন), লিপিড (২০-৪০% ফসফোলিপিড, স্টেরল ইত্যাদি), কার্বোহাইড্রেট (৪-৫% অ্যলিগোস্যাকারাইড)
  • সর্বজন স্বীকৃত মডেল হলো ফ্লুইড মোজাইক মডেল ।
  • ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে ‘এস জোনাথন সিঙ্গার এবং জি.এল.নিকলসন’ প্লাজমামেমব্রেনের গঠন সম্পর্কিত ফ্লুইড মোজাইক মডেলটি প্রবর্তন করেন ।
  • Plasmamembrane এর নড়া চড়াকে বলা হয় Flipflop movement .
  • ফ্লুইড মোজাইক মডেল অনুযায়ী Plasmamembrane-এ ৩ ধরনের Protein পাওয়া যায় ।
  1.  Periferal Protein — এগুলো ঝিল্লির সার্ফেসে থাকে।
  2.  Integral Protein — এগুলো ঝিল্লির উভয় সার্ফেস পর্যন্ত ব্যাপ্ত থাকে। 
  3.  Lipid Protein — এগুলো লিপিড কোর-এ সম্পৃক্ত  থাকে।

আমার মূল লক্ষ্য একটাই (Sikkhagar-শিক্ষাগার) ওয়েবসাইটের হাত ধরে “শিক্ষা হবে উন্মুক্ত ও বাণিজ্যমুক্ত”। এই প্লাটফর্মে থাকবে একাডেমিক প্রস্তুতি, ভর্তি প্রস্তুতি, চাকরি প্রস্তুতি, স্পেশাল স্কিল এবং ধর্মীয় শিক্ষাসহ নানাবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।

Leave a Comment

Advertisement Advertisement
error: Content is protected !!